গ্রেফতার মোস্তাফিজ

‘পুলিশ কি কখনও ভালো হবে না?’ - ২৩ মে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের ফেসবুক পেইজে এই ক্যাপশনসহ কয়েকটি স্ক্রিনশট পাঠায় বেশ কয়েকজন ব্যক্তি। স্ক্রিনশটগুলোতে দেখা যায়, আরাফাত জামান নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ‘পুলিশ কি কখনও ভালো হবে না?’ লেখাটি পোস্ট করা হয়। 

পুলিশ যাচাই-বাছাই করে দেখে অভিযোগটি ছিল হাতিরঝিল থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। পোস্টে অভিযোগ করে বলা হয়, হাতিরঝিল থানা পুলিশের ২-৩ জন সদস্য এক যুবককে তল্লাশির সময় গাঁজা রাখার মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসাতে চেয়েছিলেন। ৫০০ টাকা দিয়ে ওই যুবক কোনোমতে বাড়িতে ফিরেছে।

পোস্টটি দেখে ঘটনা তদন্তে নামে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ। আরাফাত নামের যে ছেলেটি পোস্টটি করেছিল তার সঙ্গে মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করে পুলিশ। আরাফাত জানায়, ঘটনার শিকার তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও রুমমেট মোস্তাফিজুর রহমান বিপ্লব। তারা পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় একটি মেসে থাকে।

২২ মে সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় মোস্তাফিজ আরাফাতকে ফোন করে জরুরিভিত্তিতে তার ‘৫০০ টাকা দরকার’ বলে জানায়। রাতে মেসে ফিরে সে টাকা ফেরত দেবে বলেও জানায়। আরাফাত মোস্তাফিজের মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে দ্রুত ৫০০ টাকা পাঠায়।

রাত ১০টায় মেসে ফেরে মোস্তাফিজ। আরাফাত মোস্তাফিজের কাছে ৫০০ টাকা ফেরত চায়। তবে টাকা ফেরত না দিয়ে মোস্তাফিজ জানায়, সে যখন আরাফাতের কাছে জরুরিভিত্তিতে ৫০০ টাকা চায়, তখন হাতিরঝিলের মহানগর ব্রিজ এলাকায় ইউনিফর্ম পরা কয়েকজন পুলিশ তাকে ধরেছিল। পুলিশের ইউনিফর্মে নেমপ্লেট ছিল না। মোস্তাফিজের বডিসার্চ করে কিছু না পেলেও পুলিশ নিজেদের পকেট থেকে গাঁজা বের করে তার পকেট থেকে পাওয়া গেছে বলে ভুয়া মাদক মামলা দেওয়ার ভয় দেখায়। তার পকেটে থাকা ৫০০ টাকা কেড়ে নেয় পুলিশ। আরও ৫০০ টাকা দাবি করলে সে আরাফাতের কাছ থেকে ৫০০ টাকা চেয়ে নিয়ে পুলিশের দেওয়া মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ) নম্বরে পাঠায়।

তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, মধ্যরাতে আরাফাত যখন ঘুমিয়ে পড়ে মোস্তাফিজ তার অগোচরে মোবাইল নিয়ে আরাফাতের ফেসবুক আইডি থেকে স্ট্যাটাস দেয় ‘পুলিশ কি কখনও ভালো হবে না?’

পরদিন ঘুম থেকে উঠে আরাফাত দেখে তার ফেসবুকে দেওয়া ওই পোস্টে অনেকেই নানা ধরনের মন্তব্য করেছে। কেউ কেউ ফোন করে প্রকৃত ঘটনাও জানতে চেয়েছে। অনুমতি ছাড়া আরাফাতের ফেসবুক আইডি থেকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় মোস্তাফিজের সঙ্গে বাকবিতণ্ডাও হয় তার। পরে স্ক্রিনশট রেখে পোস্টটি ডিলিট করে দেয় আরাফাত।

পরদিন ২৩ মে দুপুরে মোস্তাফিজ মেসেঞ্জারে আরাফাতকে ঘটনাস্থল হাতিরঝিলের মহানগর ব্রিজ এলাকার স্ক্রিনশট ও পুলিশের মোবাইল ব্যাংকি নম্বরে ৫০০ টাকা (সেন্ড মানি) পাঠানোর স্ক্রিনশট দেয়। পাশাপাশি মেসেঞ্জারে একটি ভয়েস বার্তা পাঠিয়ে আরাফাতকে অনুরোধ করে ভয়েস বার্তাটি বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতজন ও মিডিয়াকর্মীদের পাঠিয়ে ভাইরাল করতে।

ভয়েস বার্তায় ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সন্ত্রাসী, চোর-ডাকাতও পুলিশের চেয়ে ভালো বলে উল্লেখ করা হয়।

ওই স্ক্রিনশট নিয়ে তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, বিকাশ ব্যবহার করে গত ৩-৪ মাসে মোস্তাফিজের মোবাইল থেকে মাত্র একটি সেন্ড মানি করা হয়েছে। টাকার পরিমাণ ১০০০ টাকা। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, পটুয়াখালীতে সেন্ড মানি করা ওই টাকার প্রাপক মোস্তাফিজের বান্ধবী।

পুলিশের বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা অপবাদ দেওয়ায় অবশেষে বুধবার (২৬ মে) শেরেবাংলা নগর এলাকা থেকে মোস্তাফিজকে গ্রেফতার করা হয়। তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. শহিদুলাহ গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি বলেন, তেজগাঁও বিভাগের এলাকায় আরাফাত পুলিশের দ্বারা অপদস্থ ও অন্যায় আচরণের শিকার হয়েছে বলে জেনেছিলাম। আমরা জড়িত পুলিশ সদস্যদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রত্যয় ব্যক্ত করি। পরবর্তীতে তদন্তের পর তার মিথ্যাচার সম্পর্কে জানতে পারি।

হাতিরঝিল থানা পুলিশ জানায়, গ্রেফতার মোস্তাফিজ স্বীকার করেছে যে আরাফাতের কাছ থেকে ৫০০ টাকা ধার নিয়ে তা ফেরত না দেওয়ার জন্য হাতিরঝিল থানা পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগের নাটক সাজিয়ে অভিযোগটি আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে আরাফাতের ফেসবুক আইডি থেকে ‘পুলিশ কি কখনও ভালো হবে না?’ স্ট্যাটাসটি দেয়।

মোস্তাফিজ আরও জানায় পুলিশের বিরুদ্ধে সত্য-মিথ্যা যেকোনো সংবাদ বড় বড় পত্রপত্রিকা ও টিভি চ্যানেল ফলাও করে প্রচার করে। ইউটিউবাররাও ব্যস্ত হয়ে নতুন নতুন ভিডিও বানিয়ে আপলোড করে। দ্রুত ভাইরাল হওয়া যায়। যেকারণে মিথ্যা ভয়েস বার্তাটি আরাফাতের মেসেঞ্জার ও হোয়াটস অ্যাপে পাঠায় সে। 

মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় অর্থ আত্মসাৎ ও গুজব রটানোর মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এআর/এসএসএইচ