সরকারের নানান উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে গত এক যুগ ধরে ধারাবাহিকভাবে দেশের নদীভাঙন কমেছে। সরকারের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে এবার চার জেলার নয়টি উপজেলায় নদীভাঙন রোধের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। 

এ উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়ে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) বড় অঙ্কের ঋণ ও নেদারল্যান্ড সরকারের সহায়তা পাচ্ছে বাংলাদেশ। এই চার জেলায় ভাঙন রোধ করা গেলে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগোষ্ঠীদের কাঠামোগত উন্নয়ন ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা অর্জন সহজ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে দেশে বছরে ৬ হাজার ৬০০ হেক্টর এলাকা নদীভাঙনের শিকার হয়েছিল। ২০১৮ সালে তা কমে ৩ হাজার ২০০ হেক্টরে নেমে আসে। এরপর ২০১৯ সালে তা আরও কমে ২ হাজার ৬০০ হেক্টরে নেমে আসে। গত বছর আরও কমে ২ হাজার ৩৬৫ হেক্টরে নেমে এসেছে। নদীভাঙন রোধে সরকার ধারাবাহিকভাবে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নসহ নদী-নালা ড্রেজিং করা হচ্ছে।

সম্প্রতি নদী তীরবর্তী মানুষের ‘বন্যা এবং নদীর তীর ভাঙন ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিনিয়োগ-২’ শীর্ষক একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব করেছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবিত প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা। এর মধ্যে এডিবি ঋণ হিসেবে দিচ্ছে এক হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা ও নেদারল্যান্ড সরকার অনুদান হিসেবে দিচ্ছে ১০৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। আর সরকারি নিজস্ব তহবিল থেকে ৩১৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের পর চলতি বছরের জুলাই থেকে জুন ২০২৫ সালে এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যমুনা ও পদ্মা নদীর তীরবর্তী ভাঙন কবলিত মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও দারিদ্র বিমোচনে ‘বন্যা এবং নদীর তীর ভাঙন ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিনিয়োগ-২’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে এ চারটি এলাকার ভাঙ্গন রোধ করা সম্ভব হবে। 

দ্বিতীয় পর্যায়ের এ প্রকল্পে রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ জেলার তিনটি উপজেলা হচ্ছে শাহজাদপুর, বেলকুচি ও চৌহালি। পাবনা জেলার বেড়া উপজেলা এ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল জেলার দুই উপজেলা হচ্ছে টাঙ্গাইল সদর ও নাগরপুর এবং মানিকগঞ্জ জেলার তিনটি উপজেলা দৌলতপুর, হরিরামপুর ও শিবালয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। 

এর আগে, ২০১৪ সাল থেকে বাস্তবায়ন হওয়া প্রথম পর্যায়ে ‘বন্যা এবং নদীর তীর ভাঙন ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিনিয়োগ’ প্রকল্পটি সুফল পাচ্ছে সাধারণ জনগণ। চলমান এই প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী মাসে।

‘বন্যা এবং নদীর তীর ভাঙন ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিনিয়োগ-২’ প্রকল্পটির উপর আগামী ২ জুন প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা করবে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সভায় সভাপতিত্ব করবেন এই বিভাগের সদস্য (সচিব) রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাস। সিনিয়র সহকারী প্রধান মো. সরোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে পিইসি সভার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম-প্রধান মহা. এনামুল হক স্বাক্ষরিত পিইসি সভার কার্যপত্রে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পে আওতায় ৩০ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ বাবদ মোট ৬১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রতি মিটার ২ লাখ টাকারও বেশি। প্রস্তাবিত প্রকল্পের ৭.৯০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ বাবদ ৩৬ কোটি ৮৯ লাখ (প্রতি মিটার ৪৬ হাজার ৭০০ টাকা) ও ৩ কিলোমিটার বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা (প্রতি মিটার ২৮ হাজার ৪৩৪ টাকা) ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় দুটি জলস্রোত নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্মিত স্লুইস গেইট নির্মাণ বাবদ ২২ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বাবদ ৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ও স্থানীয় প্রশিক্ষণ বাবদ ১ কোটি ২ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ১২টি মৎস অভয়াশ্রম উন্নয়ন বাবদ ১৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা ও সাতটি বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ ছাউনি নির্মাণ বাবদ ১ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় আটটি যানবাহন (জিপ চারটি ও পিকাপ চারটি) ক্রয় বাবদ ৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

এসআর/ওএফ