করোনার নির্জনতায় অতিথি বেড়েছে চিড়িয়াখানায়
প্রায় ৭৫ হেক্টর জায়গা জুড়ে জাতীয় চিড়িয়াখানার অবস্থান। এর মধ্যে দৃষ্টিনন্দন ১৩ হেক্টরের দুটি প্রশস্ত লেকে বর্তমানে বসবাস করছে তিন হাজার প্রাণী। করোনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার দীর্ঘ সময় ‘লকডাউন’ ও ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ জারি করায় দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ ছিল জাতীয় চিড়িয়াখানা। সেই সুবাদে বন্য পরিবেশের আবহ পেয়েছে এখানকার প্রাণীরা। যার ফলে প্রাণীদের প্রজনন ক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি চিড়িয়াখানায় নতুন নতুন অতিথিদের আগমন বেড়েছে। বেড়েছে চিত্রা হরিণ ও ময়ূরের সংখ্যাও।
সরকারের পক্ষ থেকে অনুমোদন থাকায় এই প্রাণী দুটি বিক্রি করছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। তবে চিড়িয়াখানা থেকে প্রাণী কিনতে হলে অবশ্যই বন বিভাগের অনুমতি থাকতে হবে- ঢাকা পোস্টকে এমনটাই জানিয়েছেন জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. মো. আবদুল লতিফ।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে চিড়িয়াখানায় প্রায় তিন হাজার প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ময়ূর ও ইমু পাখি সবার দৃষ্টি কাড়ে। ময়ূর ও ইমু পাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য আমরা দুটি নতুন মেশিন সংযোজন করেছি। ইমু পাখি এবং ময়ূর পাখি ডিম দেয়, এগুলো সিজনাল ব্রিডার। এগুলো নির্দিষ্ট সিজনে ডিম দেয়। আমি ইতোমধ্যেই পাখি শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে দুটি ইনকিউবিটর ক্রয় করেছি একটা ইমু পাখি ও আরেকটা ময়ূর পাখির ডিম ফোটানোর জন্য। এই ইনকিউবিটর থেকে ফোটানো ইমু পাখির ১৪টি বাচ্চার বয়স এক মাস হয়ে গেছে, যেগুলো শেডে ডিসপ্লে করেছি। আর ইনকিউবিটর থেকে ১৬টি ময়ূর পাখির বাচ্চা ফোটানো হয়েছে। ময়ূর পাখির বাচ্চাগুলো এখনও হাসপাতালে রয়েছে। হাসপাতালে আরও ১৫ দিন রাখার পরে এগুলো শেডে দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে হ্যাচারিতে ইনকিউবিটরে আরও ১০০টি ময়ূর পাখির ডিম সেট করা হয়েছে। এখান থেকে আরও কিছু বাচ্চা পাওয়া যাবে। এর পাশাপাশি চিড়িয়াখানায় অন্য পাখিগুলোর ডিম থেকেও বাচ্চার প্রজনন বাড়াতে কাজ করা হবে। যেমন- ম্যাকাও পাখির বাচ্চা ফোটাতে কাজ করা হবে। কারণ ম্যাকাও পাখি অত্যন্ত মূল্যবান। ম্যাকাওকে প্রজননের আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে আবদুল লতিফ বলেন, ‘বাঘ-সিংহের প্রজনন নিয়েও কাজ করা হচ্ছে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে বাঘ-সিংহ থেকে ভালো কিছু আশা করা হচ্ছে। যদিও এই প্রাণীগুলো নিয়ে শিওর করে কিছু বলা যায় না। তবে আমরা আশা করছি, নতুন কয়েকটি প্রাণী, বিশেষ করে বাঘ-সিংহ চিড়িয়াখানায় যুক্ত হবে। আমাদের ধারণা চিড়িয়াখানায় বাঘ-সিংহ প্রেগন্যান্ট হয়েছে। যে কারণে আমরা এই দুটি প্রাণীর আলাদা যত্ন নিচ্ছি। তারপরও যতক্ষণ না হয়, ততক্ষণ কিছু নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।’
