ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের ৬ সদস্যের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নেওয়ার প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

অনিয়মের মাধ্যমে ১০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দের অভিযোগের বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য এসেছে জানিয়ে বুধবার (৮ জানুয়ারি) দুদকের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ বিষয়ে শিগগিরই ভালো কিছু তথ্য আমরা জানাতে পারবো।’

শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ দুদক থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত দেওয়ার কথা গত ২৭ ডিসেম্বর দুদক জানিয়েছিল।

অভিযোগে বলা হয়, রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের বিশেষ ক্ষমতাবলে শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিজের ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, বোনের ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপান্তির নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০০৩ নম্বর রোড থেকে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন।

এ অনুসন্ধানের অগ্রগতি সম্পর্কে আক্তার হোসেন বলেন, “এ বিষয়ে আমাদের অনেক অগ্রগতি আছে। অনুসন্ধান দল এ নিয়ে অনেক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। আমাদের হাতে পর্যাপ্ত তথ্য এসেছে। যেগুলোর মধ্যে বিশেষ করে রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পের ৬০ কাঠা বরাদ্দ সংক্রান্ত বিষয়ে শিগগিরই ভালো কিছু তথ্য আপনাদের (সাংবাদিক) জানাতে পারবো।”

অভিযোগটির বিষয়ে অনুসন্ধানে মামলা হওয়ার মতো কোনও তথ্য-প্রমাণ এসেছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে এখনই মন্তব্য করা ঠিক হবে না। অনুসন্ধান দল প্রতিবেদন দাখিল করলে আমরা জানাতে পারবো। আমরা যেসব তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি, সেগুলোতে স্পষ্টভাবেই ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।”

দেড় দশক দেশ শাসনের পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর থেকে সেখানেই রয়েছেন তিনি।

দুদক গত ২২ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ওঠা ৩০০ মিলিয়ন ডলার (৩০ হাজার কোটি টাকা) বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

দুদক এর আগে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করেছে। একই দলকে নতুন করে আসা ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগটি অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পে কয়েক বিলিয়ন ডলার দুর্নীতির অভিযোগকে ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। একইসঙ্গে এই ‘দুর্নীতি’র প্রমাণ দিতে দুদকের প্রতি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন তিনি।

জুলাই অভ্যুত্থানে হত্যা-নিপীড়নের ঘটনাগুলোর জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিচার করতে আন্দোলনকারীরা তাকে ফেরত আনার জোর দাবি জানিয়ে আসছে। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-জনতার হত্যা, গুম ও গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, হচ্ছে।

জুলাই-আগস্টে হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এবং গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম-খুনের অভিযোগে দুই মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরেয়ানা জারি করেছে। 

ইতোমধ্যে শেখ হাসিনার পাসপোর্ট বাতিল করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাকে ফেরত পাঠাতে বেশ কিছুদিন কথা-বার্তার পর আনুষ্ঠানিকভাবে দিল্লিতে চিঠি পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। নরেন্দ্র মোদি সরকার চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।

এদিকে, বুধবারই (৮ জানুয়ারি) ভারতের সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্থান টাইমস জানিয়েছে, নয়া দিল্লি সরকার ভারতে থাকার জন্য বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর ভিসার মেয়াদ সম্প্রতি বাড়িয়েছে। তবে শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ কতদিনের জন্য বাড়ানো হলো, সে বিষয়ে কিছু লেখা হয়নি হিন্দুস্থান টাইমসের ওই প্রতিবেদনে। ভারত সরকারের কোনো আনুষ্ঠানিক ভাষ্যও মেলেনি।

আরএম/এসএম