কাতার বিমানবন্দরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে খালেদা জিয়ার দেড় ঘণ্টা
উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের লন্ডনে পৌঁছেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। লন্ডন যাওয়ার আগে কাতারের হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দেড় ঘণ্টা যাত্রা বিরতি করে খালেদা জিয়াকে বহনকারী কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স। এ সময়ে বিমানবন্দরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে ছিলেন তিনি। অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে বিশেষ ব্যবস্থায় কাতারের রাষ্ট্রীয় চিকিৎসক ডা. ইব্রাহিম তার খোঁজ-খবর নেন।
দোহার একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যাওয়ার আগে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার(৭ জানুয়ারি) রাতে কাতারের হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দেড় ঘণ্টা যাত্রা বিরতি করেন খালেদা জিয়াকে বহনকারী কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স। খালেদা জিয়া বিমানবন্দরে পৌঁছালে কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলাম তাকে স্বাগত জানান। রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর খোঁজ-খবর নেন। এ সময়ে কাতারের পক্ষ থেকে দেশটির রাষ্ট্রীয় চিকিৎসক ডা. ইব্রাহিম বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর নেন।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, কাতারের হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দেড়ঘন্টা যাত্রা বিরতিতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের জন্য জ্বালানিসহ আনুসঙ্গিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এই দেড় ঘন্টা সময়ে বিমানবন্দরে বিশেষ এয়ার এম্বুলেন্সের ভেতরে ছিলেন খালেদা জিয়া। স্বাস্থ্যগত কারণে তিনি এয়ার এম্বুলেন্সের বাইরে আসেননি। এই সময়ে সংশ্লিষ্টরা বিশেষ এয়ার এম্বুলেন্সে গিয়েই খালেদা জিয়ার খোঁজ-খবর নেন।
কাতারে যাত্রা বিরতির সময়ে প্রবাসী বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে বিমানবন্দরে উপস্থিত হন; কিন্তু কাতারের আইন শৃ্ঙ্খলা অনুযায়ী তারা বিমানবন্দরের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি এবং খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারেনি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাওয়ার ক্ষেত্রে কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে বাংলাদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে বিশেষ সহযোগিতা করেছে দোহার বাংলাদেশ দূতাবাস। কাতারের আমিরের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বাংলাদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে কিছু প্রটোকল মানতে হয়েছে। ওই সময়ে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান প্রটোকল কর্মকর্তা দেশে ছিলেন না। তিনি তখন ব্রাজিল সফরে ছিলেন। সেজন্য কাতারের প্রধান প্রটোকল কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে যেতে হয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস দোহাকে। প্রধান প্রটোকল কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে খালেদা জিয়ার জন্য বিশেষ এয়ার এম্বুলেন্সের সময়-সূচিসহ যাবতীয় প্রস্তুতির কাজ করেছে দূতাবাস।
ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টা ৪৬ মিনিটে কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করেন খালেদা জিয়া। যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় বুধবার সকালে খালেদা জিয়াকে বহনকারী উড়োজাহাজটি লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে অবতরণ করে। খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে তার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান বিমানবন্দরে উপস্থিত হন। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার হজরত আলী খান বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।
খালেদা জিয়া বিমান থেকে নামার পরে সেখানে আবেগঘন এক আনন্দমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সাত বছর পর মাকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরেন পুত্র তারেক রহমান।
প্রসঙ্গত, বিএনপির চেয়ারপারসন সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই লন্ডন সফর করেছিলেন। এরপর খালেদা জিয়ার আর কোনো বিদেশ সফর হয়নি। এই সময়ের মধ্যে তার সঙ্গে ছেলে তারেক রহমানেরও সরাসরি দেখা হয়নি। মাকে কাছে পেয়ে উচ্ছ্বসিত তারেক রহমান নিজেই লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দর থেকে গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বিশেষায়িত হাসপাতাল দ্য লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ শারীরিক নানা অসুস্থতায় ভুগছেন।
২০১৮ সালে একটি দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যেতে হয় বাংলাদেশের তিনবারের সাবে প্রধানমন্ত্রীকে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দী হয়েছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত।
এনআই/এসএমডব্লিউ