মো. কায়সারের বাবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা বলছেন, তার বাবার অবস্থা ভালো নয়। কায়সার তখন সিদ্ধান্ত নেন বাবাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভালো হাসপাতালে নিয়ে যাবেন। কিন্তু হাতে টাকা ছিল না। এ বিষয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করেন কায়সার। তখন বন্ধুরা তাকে পরামর্শ দেয় দ্রুত টাকা রোজগারের জন্য মোটরসাইকেল ছিনতাই করতে।

বন্ধুদের পরামর্শে মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ে নামেন কায়সার। মোটরসাইকেল ছিনতাই করতে গিয়ে কায়সার ও তার বন্ধুরা হত্যা করেন মো. মুবিন (১৬) নামে এক কিশোরকে। পরে এ হত্যার অভিযোগে গত বুধবার (২৬ মে) চট্টগ্রামের চান্দগাঁওয়ের চর রাঙামাটি এলাকা থেকে কায়সারসহ আরও দুইজনকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেফতার হওয়া যুবকরা হলেন মাে. কায়সার (১৯), মাে. রহিম (১৮) ও মো. আলমগীর (৩২)।

বৃহস্পতিবার (২৭ মে) দুপুরে সিআইডির মালিবাগ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ডিআইজি (চট্টগ্রাম জোন) হাবীবুর রহমান এসব তথ্য জানান।

হাবীবুর রহমান বলেন, গত শুক্রবার (২১ মে) কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের মাইজপাড়া গ্রামের নুরুল আলমের ছেলে মো.মুবিনের অর্ধগলিত মরদেহ লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের হলিকাটা ঝিরি এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। মুবিন ভাড়ায় মােটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এ ঘটনার পর থেকেই  তদন্তে নামে সিআইডি।

তিনি বলেন, তদন্তে জানা যায়, গত ১৮ মে এক যুবক রাত ১১টায় মুবিনকে বাড়ি থেকে ডেকে নেয়। এর পরদিন থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন। ২১ মে মুবিনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তদন্তের একপর্যায়ে জানা যায়, বিয়েতে যাওয়ার কথা বলে মুবিনের মোটরসাইকেল ভাড়া করেন কায়সার। পরে লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের হলিকাটা ঝিরির এলাকায় পৌঁছালে মোটরসাইকেল থামান তিনি। ওই জায়গায় আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন কায়সারের দুই বন্ধু রহিম ও আব্দুল্লাহ। এ সময় রহিম মুবিনের দুই পা ও আব্দুল্লাহ দুই হাত চেপে ধরে। তখন কায়সার ছুরি দিয়ে মবিনের গলায় আঘাত করে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে পেটেও ছুরিকাঘাত করে তারা। এরপর তাকে পাহাড়ের নীচে ফেলে দেয়। পরে তারা মুবিনের মোটরসাইকেলটি নিয়ে মো.আলমগীর নামে একজনের কাছে বিক্রি করে।

তিনি আরও বলেন, গ্রেফতার ও ভিকটিমের কল রেকর্ড এবং তদন্তের মাধ্যমে সিআইডি নিশ্চিত হয় এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কায়সার ও তার বন্ধুরা জড়িত। পরে প্রযুক্তির সহায়তায় তাদের অবস্থান নিশ্চিত করে বুধবার গ্রেফতার করা হয়। তবে অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ এখনও পলাতক রয়েছেন।

ডিআইজি হাবীবুর রহমান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কায়সার জানান, তার বাবা হাসপাতালে ভর্তি। চিকিৎসক বলে দিয়েছেন, তার বাবা আর বাঁচবেন না। এরপরেও কায়সার টাকা জোগাড় করে উন্নত চিকিৎসার জন্য চেষ্টা করতে থাকেন। পরে বন্ধুরাই তাকে মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের পরামর্শ দেয়। এরপর মুবিনের মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন।

তিনি বলেন, এদের নামে থানায় কোনো মামলা না থাকলেও এলাকায় তারা চুরি, ছিনতাই ও ছোট অপরাধ করতো। অভিযুক্তরা একত্রিত হয়ে সংঘবদ্ধ চক্র তৈরির চেষ্টা করছিল।

এমএসি/এসকেডি