যেসব অনলাইন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান (ই-কমার্স কোম্পানি) দেড় লাখ টাকার পণ্য ৮০ বা ৭৫ হাজারে দেয়, তারা হয়তো এক সময় গা ঢাকা দেবে— এমন মন্তব্য করেছেন আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আহ্বায়ক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। 

বুধবার (২ জুন) সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ষষ্ঠ সভা শেষে তিনি এমন মন্তব্য করেন। মন্ত্রী বলেন, ‘অনলাইন ব্যবসা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। এটা নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। আমরা লক্ষ্য করেছি, একটা ফ্রিজের দাম দেড় লাখ টাকা কিন্তু অফার দেওয়া হচ্ছে ৮০ হাজার কিংবা ৭৫ হাজারে। হয়তো ১০ বা ২০ জনকে দেয়া হয়। ৫০০ মানুষ আবেদন করবে, তাদের বলবে অমুক দিন দেবো। আমরা আশঙ্কা করছি হয়তো সে (ই-কমার্স কোম্পানি) গা ঢাকা দেবে। যেটা যুবক করেছে।’

‘বিষয়টি আইন দিয়ে নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা আইন মন্ত্রণালয়কে বলেছি, একই সঙ্গে পুলিশ বাহিনীকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এমন অস্বাভাবিক কথা যারা বলে তারা কারা, তাদের সুনির্দিষ্ট ডাটা রাখা, তারা যাতে টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যেতে না পারে। অগ্রিম সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে। তারা যাতে দেশ ছেড়ে যেতে না পারে।’

তিনি আরও বলেন, অনেকে ২০ শতাংশ হারে সুদ দেওয়ার কথা বলে। এরাও হয়তো ২০০ বা ৩০০ মানুষকে দেবে। বাকিটা নিয়ে গা ঢাকা দেবে— আমরা এটা আশঙ্কা করছি। এ ধরনের অস্বাভাবিক কথা যারা বলে, যারা বিজ্ঞাপন দেয়, পুলিশ যেন তাদের নজরদারিতে আনে। আমরা সরকারি রেডিও-টেলিভিশনের মাধ্যমে এ বিষয়ে জনগণকেও সতর্ক করতে চাচ্ছি, এসব ফাঁদে পা দেবেন না।’

সভায় কোরবানির পশুর চামড়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলেও জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী। তিনি বলেন, সামনে ঈদ। আমাদের ট্যানারিগুলো এখনো শিফট হয়নি। যতটুকু সম্ভব এখন থেকে সাভারে শিফট করার জন্য বলা হয়েছে। আমরা শিল্পমন্ত্রীকে বলেছি, চামড়ার দাম নির্ধারণ করে তিনদিন আগে নয়, অনেক আগে থেকেই এটা প্রচারের জন্য। চামড়া যাতে পাচার না হতে পারে সেজন্য বর্ডার (সীমান্ত) আরও সক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য বলা হয়েছে।’ 

এসময় মন্ত্রী দাবি করেন, দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।’ 

সভায় হেফাজতে ইসলাম নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘খুবই নগণ্য সংখ্যক, হাতেগোনা কয়েকজনকে চিহ্নিত করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। ভবিষ্যতেও কাউকে গ্রেফতার করা হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত, প্রমাণ হলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।’ 

‘আলেম-ওলামাদের গ্রেফতার, হয়রানি করা হচ্ছে— এমন অভিযোগ সঠিক নয়। অপরাধের বিচার হবে অপরাধী হিসেবে। কোনো দলীয় বা সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে আইনের অপব্যবহার না হয় সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সচেতন থাকতে বলা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, কিছু বিদেশি নাগরিকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তারা দেশে যেতে পারছেন না, নানা অজুহাত দেখাচ্ছেন। প্লেন বন্ধ, কেউ বলছেন টাকা নেই। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট, তাদের অধিকাংশই ক্রাইমের সঙ্গে জড়িত। তাদের আইনের আওতায় এনে সেইফ জোনে রাখা বা যদি টাকা না থাকে সরকারিভাবে টিকিট কেটে তাদের দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।’

সর্বোচ্চ এক মাসের মধ্যে হবে এনআইডি

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জনবলসহ এনআইডি অনুবিভাগ স্থানান্তরের জন্য যে নির্দেশ, সে প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছে এটা স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করবে। আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছি, দিনে ৫০০ এনআইডি করার সীমা তুলে দিয়ে ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে। কারণ অনেক মানুষের আবেদন পেন্ডিং রয়েছে। সর্বোচ্চ এক মাসের মধ্যে এনআইডি করে দিতে হবে।' 

