ময়না তদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে চিকিৎসক লিপির মরদেহ
রাজধানীর কলাবাগানের ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া গ্রিন লাইফ হাসপাতালের চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমান লিপির (৪৭) রক্তাক্ত মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠিয়েছে কলাবাগান থানা পুলিশ।
সোমবার (৩১ মে) কলাবাগানের ৫০/১ ফার্স্ট লেনের ভাড়া বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি গ্রিন লাইফ হাসপাতালের কনসালটেন্ট (সনোলজিস্ট) ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
কলাবাগান থানার ওসি পরিতোষ চন্দ্র ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা এটি একটি হত্যাকাণ্ড। তবে তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চিকিৎসক সাবিরার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় ওই বাসায় পৌঁছে সম্ভাব্য আলামত সংগ্রহ করে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট। উপস্থিত হয় মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ, পিবিআই, র্যাবের তদন্তকারী দল।
দুপুরে ওই চিকিৎসকের মরদেহ উদ্ধারের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ডিবি পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক বলেন, নিহত সাবিরার গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। পিঠেও দুটি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে এই ঘটনাকে আত্মহত্যা মনে হচ্ছে না।
ডিসি আজিমুল হক বলেন, ডা. সাবিরা কলাবাগানের ৫০/১ ফার্স্ট লেনের বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন। তিনি ফ্ল্যাটের দুটি রুম এক তরুণীকে সাবলেট হিসেবে ভাড়া দেন। সকালে সাবলেটে থাকা তরুণী হাঁটতে বের হয়েছিলেন। হেঁটে আসার পর তিনি বাসায় ফিরে দেখেন চিকিৎসক সাবিরার রুম বন্ধ। রুমের ভেতর থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। পরে তিনি দারোয়ানকে ডেকে চাবি এনে রুমের তালা খুলে দেখতে পান চিকিৎসক সাবিরা ফ্লোরে পড়ে আছেন। সবাই ভেবেছিলেন চিকিৎসক আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। পরে ডিবি এসে তার গলায় একটি আঘাতের চিহ্ন ও পিঠে দুটি আঘাতের চিহ্ন পায়। আমরা তদন্ত করছি। আশা করছি দ্রুত রহস্য উদঘাটন করব।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৪ জন ডিবি হেফাজতে
চিকিৎসক নিহতের ঘটনায় এ পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার জনকে হেফাজতে নিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তারা হলেন- সাবলেট থাকা এক শিক্ষার্থী, তার এক বন্ধু, বাড়ির দারোয়ান রমজান ও গৃহপরিচারিকা।
ডিবি সূত্র জানায়, ডা. সাবিরা দুটি বিয়ে করেছিলেন। তার প্রথম স্বামী চিকিৎসক ছিলেন। তিনি একটি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। পরে সাবিরা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সাবিরার দ্বিতীয় স্বামী সামসুদ্দিন আজাদ, তিনি ন্যাশনাল ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তবে দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে বনিবনা ছিল না তার। সাবিরার দুই সন্তান রয়েছে। তার আগের স্বামীর ঘরে একটি ছেলে এবং দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে ৯ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। মেয়েকে নিয়ে কলাবাগানের এই বাড়িতে থাকতেন সাবিরা। গত রাতে মেয়েটিকে গ্রিন রোডের নানার বাসায় রেখে এসেছিলেন তিনি। রাতে বাসায় একা ছিলেন সাবিরা।
সাবিরার মামাতো ভাই মো. রেজাউল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের মনে হচ্ছে এটি একটি হত্যাকাণ্ড। বিষয়টিকে অন্যদিকে ডাইভার্ট করার জন্য আগুনের ঘটনা সাজানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, আমরা এখনো কাউকে সন্দেহ করছি না। তদন্তের পর পুলিশ বিস্তারিত বলতে পারবে।
জেইউ/জেডএস