শিগগিরই আসছে না ‘বঙ্গভ্যাক্স’
২০২০ সালের ৮ মার্চ ‘বঙ্গভ্যাক্স’ নামক করোনা টিকা তৈরির কাজ শুরু করে বাংলাদেশি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রুপ অব কোম্পানিজ লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড। চার মাস পর ২ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে টিকা উদ্ভাবনের ঘোষণা দেয় তারা। ঘোষণার ১০ মাস পরও আলোর মুখ দেখেনি ‘বঙ্গভ্যাক্স’।
এ অবস্থায় কোম্পানিটি বলছে, চলতি মাসে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করতে পারলে টিকা আসতে আরও ৫/৬ মাস লাগবে। আর এ মাসে ট্রায়াল শুরু করতে না পারলে আরও দেরি হবে।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (৬ জানুয়ারি) গ্লোব বায়োটেকের কোয়ালিটি অ্যান্ড রেগুলেটরি অপারেশনের ব্যবস্থাপক ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, যেকোনো ওষুধ উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশ ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমতি প্রয়োজন হয়। গত মাসের ২৮ তারিখ অধিদপ্তর আমাদেরকে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য প্রয়োজনীয় টিকা উৎপাদন করার অনুমোদন দিয়েছে। সিআরও বাংলাদেশ নামক একটি প্রতিষ্ঠান ট্রায়ালটি পরিচালনা করবে। এজন্য তারা কাজ শুরু করেছে। তাদের ট্রায়াল শেষ হলে প্রটোকল অনুযায়ী আমরা ভ্যাকসিন সরবরাহের কাজ শুরু করবো।
ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ট্রায়ালের জন্য সিআরও বাংলাদেশ এরইমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। আশা করছি এ মাসে অথবা পরের মাসেই ট্রায়াল শুরু করা যাবে।
ট্রায়াল শেষে ভ্যাকসিন আসতে কতদিন সময় লাগবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের সম্পূর্ণ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ করতে পাঁচ মাস সময় লাগবে। যদি আমরা ট্রায়ালটা এ মাসেই শুরু করতে পারি, তাহলে টিকা জুনের মধ্যে পাব। আর যদি এ মাসে শুরু করা না যায়, তাহলে আরও সময় লাগবে। তবে আশা করি টিকা পাবেন।
২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, করোনার টিকার তাদের তালিকায় বাংলাদেশের গ্লোব বায়োটেকের নাম আছে। যে ১৫৬টি টিকা পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পূর্বাবস্থায় আছে, তার মধ্যে গ্লোবের তিনটি টিকা আছে। এগুলো হলো- ডি৬১৪ ভেরিয়েন্ট এমআরএনএ, ডিএনএ প্লাজমিড ও এডিনোভাইরাস টাইপ-৫ ভেক্টর।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অবশ্য এও জানিয়েছে যে, নভেল করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ে তথ্য দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এই ল্যান্ডস্কেপ ডকুমেন্টটি তৈরি করা হয়েছে। এই তালিকাভুক্তির মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট একটি পণ্যের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পাওয়া বোঝায় না।
গত বছরের ১৮ অক্টোবর গ্লোব বায়োটেকের গবেষণা ও উন্নয়ন শাখার প্রধান আসিফ মাহমুদ জানিয়েছিলেন, প্রাণীর ওপর তাদের টিকার সফল পরীক্ষা হয়েছে। তারা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ওই সময় গ্লোব কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, তারা তিনটি টিকা উদ্ভাবন করেছে।
‘বঙ্গভ্যাক্স’র প্রক্রিয়া যেভাবে শুরু
বাংলাদেশে কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়ার পর থেকে মহামারি এই রোগের জন্য ভ্যাকসিন উন্নয়নের কাজ শুরু করে গ্লোব বায়োটেক।
তখন আন্তর্জাতিকভাবে যেসব জেনোম সিকোয়েন্স ছিল, সেগুলো বিশ্লেষণ করে একটি বিশেষ ধরনের মিউটেশনের খোঁজ পান গ্লোব বায়োটেকের বিজ্ঞানীরা। এই মিউটেশনটি হলো ডি৬১৪ ।
তখন এই মিউটেশনের সংখ্যা খুবই কম ছিল বলে জানান গ্লোব বায়োটেকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. কাকন নাগ।
তিনি বলেন, ওই সময়ে তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে, এই জেনোম মিউটেশনটি ভবিষ্যতে মারাত্মক প্রভাব তৈরি করবে। তখন তারা এটি নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন।
‘ওই সময়ে আসলে কেউ ধারণা করতে পারেনি যে এই স্ট্রেইনটি সারা বিশ্বে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করবে,’ বলেন তিনি।
গ্লোব বায়োটেক বলছে, বর্তমানে সারা বিশ্বে যতগুলো স্ট্রেইন আছে তার মধ্যে ‘ডি৬১৪’-টি ১০ গুণ বেশি সংক্রমক এবং এর বিরুদ্ধে এখনও কেউ ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট তৈরি করেনি।
বাংলাদেশে করোনার ৩০৫তম দিন
করোনার ৩০৫তম দিনে দেশে আরও ১৭ জন কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল সাত হাজার ৬৮৭ জনে।
একই সময়ে নতুন করে ৯৭৮ জনের শরীরে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মাধ্যমে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে পাঁচ লাখ ১৮ হাজার ৮৯৮ জনে দাঁড়িয়েছে।
টিআই/জেডএস