২০২১-২২ অর্থবছরে নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম অপরিবর্তিত রাখায় এ বাজেটকে হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেছে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স- আত্মা।

বৃহস্পতিবার (৩ জুন) বিকেলে প্রজ্ঞার প্রকল্প প্রধান মো. হাসান শাহরিয়ার স্বাক্ষরিত তাৎক্ষণিক বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এ মন্তব্য করা হয়। 

প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, প্রস্তাবিত বাজেটে সিগারেট বাজারের প্রায় ৭২ শতাংশ দখলে থাকা নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। অথচ বিগত বছরের তুলনায় জনগণের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৯ শতাংশ। 

প্রস্তাবিত বাজেট কার্যকর হলে সিগারেটের প্রকৃত মূল্য হ্রাস পাবে এবং তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী ধূমপানে উৎসাহিত হবে। একইসাথে বিড়ি এবং বহুল ব্যবহৃত জর্দা-গুলের দাম ও শুল্ক অপরিবর্তিত রাখায় নিম্ন আয়ের মানুষ বিশেষত নারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে। প্রস্তাবিত বাজেট পাস হলে লাভবান হবে তামাক কোম্পানি, সরকার হারাবে বাড়তি রাজস্ব আয়ের সুযোগ। লাখ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু, পঙ্গুত্ব এবং তামাকের নানাবিধ আর্থ-সামাজিক ও পরিবেশগত ক্ষতি অগ্রাহ্য করে তামাক ব্যবসা উৎসাহিত করার এই বাজেট প্রস্তাব সার্বিকভাবে চরম হতাশাজনক এবং একইসাথে প্রধানমন্ত্রীর ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ ঘোষণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

এতে বলা হয়, প্রস্তাবিত বাজেটে নিম্ন ও মধ্যম স্তরের সিগারেটের দাম ও শুল্ক অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। উচ্চ এবং প্রিমিয়াম স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের দাম যথাক্রমে ৫ টাকা (৫ দশমিক ২ শতাংশ) এবং ৭ টাকা (৫ দশমিক ৫ শতাংশ) বৃদ্ধি করে ১০২ টাকা এবং ১৩৫ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে এবং উভয় স্তরেই ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বহাল রাখা হয়েছে। 

এর ফলে উচ্চ এবং প্রিমিয়াম স্তরে শলাকাপ্রতি সিগারেটের দাম বাড়বে যথাক্রমে ৫০ পয়সা ও ৭০ পয়সা, যা মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির তুলনায় অতি নগণ্য। অন্যদিকে, ক্রটিপূর্ণ করকাঠামোর কারণে এই দামবৃদ্ধির একটা অংশ তামাক কোম্পানির পকেটে চলে যাবে। তামাক কোম্পানিগুলোর আয় বাড়বে এবং তারা মৃত্যুবিপণনে আরও উৎসাহিত হবে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। 

তামাকবিরোধীদের দাবি অনুযায়ী মূল্য স্তরভিত্তিক সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করলে সরকার অতিরিক্ত ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় অর্জন করতো যা করোনা মহামারি সংক্রান্ত ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় ব্যবহার করা সম্ভব হতো। 

এতে আরও বলা হয়, জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বিড়ি এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য জর্দা, গুলের কর ও মূল্য প্রস্তাবিত বাজেটে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি বিবেচনায় নিলে এসব তামাকপণ্য আরও সস্তা হয়ে পড়বে। ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষত নারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বেড়ে যাবে।

বাংলাদেশে বর্তমানে তামাক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৫০ শতাংশেরও বেশি মানুষ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করেন। বাস্তবতা হলো মোট তামাক রাজস্বের ১ শতাংশেরও কম আসে ধোঁয়াবিহীন তামাক থেকে। সরকার ধারাবাহিকভাবে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য থেকে বাড়তি রাজস্ব আয়ের ব্যাপক সুযোগ হারাচ্ছে। এভাবে তামাক কোম্পানিকে সুবিধা প্রদান করে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন সম্ভব নয়।
 
প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, তামাকবিরোধী সংগঠনগুলোর কর ও দাম প্রস্তাবের কোনো প্রতিফলন নেই প্রস্তাবিত বাজেটে। তামাক কোম্পানিকে সুবিধা দিয়ে এই বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বাজেট পাস হলে আরেক দফা সস্তা হবে তামাকপণ্য, বাড়বে তামাকজনিত মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি। তাই চূড়ান্ত বাজেটে আমাদের কর ও মূল্য প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি।
 
এসএইচএস/আরএইচ