করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ খুবই সফলতা দেখিয়েছে দাবি করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, এ কারণে জীবনযাত্রা প্রায় স্বাভাবিক।

সোমবার (৭ জুন) সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের মঞ্জুরি দাবির ওপর আনা ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনার সময় তিনি এ কথা বলেন। এর আগে ছাঁটাই প্রস্তাব আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কঠোর সমালোচনা করে সংস্কার দাবি করেন।

সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, স্বাস্থ্য সেবা একটি ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। দেড় বছর ধরে করোনা চলছে। তারা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

করোনা মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ওষুধের কোনো ঘাটতি হয়নি। অক্সিজেনের অভাব কখনোই হয়নি। আমেরিকায় যে চিকিৎসা এখানেও একই চিকিৎসা হয়েছে। ভ্যাকসিন কার্যক্রম চলমান আছে। এসব কারণে মৃত্যুর হার দেড় শতাংশ। পৃথীবিতে এই হার আড়াই শতাংশ।

তিনি বলেন, ভারতে করোনা বেড়ে যাওয়ায় সেরাম ইনস্টিটিউট টিকা সরবরাহ করতে পারছে না। চীন রাশিয়া আমেরিকা থেকে ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরইমধ্যে চুক্তিও হয়েছে। আরও অনেক ভ্যাকসিন ক্রয় করতে হবে। প্রতিটি ব্যক্তির ক্ষেত্রে টিকার জন্য প্রায় ৩ হাজার টাকা করে লাগবে। 

মন্ত্রী বলেন, করোনার সময়ও প্রতিটি ব্যক্তির জন্য সাধারণ শয্যায় চিকিৎসা নিতে ১৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। এটা সরকার বহন করেছে। যারা আইসিইউতে ছিলেন তাদের জন্য ৫০ হাজার টাকা করে খরচ করেছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, আপনি একজন সজ্জন ব্যক্তি। আপনার বাবা আমার সঙ্গে মন্ত্রী ছিলেন। আপনাকে আমি চিনি। অত্যন্ত ধনাঢ্য পরিবারের ছেলে আপনি। কিন্তু আপনারতো কর্তৃত্ব নেই, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যা হচ্ছে।

তিনি বলেন, হাসপাতালে অক্সিজেন নেই। এখন দরকার অক্সিজেন। সেটা না এনে আনা হচ্ছে এমআরআই, সিটিস্ক্যান মেশিন। পাঠানো হচ্ছে উপজেলায়। তারা সব সাজিয়ে রেখে দিয়েছে। চালাতে পারে না। লক্ষ কোটি টাকা যাচ্ছে। কিন্তু জনগণ সেবা পাচ্ছে না।

জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য বলেন, চুরি ডাকাতি করলে একজন সাংবাদিককে গ্রেফতার করা যায়। কিন্তু আইন কেন নিজের হাতে তুলে নেওয়া হলো এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, তাকে ছয় ঘণ্টা আটকে রাখা হলো। তাকে টয়লেটে যেতে দেননি। অসুস্থ মানুষ, তাও মহিলা, তাকে এভাবে হেনস্তা করা যায়? এটা নিয়ে জাতিসংঘ, সারা পৃথিবী কথা বলল। আমাদের মুখটা কোথায় গেল? নিজেদের দুর্বলতা নিজেদের ঢাকতে হয়।

তিনি বলেন, আসলে কথা বলে লাভ কী। কার কথা কে শুনে। আর আমাদের কথা কেউ বিশ্বাসও করে না। এজন্য কথা বলতেও চাই না।

বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আবজাল-মালেকরা অনিয়ম করছে রূপকথার গল্পের মতো। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে এখন কিছুটা কমে এসেছে। কিন্তু তাদের থামানো যাচ্ছে না। এখানে অনেক মালেক, আবজালের ছড়াছড়ি। একজন মহিলা উপসচিবের কানাডাসহ তিনটা দেশে বাড়ি আছে।

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তার সমালোচনা করে রওশন আরা মান্নান প্রশ্ন রাখেন, একজন নারী সাংবাদিককে অন্যায় করলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে দেওয়া হলো না কেন? কেন তাকে ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করা হলো? আইন কেন নিজের হাতে তুলে নেওয়া হলো, নিজেরা কেন অত্যাচার করল, এটা নিয়ে দেশবাসী এটা নিয়ে অনেক সমালোচনা করছে।

বিএনপির মোশাররফ হোসেন বলেন, সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের গলাচেপে ধরে হেনস্তা করেছেন, এটা হতে পারে না।

এইউএ/জেডএস