বৈশ্বিক জিডিপির অর্ধেকই প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল
বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে ব্র্যাক জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচি আয়োজিত ‘বাস্তুসংস্থান পুনরুদ্ধারে তরুণদের ভূমিকা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা বলেন, কারো অপেক্ষায় বসে না থেকে যার যার অবস্থান থেকে পরিবেশ রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।
প্রতিবারের মতো এবারও ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘বাস্তুসংস্থান পুনরুদ্ধার’।
বিজ্ঞাপন
বাস্তুসংস্থান হচ্ছে উদ্ভিদ, প্রাণী এবং অন্যান্য জৈব-অজৈব পদার্থ সমন্বিত প্রাকৃতিক একক, যেখানে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ায় একটি জীবনধারা গড়ে ওঠে। যেমন- সুন্দরবন একটি সমৃদ্ধ বাস্তুসংস্থান। বৈশ্বিক জিডিপির অর্ধেক প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল এবং বাস্তুসংস্থান ধ্বংসের কারণে এরই মধ্যে বিশ্বের ৩২০ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত।
ওয়েবিনারের প্রধান অতিথি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক ড. সালীমুল হক বলেন, পরিবেশ বা বাস্তুসংস্থান রক্ষায় দেশে আইন থাকলেও মানা হয় না। কয়েকজন মানুষের সুবিধার জন্য দেশের ক্ষতি হচ্ছে। তরুণদের উচিত তাদের আশপাশের পরিবেশ ধ্বংসের প্রতিটি বিষয় নজরে আনা এবং সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানকে জানানো।
পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক মির্জা শওকত আলী জানান, জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠা সুইডিশ তরুণী গ্রেটা থুনবার্গ দেখিয়ে দিয়েছে যে তরুণরা চাইলে অনেক পরিবর্তন ঘটাতে পারে। আমরা যদি বাংলাদেশের তরুণদের প্রতি সমর্থন দেই তাহলে এখানেও অনেক গ্রেটা থুনবার্গের আবির্ভাব হবে।
আরণ্যক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রাকিবুল হাসান মুকুল মনে করেন, অর্থনৈতিক উন্নতির অজুহাতে বাস্তুসংস্থান ধ্বংস করা হলে তা লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করবে। আবার, শুধু বাস্তুসংস্থান রক্ষার কথা বললেও তা যুক্তিসঙ্গত হবে না। কারণ এর ওপর নির্ভরশীল মানুষের চাহিদার কথাও ভাবতে হবে। তাই সংশ্লিষ্ট সবাইকে যদি ঐকমত্যে আনা যায়, তবেই এ ক্ষেত্রে সফল হওয়া যাবে।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, উন্নয়ন ও গবেষণা সংস্থার তরুণ কর্মীরা মতবিনিময় করেন এ ওয়েবিনারে। তরুণ গবেষক অনুশ্রী ঘোষ বলেন, চলনবিলের মধ্যদিয়ে সড়ক নির্মাণ করে সমৃদ্ধ এই বাস্তুসংস্থানের ক্ষতি করা হয়েছে। ভবিষ্যতে যেকোন উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়ার আগে পরিবেশগত ক্ষতির বিষয়টি সমীক্ষা করার দাবি জানান তিনি।
ওয়েবিনারের সভাপতি জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচি, ব্র্যাক ও ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনাল এবং আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম, ব্র্যাকের পরিচালক ড. লিয়াকত আলী বলেন, প্রকৃতি রক্ষায় লাভ ধারাণার চেয়েও বেশি। তিনি জানান, বৈশ্বিক জিডিপির অর্ধেকই প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। বাস্তুসংস্থান পুনরুদ্ধারে প্রতি ১ ডলার বিনিয়োগ করলে ৩০ ডলার সমান সুবিধা পাওয়া যায়। দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূরীকরণসহ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ১৭টি লক্ষ্য অর্জনেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে বাস্তুসংস্থান পুনরুদ্ধার।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, বাস্তুসংস্থান ধ্বংসের কারণে এরই মধ্যে বিশ্বের ৩২০ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। বাস্তুসংস্থান হ্রাসের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ ১০ লাখ কোটি ডলার ক্ষতির মুখে পড়বে বৈশ্বিক জিডিপি। ২০৪০ সাল নাগাদ বিশ্বে কৃষি উৎপাদন ১২ শতাংশ হ্রাস পাবে এবং খ্যাদ্যের দাম বেড়ে যাবে ৩০ শতাংশ।
এসএম