দেশে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সামাজিক সংক্রমণ (কমিউনিটি ট্রান্সমিশন) হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। সংস্থাটি সম্প্রতি ৫০টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং সম্পন্ন করেছে। এর মধ্যে ৪০টিতেই ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে।

শুক্রবার (৪ জুন) আইইডিসিআরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক গবেষণায় এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে- রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট নিয়মিত ভিত্তিতে কোভিড-১৯ এর উচ্চ সংক্রমিত এলাকাগুলোতে আক্রান্ত রোগীদের কেস ইনভেস্টিগেশন, কন্টাক্ট ট্রেসিং এবং সন্দেহজনক রোগীদের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করছে। গত ১৬ মে আইইডিসিআর কোভিড-১৯ এর ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট (বি.১.৬১৭.২) শনাক্ত সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করে। এরপর থেকে আইইডিসিআর ও অন্য একটি সংস্থা এ পর্যন্ত ৫০টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং সম্পন্ন করেছে। এরমধ্যে ৪০টিতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, ৫০টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের মধ্যে ৪০টি নমুনায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছাড়াও ৮টি নমুনায় সাউথ আফ্রিকান বেটা ভ্যারিয়েন্ট (বি.১.৩৫১), ১টি সাকুর্লেটিং স্ট্রেইন এবং একটি আন-আইডিন্টিফাইড (শনাক্তকরণ হয়নি) রয়েছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সংগৃহীত ১৬টি নমুনার ১৫টিতে এবং গোপালগঞ্জ থেকে সংগৃহীত ৭টি নমুনার সবগুলোতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। খুলনা শহর থেকে সংগৃহীত ৩টি নমুনার সবগুলোতে, রাজধানী ঢাকার ৪টি নমুনার ২টিতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায় আসা ৭ জনের নমুনায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। ভারত থেকে আসা ডেল্টা ভ্যরিয়েন্টে আক্রান্ত বিভিন্ন জেলার অপর তিনজন চুয়াডাঙ্গা ও খুলনায় চিকিৎসাধীন আছেন।

কোভিড-১৯ জিনোম সিকোয়েন্সিং এর ফলাফল

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট (বি.১.৬১৭.২) >> ৪০ (৮০%)
বেটা ভ্যারিয়েন্ট (বি.১.৩৫১) >>> ৮ (১৬%)
সাকুর্লেটিং স্ট্রেইন >>> ১ (০২%)
আন-আইডিন্টিফাইড (বি.১.১.৩১৮)>> ১ (২%)

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৩ জনের বয়স অনূর্ধ্ব ১০ বছর, ৭ জনের ১০-২০ বছর, ১০ জনের ২১-৩০ বছর, ৮ জনের ৩১-৪০ বছর, ৮ জনের ৪১-৫০ বছর এবং ৪ জনের বয়স ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে। এদের মধ্যে ২৪ জন রোগীই পুরুষ।

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের মধ্যে ৮ জনের ভারত ভ্রমণের ইতিহাস আছে। ১৮ জনের বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার ইতিহাস আছে। অপর ১৪ জন রোগীর বাংলাদেশের বাইরে ভ্রমণের অথবা বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার কোনো ইতিহাস পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সামাজিক সংক্রমণ (কমিউনিটি ট্রান্সমিশন) হয়েছে।

বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার দেশের সীমান্তবর্তী এলাকাসহ অন্যান্য জেলায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টসহ কোভিড-১৯ এর অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার ঠেকাতে আইইডিসিআর জনসাধারণকে সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহারের পাশাপাশি অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি (যেমন বিনা প্রয়োজনে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা ও নিয়মিত সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া ইত্যাদি) মেনে চলার জন্য অনুরোধ করছে।

টিআই/এমএইচএস/জেএস