সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে। কিশোরী বয়সেই প্রেমে পড়েন এক কৃষকের। পরিবার মানবে না, তাই ঘর থেকেই পালিয়ে যান সিরাজ খাতুন। বিয়ে করেন মনের মানুষ সিদ্দিককে। কিন্তু বিয়ের পরই জানতে পারেন তার প্রেমিক রোহিঙ্গা! বাঙালি হয়েও পালিয়ে পালিয়ে থাকতে শুরু করেন রোহিঙ্গা স্বামীর সঙ্গে। এক সময় আটক হলে বাঙালি পরিচয় না দিয়ে স্বামীর সঙ্গে চলে যান রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। নিবন্ধনও করেন রোহিঙ্গা হিসেবে।

কিন্তু যে রোহিঙ্গা স্বামীর জন্য তার এত ত্যাগ, সেই স্বামীই তাকে ত্যাগ করে চলে যায়। ১২ বছরের প্রেমের সংসার ভেঙে আবারও ঘরে ফেরেন সিরাজ খাতুন। ‘স্বামী পরিত্যক্তা’ অপবাদ শোনা থেকে মেয়েকে রক্ষায় বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা করে পরিবার। সেজন্য পাসপোর্ট করতে যান। বিপত্তি ঘটে সেখানেই, সিরাজ খাতুন যে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা। পরিচয় গোপন করে পাসপোর্ট করতে গিয়ে তিনি আটক হয়েছেন চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানায়। এক রোহিঙ্গার প্রেমে পরিবার, সন্তান, স্বামী হারিয়ে নাগরিকত্বকে প্রশ্নের মুখে ফেলে সিরাজ এখন জেলহাজতে।

এ বিষয়ে ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সিরাজ খাতুনের কাছে থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সে বাঙালি। তার বাড়ি রাঙ্গুনিয়ায়। রোহিঙ্গার সঙ্গে প্রেম করে পালিয়ে যায়, বিয়ে করে। পরে আটক করে তাকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ত্রাণ পাওয়ার লোভে সেখানে নিবন্ধিতও হয় রোহিঙ্গা হিসেবে। পরে স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়। বৃহস্পতিবার (৩ জুন) পাসপোর্ট করতে গেলেই তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট রোহিঙ্গা সার্ভারের সঙ্গে মিলে যায়। সেখানে অন্য নামে নিবন্ধিত হয় সে।’

সিরাজ খাতুন জানান, তার বাড়ি রাঙ্গুনিয়ায়। সাত ভাই-বোনের মধ্যে চতুর্থ সিরাজ। তাদের খেতেই কাজ করতেন সিদ্দিক। সেখানে থেকেই প্রেম। কিন্তু পরিবার এই প্রেম মেনে নেয় না। তাই পালিয়ে যায় সিরাজ-সিদ্দিক। কিন্তু বিয়ের পরই জানতে পারেন, সিদ্দিক রোহিঙ্গা। এরপরই শুরু হয় সিরাজের পালিয়ে বেড়ানো। বাঙালি হলেও স্বামী রোহিঙ্গা হওয়ায় পলিয়ে বেড়াতে থাকে সেও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে পুলিশের হাতে। ২০১৮ সালে ধরা পড়লে তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। বাঙ্গালি হওয়া সত্ত্বেও স্বামীর টানে নিবন্ধিত হয় রোহিঙ্গা হিসেবে। সেই ক্যাম্পেই জন্ম নেয় তার তিন সন্তান। স্বামীর টানে ক্যাম্পে থাকলেও কিছুদিন পরই স্বামী তার ওপর নির্যাতন শুরু করে। একপর্যায়ে মারা যায় তাদের মেঝো সন্তান। তার কিছু দিন পরই সিরাজকে ছেড়ে চলে যায় সিদ্দিক।

স্বামী পরিত্যক্তা হয়ে আবারও রাঙ্গুনিয়ায় ফিরে সিরাজ। পরিবারের সদস্যরা তাকে দেশের বাইরে পাঠানোর পরিকল্পনা করে। কারণ এখানে থাকলে সামাজিকভাবে হেয় হতে হবে। তাই বৃহস্পতিবার সকালে মুনসরাবাদ অফিসে পাসপোর্ট করতে আসে সিরাজ।

সেখানে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে গেলেই বাঁধে বিপত্তি। তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিলে যায় রোহিঙ্গা সার্ভারের সালমা খাতুনের সঙ্গে। অর্থাৎ রোহিঙ্গা সার্ভারের সালমা খাতুন পাসপোর্ট করতে এসেছেন সিরাজ খাতুন নামে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে আটক করে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা। এরপর সোপর্দ করে ডবলমুরিং থানায়। ডবলমুরিং থানায় ৪১৯ ও ১৯৩ ধারায় সিরাজের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

জানা গেছে, পাসপোর্ট করতে গিয়ে সিরাজ খাতুন (৩৩) রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পূর্ব খুরুশিয়া গ্রামের মৃত নুর ইসলামের মেয়ে বলে উল্লেখ করেছেন। পাসপোর্টের আবেদনের সঙ্গে দেওয়া জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর হচ্ছে ১৫১৭০৪৩০৬৫২৩০। আর পাসপোর্ট করতে গিয়ে আঙ্গুলের ছাপ যাচাই করতে গিয়ে দেখা যায়, ২০১৮ সালে সে নিবন্ধিত হয়েছে। যার রেফারেন্স নং ১৮২২০১৯১০১৬১৫৪৭১১। তার নাম দেখায় সালমা খাতুন। পিতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে- মো. ইসহাক।

কেএম/এসএসএইচ