ভাসানচর বিশ্বের জন্য একটি উদাহরণ : জাতিসংঘ
‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে তৈরি ভাসানচর বিশ্বের জন্য একটি উদাহরণ’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের ৭৫তম অধিবেশনের সভাপতি ভলকান বাজকির। তিনি বলেন, ‘শরণার্থীদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের এমন উদ্যোগ ভূয়সী প্রশংসার যোগ্য।’
মঙ্গলবার (২৫ মে) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন বাংলাদেশ সফররত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি ভলকান বাজকির। বৈঠক শেষে ভাসানচর প্রসঙ্গে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
বাজকির বলেন, ‘আমি ভাসানচরে যেতে পারছি না। তবে আমি একটা ভিডিও দেখেছি। আমি মনে করি এটা শরণার্থীদের জন্য তৈরি করা এমন একটি ক্যাম্প যেটা বিশ্বের জন্য উদাহরণ। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ সাহসী উদ্যোগ নিয়েছে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতন থেকে বাঁচতে বিভিন্ন সময় নিজ জন্মভূমি থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন প্রায় ১১ লাখের অধিক রোহিঙ্গা। বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা কক্সবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে তাদের আশ্রয় দেওয়া হয়। পরবর্তীতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার বিরান দ্বীপ ভাসানচরে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয় সরকার।
সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচরে এক লাখের বেশি রোহিঙ্গার বসবাসের উপযোগী স্থাপনাসহ নানা অবকাঠামো তৈরি করা হয়। ইতোমধ্যে পাঁচ দফায় মোট ১২ হাজার ২৮৪ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করেছে সরকার।
প্রথমদিকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভাসানচরে স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় বিরোধিতা করেছিল জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের না পাঠানোর জন্য বিবৃতিও দিয়েছিল জাতিসংঘ। তবে গত ১৭ মার্চ তিনদিনের সফরে ভাসানচর পরিদর্শন করেন জাতিসংঘের ১৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। এরপর থেকে সুর পাল্টাতে থাকে জাতিসংঘ।
সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচরে এক লাখের বেশি রোহিঙ্গার বসবাসের উপযোগী স্থাপনাসহ নানা অবকাঠামো তৈরি করা হয়। ইতোমধ্যে পাঁচ দফায় মোট ১২ হাজার ২৮৪ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করেছে সরকার
বছর দুয়েক আগেও ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করা সম্ভব হচ্ছিল না আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বাধার কারণে। তবে গত বছরের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের অনিচ্ছার পরও প্রথম দফায় ১৬৪২ রোহিঙ্গাকে নিয়ে ভাসানচরে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করে সরকার।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন ভলকান বাজকির। সফরের দ্বিতীয় দিন আগামীকাল বুধবার (২৫ মে) কক্সবাজারে শরণার্থী ক্যাম্পে পরিদর্শনে যাবেন বলে জানান জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট।
বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লেইং সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমি রাখাইনে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সংশয়ের কথা জানান। এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কোনো অস্পষ্টতা থাকা ঠিক নয়। সাধারণ পরিষদে ছয় সপ্তাহ আগে মিয়ানমার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে মিয়ানমার নিয়ে দ্বিধাবিভক্তি লক্ষ্য করা গেছে।’
‘একটি গ্রুপ হচ্ছে আসিয়ান এবং আরেকটি কোর গ্রুপ। আসিয়ানের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি প্রচার করা হয়েছে। মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ আসিয়ান দেশগুলো সমর্থন করে না। অপরদিকে, কোর গ্রুপ সামরিক সরকারকে নিন্দা জানায় এবং এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে চায়।’
‘বুধবার কক্সবাজারে গিয়ে বাংলাদেশের প্রশংসাযোগ্য উদ্যোগ দেখব এবং সেখান থেকে মিয়ানমারের উদ্দেশে আমার বার্তা দেব’— বলেন জাতিসংঘের ৭৫তম অধিবেশনের সভাপতি। ‘বাংলাদেশের অগ্রগতি বিশ্বের জন্য উদাহরণ হতে পারে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, ‘বাংলাদেশ আর্থসামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেক এগিয়ে গেছে। এটাও একটা অনন্য উদাহরণ। এলডিজি অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। জলবায়ু ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বিশ্বকে আশা দেখাচ্ছে।’
গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়েও কথা বলেন বাজকির। তিনি বলেন, ‘মুক্ত গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের আরও স্বাধীনতা থাকা উচিত।’ তিনি বেলারুশে সাংবাদিকের সঙ্গে হওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দাও জানান। প্রসঙ্গত, গত রোববার বেলারুশের ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক রোমান প্রোতাসেভিচকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে গ্রেফতারের জন্য গ্রিস থেকে লিথুয়ানিয়াগামী একটি ফ্লাইট ঘুরিয়ে নেয় বেলারুশ কর্তৃপক্ষ। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বোমা থাকার কথা বলে ফ্লাইটটি ঘুরিয়ে নেওয়া হয়।
বৈঠকে আলোচনার প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘বৈঠকে আমরা রোহিঙ্গা ইস্যু, জলবায়ু ইস্যু, এসডিজি অর্জনে টাকা ও প্রযুক্তি কীভাবে পাব— এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া শান্তি রক্ষা মিশনে আমাদের যে কালচার অব পিস, এটার ইভেন্ট আয়োজনের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।’
দুদিনের সফরে মঙ্গলবার (২৫ মে) সকালে ঢাকা আসেন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট বলকান বাজকির। সফরের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরও পরিদর্শন করেন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি।
এনআই/এমএআর/