করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিচালনা করায় আগের তুলনায় স্বচ্ছ ও কার্যকর হয়েছে। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস অপারেটরকে যুক্ত করায় সহায়তা পেতে কাউকে কোথাও যেতে হয়নি।

বৃহস্পতিবার (২৭ মে) ‘করোনা মোকাবিলায় ত্রাণ কর্মসূচি : কতটা কার্যকর ছিল?’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের সময় বক্তারা এসব তথ্য জানান।

সিপিডি, অক্সফাম ইন বাংলাদেশ, এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন যৌথভাবে গবেষণা ও সংলাপটির আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান। সংলাপটি পরিচালনা করেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য।

তিনটি সামাজিক কর্মসূচির ওপর গবেষণাটি করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- খাদ্য সাহায্য, খাদ্য সাহায্যের জন্য প্রণোদনা ও ২৫০০ টাকা করে ৫০ লাখ দরিদ্র মানুষকে সরকারের নগদ সহায়তা। গবেষণায় মোট দুই হাজার ৬০০ খানাকে বিবেচনা করা হয়েছে। চলতি বছরে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারের দেওয়া সামাজিক কর্মসূচির ওপর ভিত্তি করে জরিপের কাজ করা হয়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান সংলাপে অংশ নিয়ে বলেন, সরকারের অনেকগুলো পদক্ষেপ প্রশংসিত হয়েছে। আলোচনায় উঠে এসেছে যে পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায় না। সামনে যেন তথ্যের ঘাটতি না হয়, সেজন্য কাজ করা হবে।

তিনি বলেন, এবার চালের ঘাটতি থাকায় নগদ টাকা দেওয়া হয়েছে। জিআর ও ভিজিএফ নগদ দেওয়া হয়েছে। এটা সত্য যে চাহিদা অনুযায়ী সরকার ত্রাণ দিতে পারেনি। কিন্তু ত্রাণ বিতরণে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়নি। সামনে যেন ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ করা যায়, সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সংলাপে ডাক বিভাগের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ‘নগদ’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, করোনার সময় ত্রাণ সহায়তা হিসেবে নগদ সহায়তা বিতরণে সরকার যথেষ্ট বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে। মাত্র অল্প সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রযুক্তিকে এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সরকার মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস অপারেটরকে যুক্ত করায় প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ হয়েছে। এই সহায়তা পেতে কাউকে কোথাও যেতে হয়নি।

তিনি বলেন, ৫০ লাখ পরিবারকে ২,৫০০ টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও তালিকা যাচাই-বাছাই করার কারণে প্রকৃতপক্ষে ৩৬ লাখ পরিবারকে এই সহায়তা দেওয়া গেছে। আমি এটাকে বড় সাফল্য হিসেবে দেখি। এখানে সরকারের ৩৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে বলে তিনি জানান।

তানভীর এ মিশুক বলেন, আগে আমরা দেখতাম, ত্রাণের চাল বা টিন চুরির খবর সংবাদপত্রে আসত। এবার এমন কোনো খবর আসেনি। কারণ এর কোনো সুযোগই ছিল না। তবে স্থানীয় পর্যায় থেকে যে তালিকা এসেছে, সেটা নিয়ে আমার বিশেষ কিছুই বলার নেই। তিনি বলেন, আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য আছে। সরকার চাইলে তা ব্যবহার করতে পারে। ভবিষ্যতে ত্রাণ বিতরণে এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

বক্তাদের কথার সারসংক্ষেপে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশে করোনা মোকাবিলায় দেওয়া এই ধরনের ত্রাণ সামগ্রীর ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। তার মধ্যে রয়েছে-চাহিদা কত? বরাদ্দ কত? কী ধরনের বরাদ্দ দেওয়া হলো, চাল না নগদ অর্থ? বিতরণ কীভাবে হয়েছে? এবং বিতরণের ক্ষেত্রে কী কী অভিযোগ রয়েছে? এই বিষয়গুলো পরিকল্পনায় রেখে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া উচিত।

তিনি বলেন, আলোচনায় এসেছে বরাদ্দ বাড়াতে হবে এবং বিতরণ ব্যবস্থার উন্নত করতে হবে। নালিশ নিষ্পত্তি করতে হবে এবং বরাদ্দের বিষয়ে তথ্য বাড়াতে হবে। মানুষ অনেক সময় জানেই না যে, সরকার কী ধরনের সহায়তা দিচ্ছে। তথ্য-উপাত্তের ক্ষেত্রে জাতীয় তথ্যের অভাব এবং এক দশক আগের তথ্য দিয়ে কাজ চলছে বলে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এই ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি হয়েছে।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া আগামীদিনে আরও উন্নত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নতুন দরিদ্র চিহ্নিত করার ক্ষেত্রেও এই প্রযুক্তি কাজে দেবে। একইসঙ্গে এই তথ্যের নিরাপত্তা, সংরক্ষণ, সুরক্ষা ও নাগরিকদের অধিকার যাতে নিশ্চিত হয়, সেই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। তিনি তথ্যের হালনাগাদ, বিভাজন ও নিরাপত্তার ওপর গুরত্বারোপ ও স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং জনসম্পৃক্ততা কীভাবে বাড়ানো যায়, তার ওপর গুরত্বারোপ করেন।

আরএম/এমএইচএস