'কোনো কারণে এনআইডি দেওয়া সম্ভব না হলে কী কারণে দেওয়া যাচ্ছে না তা এক মাসের মধ্যে লিখিতভাবে জানিয়ে দিতে হবে। নাগরিকরা ভোগান্তিতে পড়েছে। করোনার অজুহাত দেওয়া যাবে না। অফিস বন্ধের কথা বলা যাবে না। বাড়ি বসে কাজ করা যায়। খুব দ্রুত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যাতে কাজ করতে পারে সেই কাজ চলছে।'

তিনি বলেন, 'নির্বাচন কমিশনের কাজ ভোটার তালিকা তৈরি এবং ভোটকাজ পরিচালনা করা। কোনো দেশে এনআইডির কাজ নির্বাচন কমিশন করে না।' 

মন্ত্রী বলেন, 'স্থানান্তর করার পর পেন্ডিং কাজগুলো দুই মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। আবেদন ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে শেষ করতে হবে। আমরা জবাবদিহিতামূলক কার্যক্রম চালু করতে চাই।'

মন্ত্রীর ফোন ছিনতাই হলে সাধারণের কী অবস্থা

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আহ্বায়ক আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, মন্ত্রীর মোবাইল নেওয়ার সাহস পেলে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা? নিঃসন্দেহে এটি উদ্বেগের কথা।

'‌‌এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সামগ্রিক পরিস্থিতির প্রতিফলন নয়। আমরা বিক্ষিপ্তভাবে অনেক অপরাধের কথাও সভায় আলোচনা করেছি। দুর্বৃত্তায়ন, হত্যা, খুন সব দেশেই হচ্ছে। এর অর্থ এই নয় যে, এটা সামগ্রিক চিত্র। আপনি যেটা বলেছেন সুনির্দিষ্ট একটা অভিযোগ। এখন রাস্তাঘাটে যে ছিনতাই হচ্ছে না এমন নয়, হচ্ছে এবং প্রতিকারের জন্য চেষ্টাও হচ্ছে। ক্রাইম হচ্ছে এবং অপরাধীরা শনাক্তও হচ্ছে। দুটাই বিবেচনায় নিতে হবে।' 

অচিরেই বঙ্গবন্ধুর খুনিদের খেতাব বাতিল করে গেজেট প্রকাশ

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের খেতাব বাতিল ইস্যুতে তিনি বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আইনি প্রক্রিয়া সব শেষ হয়েছে। অচিরেই বঙ্গবন্ধুর খুনিদের খেতাব বাতিল করে গেজেট প্রকাশ করা হবে। এটি প্রক্রিয়াধীন, দ্রুতই হবে।

রোহিঙ্গাদের পকেট খরচ দেওয়ার কোনো বিধান নেই

১৮ হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'সেখানে মানসম্মতভাবে তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে বিক্ষোভ হয়েছে, ৫ হাজার টাকা করে ভাতা দিতে হবে। পৃথিবীরে কোনো দেশেই শরণার্থীদের নাগরিক সুবিধা থাকে না। তাদের থাকতে দেওয়া হয়, নিরাপত্তা দেওয়া হয়।' 

'আমরা বলেছি, তাদের চিকিৎসার যেন কোনো ঘাটতি না হয়। তাদের থাকা, খাওয়া, পরার যা দরকার তা শতভাগ সরকার নিশ্চিত করবে। পকেট খরচ দেওয়ার কোনো বিধান নেই। হয়ত না বুঝে বা কারো প্ররোচণায় বলেছে।'

তিনি বলেন, 'ভাসানচর বিচ্ছিন্ন এলাকা। কিন্তু সেখানে প্রতিদিনই বহুসংখ্যান নৌযান যাচ্ছে, ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। এসব বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কোনো নাগরিকই বিনা অনুমতিতে সেখানে যেতে পারবে না। যাতায়াতের যেসব বাহন আছে সেগুলো বন্ধ থাকবে। সাংবাদিক বা অন্য কেউ সেখানে যেতে চাইলে সরকারের অনুমতি নিয়ে যাবেন।'

'অনেকে বলছেন, রোহিঙ্গারা বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। আমরা পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব দিয়েছি। এরা যৌথভাবে বিষয়টি দেখবেন। যদি কাউকে পাওয়া যায় তাকে ধরে ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সেখান থেকে তাদের ভাসানচরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।'

যারা কক্সবাজার বা অন্য এলাকায় রয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই মাদক ব্যবসা ও অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'সেটা নিয়ন্ত্রণের জন্য চারদিকে ওয়াল নির্মাণের কাজ আগামী দুই মাসের মধ্যে শেষ হবে, সিসি ক্যামেরা বাড়ানো হবে। অবৈধ কর্মকাণ্ড যাতে বন্ধ হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।'

এসএইচআর/এমএআর/