মন্ত্রী-সচিবের সঙ্গে সেলফি, কণ্ঠ নকল করে প্রতারণা
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে ছবি ও সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে নিজেকে ক্ষমতাশালী হাজির করতেন সোহেল হোসেন রানা (৪৭)। নিজের গাড়ীতে ব্যবহার করতেন সংসদ সদস্যের স্টিকার। একেক সময় একেক মন্ত্রীর পিএস, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব পরিচয় দিয়ে হাতিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।
সর্বশেষ কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোলের অফিস সহায়ক মোস্তাফিজুর রহমানর পরিচয় দিয়ে এক উপ-পরিচালকের কাছে প্রতারণামূলকভাবে টাকা দাবি করার পর সহযোগী মো. শাকিল ইসলামসহ (২৪) গ্রেফতার হন তিনি।
বিজ্ঞাপন
ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ইউনিটের সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম তাদের গ্রেফতার করে।
মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি জামালপুর জেলার উপ-পরিচালক জাকিয়া সুলতানাকে ফোন দিয়ে টাকা দাবি করেন রানা। জাকিয়াকে ফোনে তিনি বলেন, কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের শ্যালিকাকে জামালপুর জেলার ইসলামপুরে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রীর শ্যালিকার এখনই ২৫ হাজার টাকা প্রয়োজন। তাকে যেন তিনি (জাকিয়া সুলতানা) ২৫ হাজার টাকা ওই নম্বরের নগদ অ্যাকাউন্টে পাঠান।
বিষয়টি সন্দেহজনক মনে করে জাকিয়া সুলতানা নিশ্চিত হতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাসানুজ্জামান কল্লোলকে বিস্তারিত জানান। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি ওই নম্বরে টাকা পাঠাতে নিষেধ করেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, একই পরিচয়ে দিয়ে শেরপুর জেলার উপ-পরিচালক ড. মোহিত কুমার দে ও ময়মনসিংহ জেলার উপ-পরিচালক ড. রেজাউল করিমকেও ফোন করে একইভাবে টাকা চাওয়া হয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ প্রতারণার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। পরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের কার্যালয়ের অফিস সহায়ক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে রাজধানীর ভাটারা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
ওই ঘটনার তদন্তের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম অভিযান চালিয়ে সোহেল ইসলাম রানা ও শাকিল ইসলামকে গ্রেফতার করে। এসময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ছয়টি মোবাইল ফোন ও ১১টি সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, এই প্রতারককে গ্রেফতারের পর দেখা গেছে, বিভিন্ন মন্ত্রী, এমপিদের সঙ্গে তার অনেক ছবি। তার প্রতারণার অন্যতম একটি কাজ হলো ছবি তোলা। এসব ছবি ব্যবহার করে প্রতারণা করে আসছিল। প্রতারক রানা সচিবের গলার কণ্ঠ নকল করে প্রতারণা করত।
তিনি আরও বলেন, মোবাইল ব্যবহার করে আমাদের সমাজে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা করা হয়। এ ধরনের প্রতারণার বিষয়ে যাচাই করতে চাইলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা সহযোগিতা করব।
তিনি আরও বলেন, প্রতারক রানা একেক সময় একেক মন্ত্রীর পিএস, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব পরিচয় দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি নিজের সামাজিক অবস্থান প্রকাশ ও প্রতারণার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলে সেগুলো প্রতারণার কাজে ব্যবহার করতেন। এছাড়াও প্রতারক রানা সংসদ সদস্যদের গাড়ীর ব্যবহৃত স্টিকার তার নিজের গাড়ীতে ব্যবহার করতেন। এজন্য তার বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে রাজধানীর সালে ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা হয়।
গ্রেফতার প্রতারক চক্রের প্রধান সোহেল ইসলাম রানার বিরুদ্ধে প্রতারণা, মাদক, মারামারি, নারী নির্যাতন, বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ বিভিন্ন অপরাধে ১১টি মামলা রয়েছে।
জেইউ/ওএফ