আবদ্ধ অবস্থায় চিড়িয়াখানার পশু-পাখির প্রজনন একটা বড় অর্জন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জাতীয় চিড়িয়াখানার মধ্যে এ পর্যন্ত কয়েকটি পশু-পাখির প্রজননের অর্জন রয়েছে। প্রজননের দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে চিত্রা হরিণ। বর্তমানে চিড়িয়াখানায় চিত্রা হরিণের তিনটি শেড আছে। প্রতিটি শেডে ৫০টি করে হরিণ রাখার ক্ষমতা আছে। প্রতিটি শেডের নির্দিষ্ট ধারণ ক্ষমতার পাশাপাশি নির্দিষ্ট বাজেট আছে। সেই অনুপাতে কেয়ারটেকার আছে। এই তিন শেডে ১৫০টি হরিণ থাকলে আমার জন্য ডিসপ্লে করতে সুবিধা হয়। বর্তমানে এই তিনটি শেডে প্রায় ৪০০টি হরিণ রয়েছে। এজন্য সরকারের অনুমোদন থাকায় চিত্র হরিণ এবং ময়ূর বিক্রি করা হচ্ছে।’
চিড়িয়াখানার পরিচালক বলেন, ‘একটা পুরুষ ও একটা স্ত্রী মিলিয়ে একজোড়া ময়ূর আমরা ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারি। আর একটা পুরুষ ও একটা স্ত্রী মিলিয়ে একজোড়া চিত্রা হরিণ এক লাখ ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারি। বর্তমানে ২০০টির বেশি হরিণ বিক্রি করার জন্য স্টকে রয়েছে এবং ২০টির মতো ময়ূর বিক্রি করতে পারব। এর বাইরে অন্য কোনো প্রাণী আমরা চাইলেও বিক্রি করতে পারব না।’
যারা কিনতে পারবেন জাতীয় চিড়িয়াখানার হরিণ-ময়ূর
চিড়িয়াখানার পরিচালক আবদুল লতিফ বলেন, ‘এই দুটি প্রাণী যেকোনো লোক কিনতে পারবে। তবে ক্রেতাদের জন্য শর্ত রয়েছে। অবশ্যই বন বিভাগের অনুমতি থাকতে হবে। অনুমতি না থাকলে তার কাছে আমরা প্রাণীগুলো বিক্রি করতে পারব না। কারণ এসব প্রাণী পালনের সক্ষমতা আছে কি না, সেটার সার্টিফিকেট বন বিভাগ দেবে। এছাড়া আমি যে এটা বিক্রি করতে পারব বা আমার পর্যাপ্ত স্টক আছে, সেটারও একটা অনুমতিপত্র লাগবে। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে যে কেউ এখান থেকে প্রাণী দুটি সংগ্রহ করতে পারবে।’
তিনি বলেন, ‘এর মধ্যেই আমরা এই দুটি প্রাণীর বেশ কয়েকটি বিক্রি করেছি। এগুলো বিক্রির সময় বেশিরভাগ ক্রেতাই প্রাণী দুটির দাম নিয়ে আমার কাছে অভিযোগ করেছে। বেশিরভাগ ক্রেতাই বলেছে, দামটা রিজনেবল হয়নি, অতিরিক্ত মনে হয়েছে। ক্রেতাদের এই অভিযোগটি আমরাও ফিল করি।’ চিড়িয়াখানার বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে আলোচনা করে হরিণ এবং ময়ূরের দাম কমানোর বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানান চিড়িয়াখানা পরিচালক।
আবদুল লতিফ বলেন, প্রতিটি হরিণের যদি ৫০ হাজার বা তার কম বিক্রয় মূল্য হয়, তাহলে উৎসাহী খামারিদের এগুলো ক্রয় করতে সুবিধা হবে। দাম বেশি হওয়ায় যদি না বিক্রি করা যায়, সেক্ষেত্রে এগুলো বনে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান এই পরিচালক।
এসআর/এসএসএইচ/এমএইচএস