চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা : খালের বাঁধ অপসারণ ৭ দিনের মধ্যে
জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে চট্টগ্রামবাসীর এ বছরও মুক্তি মেলেনি। খালের বাঁধ অপসারণ ও স্লুইস গেট নির্মাণসহ মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় নগরীতে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে বলে অভিমত নগর পরিকল্পনাবিদদের। আর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বলছে, এ বছরও নগরবাসীকে জলাবদ্ধতায় কষ্ট ভোগ করতে হবে। কারণ, মেয়াদ শেষ হলেও জলাবদ্ধতা নিরসনে নেওয়া মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ। এছাড়া স্লুইস গেট নির্মাণকাজও শেষ হয়নি। তবে এক সপ্তাহের মধ্যেই খালে দেওয়া বাঁধগুলো অপসারণ করা হবে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
রোববার (৬ জুন) দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৭৯ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে হয়েছে। এতে নগরীর বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পানি ওঠে নিচু এলাকার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ির নিচ তলায়। মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট, রাহাত্তারপুল, চাক্তাই, হালিশহর, বাকলিয়াসহ নগরীর নিম্নাঞ্চলে হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানি উঠেছিল।
বিজ্ঞাপন
মেগা প্রকল্পের কাজের জন্য খালের মুখে যে বাঁধ দেওয়া হয়েছে সেগুলো অপসারণ না করলে চট্টগ্রাম নগরীতে বুক সমান পানি হবে বলে ৩ জুন আশঙ্কা প্রকাশ করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। রবিবারের জলাবদ্ধতায় তার কথাই প্রমাণিত হলো।
নগর পরিকল্পনাবিদ দেলোয়ার মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, খালে বাঁধ ও স্লুইস গেটের (রেগুলেটর) কাজ শেষ না হওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বাঁধের কারণে বৃষ্টি হলে খালে পানি নামতে পারে না। আর জোয়ারের কারণে সাগরের পানি যা প্রবেশ করে তাও বন্ধ করতে পারে না। মেগা প্রকল্পের যে কাজগুলো শেষ হওয়ার কথা তা এখনও শেষ করতে পারেনি। এই কারণে নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, জোয়ার আর বৃষ্টি একসাথে এলে ঠেকানোর ব্যবস্থা নেই। এবার জোয়ার ও বৃষ্টি একসাথে হওয়ায় জলাবদ্ধতা হয়েছে। আমরা বলেছিলাম খালে থাকা প্রতিবন্ধকতাগুলো এপ্রিলের মধ্যে সরিয়ে নিয়ে যান। মে, জুন ও জুলাই এই তিন মাস খালে কাজ না করে অন্যত্র কাজ করার কথা বলা হয়েছিল। যাতে খালের প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করে দেওয়া যায়। এখন পর্যন্ত খালের প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে নেয়নি সিডিএ। এখন বৃষ্টির ভরা মৌসুম। রেগুলেটর অনেকগুলো তৈরির কাজ চললেও এখনও কাজ শেষ হয়নি। ফলে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে।
এই বিষয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, মেগা প্রকল্পের মাত্র ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। যতদিন পর্যন্ত স্লুইস গেট নির্মাণ ও মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হবে না ততদিন জলাবদ্ধতা থাকবেই।
তিনি আরও বলেন, মেগা প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে খালের মধ্যে যে বাঁধ দেওয়া হয়েছে সেগুলো খুলে দেওয়ার জন্য। এছাড়া পানি দ্রুত নামার জন্য ড্রেন ও নালাকে দ্রুত পরিষ্কার করতে বলা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সবগুলো বাঁধ খুলে দেওয়ার জন্য ক্র্যাশ পোগ্রাম হাতে নিয়েছে সেনাবাহিনী। এছাড়া পানি নামার জন্য আজই অনেক বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, চাক্তাই খালের বাঁধের কারণে আজও চাক্তাই এলাকায় বিভিন্ন গোডাউনে পানি প্রবেশ করেছে। বাঁধগুলো অপসারণ করা দরকার।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বাস্তবায়নাধীন মেগা প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা। প্রকল্পটির কাজ চলছে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে।
২০১৭ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়ে ২০২০ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল প্রকল্পটির কাজ। এরপরও কাজ শেষ না হওয়ায় এক বছর সময় বাড়িয়ে ২০২১ সাল পর্যন্ত করা হয় প্রকল্পের মেয়াদ। বর্ধিত সময়েও কাজ শেষ না হওয়ায় আরও দুই বছর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে বলে সিডিএ সূত্রে জানা গেছে।
কাজী মনজুরুল ইসলাম/এইচকে/জেএস