ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিক্যাব) মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২৪ পেয়েছেন ঢাকা পোস্টের কূটনৈতিক প্রতিবেদক মো. নজরুল ইসলাম। তিনি অনলাইন বিভাগে এ পুরস্কার পেয়েছেন।

এছাড়া, প্রিন্ট বিভাগে দৈনিক মানবজমিনের কূটনৈতিক প্রতিবেদক মিজানুর রহমান এবং টেলিভিশন বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন মাছরাঙা টেলিভিশনের মাশরেক রাহাত। 

বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ডিক্যাব আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন। 

এ সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম, ডিক্যাব সভাপতি নুরুল ইসলাম হাসিব ও সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপু উপস্থিত ছিলেন।

এ বছর প্রথমবারের মতো ডিক্যাব মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড প্রবর্তিত হলো। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়/ মিশন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, বহুপাক্ষিকতা-জাতিসংঘ, অর্থনৈতিক কূটনীতি, জনকূটনীতি এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্রতিবেদনের জন্য এই পুরস্কার নির্ধারণ করেছে ডিক্যাব।

২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর ‘নির্বাচন ঘিরে কূটনৈতিক তৎপরতা/ সরকারের অসন্তোষ, সামনে ‘স্পেস’ নাও পেতে পারেন কূটনীতিকরা’- শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের জন্য নজরুল ইসলাম এ পুরস্কার অর্জন করেন।

অন্যদিকে, মিজানুর রহমান ‘ওয়াশিংটন দূতাবাসে মিলিয়ন ডলার চুরি, তদন্ত ফাইল গায়েব ‘এবং মাশরেক রাহাত ‘অনিয়মের দায়ে বন্ধ হয় আবার দুর্নীতির মাধ্যমে খুলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার‘ প্রতিবেদনের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন।

তিন সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ বিচারক প্যানেলে ছিলেন- ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল আলম চৌধুরী এবং ডিজিটালি রাইটের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাংবাদিক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রসচিব জসীম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের এমন এক সন্ধিক্ষণে আমরা আজ দাঁড়িয়ে রয়েছি, যেখানে ১৯৭১ সালের বিজয়ের সঙ্গে আমাদের সামনে রয়েছে জুলাই-আগস্ট ২০২৪ সময়ের যুগান্তকারী মুহূর্তগুলো। এটি বাংলাদেশের অস্তিত্বে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই অভ্যুত্থানে আমাদের তরুণ সমাজের রাজনৈতিক এবং দেশপ্রেমের চেতনা পূর্ণরূপে বিকশিত হয়েছে।  

জসীম উ‌দ্দিন বলেন, আমি গর্বের সঙ্গে বলতে চাই, ২৪-এর জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থান কেবল রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য ছিল না। এটি ছিল আমাদের জাতীয় চেতনার পুনর্জাগরণের এক গৌরবদীপ্ত মুহূর্ত। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অবিচার-এসব কিছুর বিরুদ্ধে এক সম্মিলিত প্রতিরোধ। 

তি‌নি ব‌লেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশকে স্থিতিশীল ও ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে বলিষ্ঠ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও ঐক্যের উপর ভিত্তি করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যৎ নির্মাণের পথ সুগম করতে সরকার কাজ করছে। 

পররাষ্ট্রসচিব ব‌লেন, বিশ্ব-দরবারে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব ও নতুন আঙ্গিকে দেশ গড়ার অঙ্গীকারের প্রেক্ষাপটে কূটনৈতিক মহল এবং গণমাধ্যমের মধ্যে আরও নিবিড় সহযোগিতা এখন সময়ের দাবি। আমরা দেখেছিলাম, গণমাধ্যম ও গণমাধ্যমকর্মীদের নির্ভীক প্রচারণা ও বস্তুনিষ্ঠ প্রচেষ্টার মাধ্যমে জুলাই-আগস্ট ২০২৪-এর প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের খবর জনগণের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল। গণমাধ্যমের এই প্রচেষ্টার মাধ্যমেই জনগণের ব্যাপক সমর্থন ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে।

জসীম উ‌দ্দিন ব‌লেন, গণমাধ্যম সবসময়ই সরকারের উদ্যোগ ও কূটনৈতিক কার্যক্রমকে জনগণের কাছে তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশেষ করে, কূটনীতির জটিল বিষয়গুলো সহজভাবে উপস্থাপন করা এবং সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করার কাজ তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করছেন। এসব প্রচেষ্টা শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও আমাদের উদ্যোগ সম্পর্কে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে। 

তি‌নি ব‌লেন, ডিক্যাবের অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ ও সময়োপযোগী প্রতিবেদন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজের পরিধি বিস্তৃত করতে এবং বিভিন্ন বিষয়কে নতুনভাবে ভাবতে সাহায্য করেছে। একইসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও ডিক্যাব একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। 

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বর্তমান ডিজিটাল যুগে, যেখানে তথ্য মুহূর্তেই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে, গুজব ও ভুল তথ্য প্রতিরোধে গণমাধ্যমকর্মীদের ভূমিকা অপরিহার্য। কূটনৈতিক সাংবাদিক হিসেবে আপনাদের তথ্য যাচাই, সূত্র পরীক্ষা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়ে সঠিকভাবে প্রতিবেদনে তুলে ধরতে হয়। আপনাদের সঠিক তথ্য উপস্থাপন ও ভারসাম্যপূর্ণ প্রতিবেদন গুজব ও ভুল তথ্য ছড়ানো প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ রাখতে পারে। অন্যথা হলে সেক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক প্রভাবিত বা অপ্রয়োজনীয় কূটনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে। 

অনুষ্ঠানে ডিক্যাব মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডে অংশগ্রহণকারী কূটনৈতিক বিটের প্রত্যেক প্রতিযোগীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

প্রসঙ্গত, জাতিসংঘ শিশু তহবিল—ইউনিসেফের মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড- ২০২৩ পেয়েছেন ঢাকা পোস্টের কূটনৈতিক প্রতিবেদক নজরুল ইসলাম।

এনআই/এমএসএ