তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও কর ব্যবস্থাপনা তামাক ছাড়ার প্রবণতাকে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত করে। তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও কর বাড়িয়ে এর সহজলভ্যতাকে সংকুচিত করা তামাক নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে কার্যকর ও সাশ্রয়ী উপায় হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। কিন্তু করারোপের পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতার কারণে বাংলাদেশে এটি তেমন কার্যকর হচ্ছে না। তাই তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনা ও তামাক ব্যবহার ত্যাগে উৎসাহিত করতে তামাক-কর ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে।

রোববার (৩০ মে) বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো (বিইআর), বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা) ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) যৌথ আয়োজিত এক অনলাইন আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধাপক এবং বিএনটিটিপির কনভেনর ড. রুমানা হক।

আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশে তামাক কর আদায়ের ক্ষেত্রে জিডিটাইলাইজেশনের অভাব রয়েছে। এ বাধা কাটিয়ে উঠতে পারলে অনেক বাধা কেটে যাবে। তবে দেশকে তামাকমুক্ত করতে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। বর্তমান মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ কর বৃদ্ধি করে ভোক্তাদের মধ্যে একটি ধাক্কা দিতে হবে। যাতে স্বল্প মূল্যে তারা ক্রয় করতে না পারে। এতে তরুণরাও ধূমপান থেকে নিরুৎসাহিত হবে।

মূল প্রবন্ধে রুমানা হক বলেন, আমাদের দেশে তামাকজাত দ্রব্যের ওপর করারোপে অ্যাডভেলোরেম (শতাংশ হারে) পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। পদ্ধতিটি জটিল ও ত্রুটিপূর্ণ। তাই এটি তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনা বা রাজস্ব বৃদ্ধিতে কাঙ্ক্ষিত অবদান রাখতে পারছে না। বরং তামাক কোম্পানি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে লাভবান হচ্ছে এবং তামাক কোম্পানির কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ থেকে যাচ্ছে। অ্যাডভেলোরেম পদ্ধতির পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে করারোপ করা হলে একইসঙ্গে তামাকের ব্যবহার কমবে ও সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।

বিশ্ব ব্যাংকের একটি গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য প্রতি বছর ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধিতে এর ব্যবহার উচ্চ আয়ের দেশে ৪ শতাংশ এবং নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে ৮ শতাংশ কমে আসে এবং তরুণরা তামাক ব্যবহার শুরু করতে নিরুৎসাহিত হয়।

আলোচনায় অন্যান্যরা বলেন, ২০৪০ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার জন্য আমরা কাজ করছি। সংসদে আমাদের সহযোদ্ধার সংখ্যা বাড়ছে। দেশের মানুষের স্বার্থেই দেশকে তামাকমুক্ত করতে হবে। সম্মিলিত চেষ্টায় নিশ্চয়ই আমরা তা অর্জন করব। ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ পেতে বিগত ৪ বছরে আমরা তেমন কিছুই অর্জন করতে পারিনি। বাকি দিনগুলোতে আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট কর আরোপের কোনো বিকল্প নেই। আসন্ন অর্থবছর থেকেই এটা করতে হবে। এবং কর কাঠামোর বাইরে থাকা তামাকজাত দ্রব্যগুলোকে কর জালের আওতায় আনতে হবে। এ জন্য উচ্চহারে কর বাড়ানো জরুরি।

আলোচনায় আরও যুক্ত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. নাসির উদ্দিন, বাটা’র সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ, সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত, গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহাদৎ হোসেন মাহমুদ, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক, আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক ও নীতি বিশ্লেষক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম প্রমুখ।

এমএইচএন/জেডএস