অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে ৪৯ দিন পর ঢাকা ছাড়ল ট্রেন
টানা ৪৯ দিন পর সারাদেশে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা নিয়েই ঢাকা ছাড়ছে ট্রেনগুলো। তবে প্রথমদিন স্টেশনে যাত্রীর চাপ ছিল কম। প্ল্যাটফর্মগুলো ছিল অনেকটা ফাঁকা।
সোমবার (২৪ মে) সকাল সাড়ে ৮টায় কমলাপুর রেলস্টেশনে সরেজমিনে দেখা যায়, ট্রেন ছাড়লেও যাত্রীর চাপ কম। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও জিআরপি থানা পুলিশ সামাজিক দূরত্ব মেনে ট্রেনে ওঠার বিষয়টি নিশ্চিত করছে। ট্রেনে একটি করে আসন ছেড়ে দিয়ে বসতে দেখা গেছে যাত্রীদের।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন : অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে ট্রেন চলাচল শুরু, বাড়েনি ভাড়া
এ সময় স্টেশনে ৭ নং প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ছিল চট্টগ্রামগামী কর্ণফুলী কমিউটার। ট্রেনের ভেতরে যাত্রীরা আসন ফাঁকা রেখে বসেছেন। সকাল ৯টায় ট্রেনটি স্টেশন ছেড়ে যায়। তবে প্রথম দিন কর্ণফুলী কমিউটার নির্ধারিত সময়েই চেয়ে ১৫ মিনিট পরে ঢাকা ছেড়েছে। ট্রেনটি ছাড়ার কথা ছিল ৮টা ৪৫ মিনিটে।
এর আগে ভোরে ঝারিয়া ঝাঞ্জাইলের উদ্দেশে ছেড়ে যায় বলাকা কমিউটার। সকাল সাড়ে ৬টায় সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস এবং সকাল পৌনে ৮টায় চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেস ছেড়ে যায়।
আরও পড়ুন : ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ল বিধিনিষেধ
আরও পড়ুন : সোমবার থেকে চলছে বাস-ট্রেন-লঞ্চ
প্লাটফর্মে দায়িত্বরত কর্মীরা জানান, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে যাত্রীদের ওঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রথম দিন ট্রেন ছাড়ার খবর অনেকে জানেন না, তাই যাত্রীর চাপ কম। আসন অর্ধেক ফাঁকা রাখার কথা বলা থাকলেও যাত্রী কম থাকায় তার চেয়েও বেশি আসন ফাঁকা রয়েছে। এখন যেহেতু চালু হয়েছে আস্তে আস্তে যাত্রীর চাপ বেড়ে যাবে।
কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে রেল চলছে। ট্রেন স্যানিটাইজ করা হয়েছে। যাত্রীদের জীবানুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। সকাল থেকে ৪টা ট্রেন ছেড়ে গেছে। সবগুলোতেই স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে।
চট্টগ্রামের যাত্রী সোলেমান ঢাকা পোস্টকে জানান, জরুরি প্রয়োজনে চট্টগ্রাম যাব। শুনলাম ট্রেন চালু হয়েছে। প্ল্যাটফর্ম থেকে টিকিট কেটেছি। নিরাপত্তাব্যবস্থা দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন রোববার (২৩ মে) রেলভবনে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের জানান, ‘সরকারের সব নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে সোমবার থেকে আমরা রেল চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
বাড়েনি ভাড়া, টিকিট অনলাইনে
বর্তমানে ১০৮টি আন্তঃনগর ট্রেন রয়েছে। এর মধ্যে সারাদেশে ২৮ জোড়া আন্তঃনগর ও ৯ জোড়া লোকাল ট্রেন চলা শুরু হলো সোমবার (২৪ মে) থেকে। অর্ধেক আসন ফাঁকা থাকলেও ট্রেনে ভাড়া বাড়েনি। টিকিট কাটতে হবে অনলাইনে।
রেলওয়ে থেকে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়েছে, প্রতিটি ট্রেনের টিকিট অনলাইনে বিক্রয় করা হবে। আসনবিহীন কোনো টিকিট থাকবে না। তাই অযথা কাউন্টারে ভিড় করা থেকে বিরত থাকুন। টিকিট ছাড়া কোনো যাত্রী স্টেশনে প্রবেশ বা ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারবেন না। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া রেলভ্রমণ করবেন না। অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। মাস্ক ছাড়া কোনো যাত্রীতে স্টেশনে প্রবেশ বা ট্রেনে ভ্রমণ করতে দেওয়া হবে না। নির্দিষ্ট বিনে ময়লা ফেলুন। ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন।
