এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের মাধ্যমে হাতিরঝিলের পরিবেশ ধ্বংসের যে আয়োজন চলছে তা অবিলম্বে বন্ধ ও বাতিল করাসহ ৩ দফা দাবি জানিয়েছে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)।

বুধবার (৮ জানুয়ারি) সংবাদ মাধ্যমে ধরার সদস্য সচিব শরীফ জামিলের পাঠানো বিবৃতিতে এসব দাবি জানানো হয়।

অন্য দুটি দাবি হচ্ছে— পান্থকুঞ্জ পার্ক ধ্বংসকারী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‍্যাম্প নির্মাণ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে ও যারা এই ধ্বংসাত্মক প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং অবিলম্বে হাতিরঝিলসহ দেশের সব নদী, খাল ও প্রাকৃতিক জলাধার এবং পান্থকুঞ্জ পার্কসহ দেশের সব পার্ক ও উদ্যান দূষণ ও দখলমুক্ত করে যথাযথ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করতে হবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের কবলে থাকা বিপন্ন ঢাকাবাসীকে বাঁচাতে নগরের সবুজ ও প্রাণ-প্রকৃতি সংরক্ষণ ও উন্নয়নে সরকারের চরম উদাসীনতায় পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক নাগরিক সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। সম্প্রতি হাতিরঝিলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং পান্থকুঞ্জের র‍্যাম্প নির্মাণের উদ্যোগের ফলে হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জ পার্কের ধ্বংসের সম্মুখীন, যা নাগরিক অধিকার ও পরিবেশ সংরক্ষণের প্রতি স্পষ্ট অবহেলা। এ ধরনের প্রকল্প পরিবেশবান্ধব নগর উন্নয়ন ধারণার সম্পূর্ণ পরিপন্থি। তাই, ধরা অবিলম্বে হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাতিল করে হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জ পার্ক সুরক্ষার দাবি জানাচ্ছে।

আরও বলা হয়, হাতিরঝিল ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জলাধার ও নগরীর অন্যতম বিনোদন এলাকা। আমরা মনে করি, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কার্যক্রম এই এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ, জলজ জীববৈচিত্র্য এবং নান্দনিক সৌন্দর্যকে বিপন্ন করবে। হাতিরঝিল ঢাকার মধ্যাঞ্চলে বসবাসকারী অভিজাত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত নগরবাসীর জলাবদ্ধতা নিরসন, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও ভূগর্ভস্থ পানি পুনর্ভরণসহ বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে হাতিরঝিল সংরক্ষণে উচ্চ আদালত ইতিমধ্যে বিজিএমইএ ভবন উচ্ছেদেরও নির্দেশনা প্রদান করে। হাতির ঝিলে মেট্রোরেলের অবকাঠামো নির্মাণের ফলে বিস্তীর্ণ এলাকায় জলাবদ্ধতার ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বাড়বে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার বিঘ্নিত হলে নগরজীবনে চরম দুর্ভোগ এবং পরিবেশ দূষণ বৃদ্ধি পাবে। একইসঙ্গে, পয়ঃনিষ্কাশনের অপর্যাপ্ততা জনস্বাস্থ্য বিপর্যয় তৈরি করবে। সুতরাং হাতিরঝিলের সংরক্ষণ ও উন্নয়ন কেবল নান্দনিক সৌন্দর্যের বিষয় নয়; বরং এটি টেকসই নগর বিনির্মাণে প্রাকৃতিক জলাশয় সংরক্ষণের গুরুত্বকে সমুন্নত রাখবে।

অপরদিকে, পান্থপথ, কাওরানবাজার, কাঁঠালবাগান ও হাতিরপুল এলাকার একমাত্র সবুজ উদ্যান পান্থকুঞ্জ পার্ক। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‍্যাম্প নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে এই পার্কের প্রায় দুই হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এই ধ্বংসযজ্ঞ এলাকার বাসিন্দাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যসহ ঢাকার সামগ্রিক পরিবেশের ভারসাম্যকে চরমভাবে বিপন্ন করছে যা অত্র অঞ্চলের বায়ুদূষণ সমস্যাকে আরো তীব্রতর করে তুলবে। তাই, পান্থকুঞ্জ পার্কে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‍্যাম্প নির্মাণ বন্ধ করে পার্কটিকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত জরুরি।

এমএইচএন/এআইএস