প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশের সীমান্তবর্তী জেলা ও উচ্চ সংক্রমিত এলাকায় অঞ্চলভিত্তিক সম্পূর্ণ লকডাউনের পরামর্শ দিয়েছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। একইসঙ্গে সীমান্তবর্তী সব জেলাসহ উচ্চ সংক্রমিত এলাকা থেকে আন্তঃজেলা গণপরিবহন বন্ধ করা প্রয়োজন বলেও কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (১ জুন) কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, দেশের সার্বিক কোভিড-১৯ পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে; বিশেষ করে সীমান্তবর্তী (রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, রাজশাহী, নওগাঁ এবং খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, বাগেরহাট) এলাকাতে সংক্রমণের উচ্চহার দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও আরও কিছু জেলাতে উচ্চ সংক্রমণ পরিলক্ষিত হয়। ইতোমধ্যে কমিউনিটি পর্যায়ে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের (ধরন) উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

এতে বলা হয়, স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার পরও বড় আকারে সংক্রমণ হলে চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য বড় রকমের চ্যালেঞ্জ হতে পারে। যেমনটি বিভিন্ন উন্নত দেশে দেখা গেছে। সাম্প্রতিককালে ভারত এই চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় সংক্রমণ প্রতিরোধের কোনো বিকল্প নেই এবং এতে জনপ্রশাসনের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

সংক্রমণ রোধে নিন্মলিখিত সুপারিশসমূহ-

১. দেশব্যাপী জারি করা সরকারি বিধিনিষেধ কঠোরভাবে পালন করতে হবে।
>> সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরা।
>> রেস্তোরাঁতে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা বন্ধ করা (টেক-অ্যাওয়ে ব্যবস্থা চলতে পারে)।
>> সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জনসমাবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা।
>> পর্যটন স্থান/বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ রাখা।

২. সংক্রমণের উচ্চহার বিবেচনায় সীমান্ত এলাকাসমূহ অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে।
>> সীমান্তবর্তী জেলা ও উচ্চ সংক্রমতি এলাকায় অঞ্চলভিত্তিক সম্পূর্ণ লকডাউন দেওয়া।
>> জরুরি সেবায় নিয়োজিত ছাড়া সব জনগণের বাড়িতে থাকার আদেশ দেওয়া।
>> সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে অবৈধ অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণরূপে বন্ধের জন্য কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করা ও টহলের পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন।
>> তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় কার্যক্রম গ্রহণে স্থানীয় প্রশাসনকে ক্ষমতার্পণ করা।

৩. সীমান্তবর্তী সব জেলাসহ উচ্চ সংক্রমিত এলাকা থেকে আন্তঃজেলা গণপরিবহন বন্ধ করা প্রয়োজন।

৪. জেলা পর্যায়ে কোভিড-১৯ প্রতিরোধের বিধিনিষেধ পালনে স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৫. প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিধিনিষেধ নিশ্চিতে কঠোর মনিটরিং জোরদার করা প্রয়োজন। এই বিষয়ে আইন প্রয়োগের আইন সংশোধন করা যেতে পারে।

৬. সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ না আসা পর্যন্ত বিধিনিষেধের প্রয়োগ অব্যাহত রাখা এবং বিজ্ঞানভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ নিশ্চিত করা।

বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি আরও উল্লেখ করে, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস একটি ফাঙ্গাসজনিত সংক্রমণ যা নতুন নয়। এই সংক্রমণ আগেও দেখা গেছে। কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ব্যবহৃত স্টেরয়েড মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিয়ে ডায়াবেটিসের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায়। এরই প্রেক্ষিতে এই সংক্রমণ দেখা যেতে পারে।

কোভিড-১৯ চিকিৎসা গাইডলাইনে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চিকিৎসা অন্তর্ভুক্ত করা, প্রয়োজনীয় ওষুধের মজুত সংরক্ষণ এবং স্টেরয়েডের যৌক্তিক ব্যবহারের বিষয়েও পরামর্শ দেয় কমিটি।

ভারতের ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমণের সঙ্গে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ব্যবহৃত ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেনের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে দেশেও ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে এ জন্য এখনই তা প্রস্তুত করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

টিআই/এফআর