যেসব শর্ত মেনে চড়তে হবে ট্রেনে
বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ (সোমবার) হতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৫০ শতাংশ আসন খালি রেখে মোট ২৮ জোড়া আন্তঃনগর ও ৯ জোড়া লোকাল/কমিউটার ট্রেন চলাচল শুরু করেছে। ট্রেনগুলোর সাপ্তাহিক অফ-ডে এবং নির্ধারিত স্টপেজ সমূহ বলবৎ থাকবে।
অর্ধেক আসন ফাঁকা থাকলেও কোনো প্রকার ভাড়া বৃদ্ধি করা হবে না, প্রতিটি ট্রেনের টিকিট অনলাইনে বিক্রয় করা হবে। নন-কম্পিউটারাইজড স্টেশনের টিকিট ওই স্টেশন কাউন্টার হতে ক্রয় করতে হবে।
আরও পড়ুন : গণপরিবহন চলাচলে মানতে হবে যে ৪ শর্ত
সকল অগ্রিম টিকিট যাত্রার পাঁচ দিন আগে কেনা যাবে। অনলাইনে কেনা টিকিট ফেরত দেওয়া যাবে না। কমিউটার ট্রেনের টিকিট যথারীতি নির্দিষ্ট বক্স কাউন্টার হতে দেওয়া হবে। আসনবিহীন কোনো টিকিট থাকবে না। তাই অযথা কাউন্টারে ভিড় করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
ট্রেনে ভ্রমণ করতে ইচ্ছুক যাত্রীদের নিজ নিজ টিকিট নিশ্চিত করেই কেবল ট্রেনে ভ্রমণের জন্য অনুরোধ করছে রেলওয়ে। টিকিটবিহীন কোনো যাত্রী স্টেশনে প্রবেশ বা ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারবেন না। ট্রেনে প্রবেশ ও বাহিরের জন্য ভিন্ন ভিন্ন দরজা ব্যবহার করতে হবে, বিশেষ প্রয়োজন ব্যতীত রেলভ্রমণ করা যাবে না।
অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। মাস্ক ছাড়া কোনো যাত্রীতে স্টেশনে প্রবেশ বা ট্রেনে ভ্রমণ করতে দেওয়া হবে না।
আজ থেকে যেসব ট্রেন চলবে
আজ থেকে চলবে সুবর্ণ এক্সপ্রেস, মহানগর গোধূলি/তূর্ণা, মহানগর প্রভাতী/তূর্ণা, তিস্তা এক্সপ্রেস, যমুনা এক্সপ্রেস, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস, উপকূল এক্সপ্রেস, পারাবত এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা/উপবন এক্সপ্রেস, মেঘনা এক্সপ্রেস, বিজয় এক্সপ্রেস, পাহাড়িকা/উদয়ন এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস, বনলতা এক্সপ্রেস, পদ্মা এক্সপ্রেস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস, চিত্রা এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস, নীলসাগর এক্সপ্রেস, রূপসা এক্সপ্রেস, মধুমতি এক্সপ্রেস, তিতুমীর এক্সপ্রেস, সাগরদাড়ী এক্সপ্রেস, ঢালারচর এক্সপ্রেস ও টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস।
৯ জোড়া মেইল ও কমিউটার ট্রেন চলবে। এগুলো হলো কর্ণফুলী কমিউটার, সাগরিকা কমিউটার, বলাকা কমিউটার, জামালপুর কমিউটার, ঢাকা কমিউটার, রকেট মেইল, মহানন্দা এক্সপ্রেস, পদ্মরাগ কমিউটার ও উত্তরা এক্সপ্রেস। স্বাভাবিক সময়ে দেশে যাত্রীবাহী ৫৬ জোড়া রেল চলে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরুতে গত বছরের ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় সরকার সব ধরনের যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয়। দুই মাসের বেশি সময় পর গত বছরের ৩১ মে আট জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা হয়। এরপর ওই বছর ৩ জুন আরও ১১ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন বাড়ানো হয়। পরে ধাপে ধাপে সব ধরনের ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এরপর করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে চলতি বছরের ৫ এপ্রিল থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ করে সরকার। টানা ৪৯ দিন বন্ধ থাকার পর আজ সোমবার (২৪ মে) থেকে ফের ট্রেন চলাচল শুরু হলো।
এসআই/এইচকে