মাগুরায় বাঁওড় ভ্রমণে রেলমন্ত্রী
সাদা মেঘের ভেলা ভাসছে আকাশে। বৃষ্টি নামতে পারে যেকোনো সময়। বাতাসের দাপাদাপিতে ছোট নৌকাগুলো দুলছে ছন্দ তুলে। স্বচ্ছ বাঁওড়ের জলের স্রোতে চলছে কাঠের তৈরি নৌকা। ইঞ্জিন দিয়ে নয়, হাতের বৈঠায় চলছে। যন্ত্রণাদায়ক কোনো শব্দ নেই। জলের কলকল শব্দ কানে আসছে, কানে আসছে পাখির ডাকও।
রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন নৌকায় বসে প্রকৃতির সৌন্দর্য চোখভরে দেখে নিচ্ছেন। সঙ্গে আছেন রেলসচিব মো. সেলিম রেজা। কিছুদিন আগে করোনার সঙ্গে লড়াই করে জিতেছেন সেলিম রেজা- এখন এই মুক্ত হাওয়ায় নৌকায় দুলতে দুলতে তিনিও হাস্যোজ্জ্বল।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (২৬ মে) বিকেলে রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজনসহ রেলপথ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ রেলওয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা মাগুরার সিরিজদিয়া বাঁওড়ে নৌভ্রমণ করেন। ঘুরে দেখেন পুরো পর্যটনকেন্দ্রটি।
ফরিদপুরের মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা শহর পর্যন্ত ২৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২৭ মে) বেলা ১১টায় প্রধান অতিথি হিসেবে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে এ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মাগুরা সদর উপজেলার রামনগর হরিপদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সময় যুক্ত থাকবেন রেলপথমন্ত্রী।
এজন্যই বুধবার ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে রেলমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্যরা বেলা ১২টায় মাগুরা পৌঁছান। পরে তারা মাগুরা সদর উপজেলার চাউলিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত পর্যটনকেন্দ্র সিরিজদিয়া বাঁওড়ে যান। এ সময় রেলমন্ত্রীর সঙ্গে আরও ছিলেন মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর এবং পাবনার সংসদ সদস্য (সংরক্ষিত) নাদিয়া ইয়াসমিন জলি।
বুধবার রাতে রেলমন্ত্রী ঢাকা পোস্টকে তার বাঁওড় ভ্রমণের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, আমি প্রায় আধ ঘণ্টা অন্যদের সঙ্গে নৌকায় ছিলাম। খুব ভালো লেগেছে। ইঞ্জিনের যন্ত্রের কোনো শব্দ ছিল না। খুবই সুন্দর পরিবেশ। এই জলাশয় বড়। এক থেকে দেড় কিলোমিটার নৌকায় ঘুরেছি। শহরের বাতাস আছে। বৃষ্টির ভাব আছে- এ অবস্থায় আধ ঘণ্টা ঘুরে দেখলাম।
রেলমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের মানুষ পর্যটনকেন্দ্রে যেতে আগ্রহী। তারা এ পর্যটনকেন্দ্রে আসতে আগ্রহী। এই পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার কাজ চলছে। রেলপথ চালু হলে পর্যটনকেন্দ্রে চলাচল আরও সহজ হবে অনেক।
সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক সময় এটা ছিল সিরিজদিয়া নদী। এখানে প্রায় ১০০ একর জমি রয়েছে। জলাশয় দেখতে লোকজন এমনিতেই আসতো। কয়েক বছর ধরে আমরা পরিকল্পনা করছি এই জলাশয়কে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার। জেলা প্রশাসনের অধীনে পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়ন চলছে। এখানে শিশু পার্ক করা হবে, পিকনিক স্পট করা হবে। মাগুরার জিরো পয়েন্ট থেকে এই পর্যটনকেন্দ্র সাত কিলোমিটার দূরে।
মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা শহর পর্যন্ত ২৪.৮ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণে ব্যয় হবে ১ হাজার ২০২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা । ফরিদপুর ও মাগুরা জেলার মধ্যে প্রকল্পের অবস্থান। প্রকল্পটি মাগুরা জেলাকে বিদ্যমান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় মাগুরা ও কামারখালীতে নতুন দুটি স্টেশন ও দুটি প্ল্যাটফর্ম, ২টি সেড, একটি আন্ডারপাস, গড়াই ও চন্দনায় দুটি রেলসেতু, ২৮টি ছোট সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের জন্য ১৩০ একর ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ফরিদপুরের মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা শহর পর্যন্ত নতুন রেললাইন স্থাপনে গত রোববার (২৩ মে) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক আসাদুল হক এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিআরইসি-সিসিসিএলের পক্ষে লিউ জি বিং এবং প্যাকেজ ডব্লিউডি-২ (সেতু নির্মাণ) এর জন্য সিআরসিসি-এমএএইচএল-এর পক্ষে তাং জিয়াওজিন চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন।
রেলমন্ত্রীর সাথে এই ভ্রমণে আরও ছিলেন তার একান্ত সচিব মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, রেলমন্ত্রীর সহকারি একান্ত সচিব মো. রাসেদ প্রধান ও জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মো. শরীফুল আলম।
পিএসডি/এইচকে