আমগোর আবার ঈদ কীসের?

আমগোর আবার ঈদ কীসের? আমগোর মা নাই। বাপে খোঁজ রাখে না। ঈদে সবাই নতুন জামা কেনে কিন্তু আমগোরে কেউ জামা কিনে দেয় না। আমাগোর জন্য ঈদ না— এভাবেই আক্ষেপের কথা জানাচ্ছিল রাজধানীর বাসাবো ফ্লাইওভারের পাশে বেড়ে ওঠা ৯ বছর বয়সী পথশিশু মিম্মা।
তার সঙ্গেই রয়েছে ছয় বছরের ছোটভাই আল-আমিন। মিম্মা এবং তার ভাই ছোট থাকতেই ঢাকায় এক ধনী পরিবারে কাজের জন্য আসে। এরপর সেখান থেকেই সময়ের পালাবদলে নিয়তি নিয়ে আসে রাস্তায়।
বিজ্ঞাপন
শুধু মিম্মা কিংবা আল-আমিন নয়, বাসাবো, কমলাপুর এবং এর আশপাশের এলাকায় এমন পথশিশুদের সংখ্যা অজস্র। ওদের জীবনে ফুল-পাখি কিংবা আকাশ কিছুই নেই। নেই মমতায় জড়ানো অভিভাবক কিংবা প্রিয়জন। নেই কোনো উৎসব বা আয়োজনও। সমাজ অধিপতিদের এতশত আয়োজনের কিছুই যেন ওদের স্পর্শ করে না। শহর থেকে গ্রামে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়লেও ওদের জীবনে শুধুই বিষাদের সুর। ফলে ঈদ হোক কিংবা অন্য কোনো আয়োজন, পথশিশুদের জন্য যেন জীবনের এসব আয়োজন নয়।
রাজধানীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পথশিশুদের অনেকেই বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান থেকে খাবার পেয়েছে। কারও কপালে আবার এসব খাবারও জোটেনি। তবে খাবার পাক কিংবা কাপড় ওদের সবার মুখেই আক্ষেপের ছাপ স্পষ্ট৷
কমলাপুর রেলস্টেশনের পাশে কথা হয় হাসিব নামে এক পথশিশুর সঙ্গে। সে বলে, ‘আজ সারা দিন আমরা একলগে ঘুরব। আমার সব বন্ধুরা মিলে আজ বোতল টোকাবো। আজ মেলা বোতল পাওয়া যাইবো।’
ঈদের খাবার খেয়েছ কি না জানতে চাইলে সে বলে, ‘সকালে একজন এক প্যাকেট খাবার দিয়ে গেছিল। সেটা খাইছি। দুপুরে খাইনি।’
বাসাবো ফ্লাইওভারের পাশে আরেক পথশিশু সিফাত বলে, ‘আমরা প্রতিদিন এহানে খাবার খাই। প্রতিদিন এই জায়গায় খাওন দেওয়া হয়। আজ জামাও দিছে।’
এদিকে বাসাবো ফ্লাইওভারের পাশেসহ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় এসব ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে গত ১৪ বছর ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছে ‘ভালো কাজের হোটেল’ নামে একটি সংগঠন। ভালো কাজের হোটেলের প্রতিষ্ঠাতা মো. আরিফুর রহমান বলেন, আমরা আজকে পাঁচ শতাধিক সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করেছি। আমরা ২০১১ সাল থেকেই পরিবারের সঙ্গে ঈদ না করে পথশিশুদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করি। প্রথমদিকে নিজেই প্রতিদিন একটি করে ভালো কাজ করতাম। এটাকে একটা অভ্যাসে দাঁড় করাই। এরপর মনে হলো শুধু ভালো কাজ করলেই হবে না সমাজেও ভালো কাজগুলো ছড়িয়ে দিতে হবে। সেখান থেকেই শুরু। বন্ধুরা মিলে শুরু করলাম। এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে সবকিছু।’
সংগঠনটি সমাজের এসব ছিন্নমূল সুবিধাবঞ্চিত মানুষের ঈদকে আরও অর্থবহ করে তুলতে নতুন পোশাক এবং ভালো মানের খাবার নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে। শুধু ভালো কাজের হোটেল নয়; কয়েকজন পৃথকভাবে খাবারের প্যাকেট নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
এমএম/এমএ