অর্গানোগ্রাম বহির্ভূত ও নীতিমালা অনুসরণ না করে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে ঢাকা ওয়াসার পরিচালনা পর্ষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান ও আলোচিত সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বুধবার (৮ জানুয়ারি) ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে তাকসিম এ খানসহ বোর্ডের ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

আসামিরা হলেন- ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খান, পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান, পরিচালক (উন্নয়ন) মো. আবুল কাসেম ও পরিচালক (কারিগরি) একেএম সহিদ উদ্দিন, অতিরিক্ত সচিব (অবসর) সুধাংশু শেখর বিশ্বাস, এফসিএ ভাইস প্রেসিডেন্ট মু. মাহমুদ হোসেন, বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের প্রতিনিধি প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান, বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সভাপতি প্রকৌশলী একেএম হামিদ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত আসন-১২ এর তৎকালীন কাউন্সিলর আলোয়া সারোয়ার ডেইজি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. হাসিবুর রহমান মানিক।

এজাহার সূত্রে জানা যায়, ঢাকা ওয়াসার পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা পরস্পর যোগসাজশ করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অর্গানোগ্রাম বহির্ভূত ও ঢাকা ওয়াসায় বৈধ কোনো পদ সৃষ্টি না করে এবং নিয়োগ সংক্রান্ত নীতিমালা ও প্রচলিত বিধি-বিধান অনুসরণ না করে নিজেদের পছন্দের দুজন ব্যক্তিকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করেছে। ওয়াসার ২৫২তম বোর্ড সভায় তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়।

এ বোর্ডসভায় যারা চেয়ারম্যান ছিলেন তারা অবৈধ নিয়োগ দিয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এই কারণে মামলায় বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী তাকসিম এ খানসহ ৭ জন সদস্য ও চাকরি গ্রহণকারী দুজনসহ মোট ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়ে সুবিধাভোগী হিসেবে এক কোটি ৯৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।

প্রতিবেদন সূত্রে আরও জানা যায়, ২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে নিয়োগ পান প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। এরপর ধাপে ধাপে সময় বাড়িয়ে দীর্ঘদিন সেই পদে বহাল ছিলেন। অন্যদিকে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সহিদ উদ্দিনকে ২০২২ সালের ১৯ অক্টোবর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় দুদকে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ঢাকা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম সহিদ উদ্দিন মূলত ২০১৬ সালে প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে অবসরে যান। অবসরে যাওয়ার পরপরই ওয়াসার কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন। মাসে দেড় লাখ টাকা বেতনে এক বছর চার মাস কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করেন সহিদ উদ্দিন। এরপর ২০১৮ সালের এপ্রিলে তাকে দুই বছরের চুক্তিতে পরিচালক (কারিগরি) হিসেবে নিয়োগ দেন এমডি তাকসিম এ খান। অথচ ঢাকা ওয়াসার অর্গানোগ্রামে এমন কোনো পদ নেই। মন্ত্রণালয় কিংবা যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া হয় তাকে। এরপর ধাপে ধাপে পদোন্নতি দিয়ে ডিএমডি বানানো হয় সহিদ উদ্দিনকে।

একই ধরনের অভিযোগ ছিল পরিচালক (উন্নয়ন) মো. আবুল কাশেমের বিরুদ্ধেও। অর্গানোগ্রামের বাইরে অবৈধভাবে পদ সৃষ্টি করার অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে এমন নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করেছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। নিয়োগ পাওয়ার চার মাস পর মন্ত্রণালয় থেকে এমন নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি বেতন-ভাতা বন্ধ করে দাপ্তরিক সব কার্যক্রম থেকে বিরত রাখারও আদেশ দেওয়া হয়েছিল। ওই আদেশে ১৯৯৬ সালের পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন এবং পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (কর্মকর্তা/কর্মচারী) চাকরির প্রবিধানমালা-২০১০ এর সংশ্লিষ্ট ধারা পরিপন্থি ও বিধিসম্মত না হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।

অন্যদিকে বোর্ড সদস্য ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সাবেক কাউন্সিলর আলেয়া সারোয়ার ডেইজিকে ২০২২ সালের ৬ ডিসেম্বর জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তিনি বলেছিলেন, আমি যে অবস্থানে ছিলাম সেখান থেকে নিয়োগের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। আমি রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড সূত্রে ওয়াসার পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলাম। দায়িত্ব পালনকালে বরং আমি ওয়াসার পানির দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ করেছি। ওয়াসায় নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছিল কিনা, তা আমার জানা নেই।

আরএম/এমজে