নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার (১০ জুন) প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে তাঁকে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

আদেশে বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিএ -২৪৯৬ লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, ওএসপি, এনডিইউ, পিএসসি, কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল-কে আগামী ২৪ জুন অপরাহ্ন থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে জেনারেল পদে পদোন্নতি প্রদানপূর্বক প্রতিরক্ষা বাহিনী-সমূহের প্রধানদের (নিয়োগ, ভাতা, এবং অন্যান্য সুবিধা) আইন ২০১৮ অনুসারে উক্ত তারিখ অপরাহ্ন থেকে তিন বছরের জন্য সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হলো।

খুলনার মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ১৯৮৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর নবম বিএমএ লং কোর্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পদাতিক কোরে কমিশন পান।

আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের (অ্যার্টডক) জিওসির মেজর জেনারেল থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদোন্নতি দিয়ে শফিউদ্দীন আহমেদকে গতবছর ডিসেম্বরে কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) করে সেনাসদরে নিয়ে আসা হয়েছিল।

তার আগে ২০১৯ সালের আগস্টে মেজর জেনারেল থেকে পদোন্নতি পেয়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হন শফিউদ্দিন আহমেদ। তখনই তাকে অ্যার্টডকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি লজিস্টিকস এরিয়া, পদাতিক ব্যাটালিয়ন, পদাতিক ব্রিগেডসহ বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্বের ভূমিকায় দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) মহাপরিচালক এবং ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের সিনিয়র ডিরেক্টিং স্টাফ হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন।

সেন্ট্রাল অফ্রিকান রিপাবলিকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনের ডেপুটি ফোর্স কমান্ডারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করেছেন শফিউদ্দিন আহমেদ। 

একনজরে শফিউদ্দিন আহমেদ

সেনাবাহিনীর কোয়াটার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লে. জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ১৯৬৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর খুলনা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর ৯ম দীর্ঘ মেয়াদী কোর্সের সাথে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি হতে ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কমিশন লাভ করেন।

তিনি সামরিক কর্মজীবনে স্টাফ, প্রশিক্ষক এবং কমান্ড নিযুক্তিতে কর্মরত ছিলেন। জেনারেল শফিউদ্দিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন, একটি পদাতিক ব্রিগেড এবং একটি পদাতিক ডিভিশনসহ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী অপারেশনে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে মাল্টিন্যাশনাল ফোর্স কমান্ডার হিসেবে প্রথম বাংলাদেশ ব্যাটালিয়ন কমান্ডের অনন্য অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন অফিসার। কমিশন পরবর্তী Counterinsurgency অপারেশন এলাকায় যোগদানপূর্বক তিনি তার সামরিক কর্মজীবন শুরু করেন এবং পরবর্তীতে পদাতিক ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক হিসেবেও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি বিভিন্ন ফরমেশন সদরদফতরে সিনিয়র অপারেশনাল এবং প্রশাসনিক স্টাফ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া প্রশিক্ষক হিসেবে তিনি ক্যাডেট কলেজ ও বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সদরদফতর আর্টডকের চিফ অব ডকট্রিন ডিভিশন এবং সেনাবাহিনী সদরদফতরে সামরিক প্রশিক্ষণ পরিদফতরের পরিচালক হিসেবে অত্যন্ত সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালের ৭ মে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করে ১৯ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি হিসেবে তিনি দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। 

সফলতার সাথে ডিভিশন কমান্ড শেষে তিনি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এ ডিজি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন জাতিসংঘ সদরদফতর কর্তৃক মিনুস্কাতে ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন। তিনি বর্তমান পদবিতে পদোন্নতি লাভের আগে এনডিসির এসডিএস (আর্মি-১) এবং লজিস্টিকস এরিয়ার জিওসি ও এরিয়া কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। জেনারেল শফিউদ্দিন গত ২৫ আগস্ট ২০১৯ তারিখে জিওসি হিসেবে আর্টডক-এর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। 

জেনারেল শফিউদ্দিন দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ অত্যন্ত সুনামের সাথে সম্পন্ন করেছেন। তিনি চীনের ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটিতে (এনডিইউ) আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়াম কোর্সে অংশগ্রহণ করেন। ২০১০ সালে তিনি অত্যন্ত সফলতার সাথে ডিফেন্স অ্যান্ড স্ট্রেটেজিক স্টাডিজ কোর্স, এনডিইউ, চায়না সম্পন্ন করেন। তিনি বাংলাদেশ ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ হতে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন।

এনএম/আরএইচ/এইচকে