প্রতীকী ছবি

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসাসেবা আরও সহজ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে চিকিৎসা ব্যয়ের জন্য চিকিৎসা পরবর্তীতে অনুদান দেওয়ার পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড ও সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের মধ্যে সমন্বয় করে অনুদানের পরিবর্তে সরাসরি তাৎক্ষণিক ব্যয়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ এ পরিকল্পনা ও রূপরেখা নিয়ে একটি ধারণাপত্র দিয়েছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ।

পরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মতিতে ধারণাপত্রটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর পাঠানো হয়। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ধারণাপত্রটি বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালকের কাছে পাঠিয়েছে।

ধারণাপত্রটি প্রাসঙ্গিক ও বাস্তবায়নযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন এ প্রস্তাবের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তারা বলছেন, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিকিৎসা সেবায় পর্যাপ্ত সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দাপ্তরিক কাজ আরও গতিশীল হবে।

তৈরি হবে ইউনিক হেলথ আইডি

আব্দুল হামিদের ওই ধারণাপত্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বর্তমান পেশেন্ট আইডিকে ইউনিক হেলথ আইডিতে রূপান্তর করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, এই ইউনিক আইডিতে একজন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর সেবা প্রাপ্তির লিমিট, কতবার সেবা নিয়েছেন, কী কী রোগের সেবা নিয়েছেন, কত টাকা চিকিৎসা অনুদান বাবদ পেয়েছেন, কী কী ওষুধ পেয়েছেন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য হালনাগাদ থাকবে। এ ছাড়া সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে ভিড়ের বিড়ম্বনা এড়াতে ই-টিকিট চালু করে চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার বিষয়েও প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, সরকারি বিদ্যমান স্বাস্থ্যসেবায় সরকার কর্তৃক বিনামূল্যে সরবরাহ করা ওষুধ ও রোগ নির্ণয়ে অত্যাধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকলে কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের ব্যবস্থাপনায় তাৎক্ষণিক ওষুধ সামগ্রীসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

জটিল রোগের চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে যে প্রস্তাব

জটিল ও ব্যয়বহুল রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে বর্তমানে চিকিৎসা পরবর্তী সময়ে বিল-ভাউচার সংগ্রহসহ আবেদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের চাকরি জীবনে এক বা একাধিকবার চিকিৎসা-পরবর্তী অনুদান প্রদান করা হয়। তবে নতুন প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গুরুতর অসুস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কর্মচারী হাসপাতালের নির্দিষ্ট বিভাগে চিকিৎসা দেওয়ার মতো উন্নত ব্যবস্থা না থাকলে কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের পূর্ণ তত্ত্বাবধানে যেকোনো সরকারি হাসপাতালে রেফার্ডসহ স্বাস্থ্যসেবায় সার্বিক প্রশাসনিক সহযোগিতা দেওয়া যেতে পারে।

ধারণাপত্র অনুযায়ী, যদি কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী বা তাদের পরিবারের কেউ অসুস্থ হন তাহলে তিনি সরাসরি সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন। এ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যে ব্যয় হবে সেটা কল্যাণ বোর্ড সরাসরি অনলাইন পেমেন্ট মেথডে পরিশোধ করতে পারবে। এক্ষেত্রে রোগীর কী কী চিকিৎসা হয়েছে, কী কী ওষুধ এবং সেবা পেয়েছেন সেগুলোর অনলাইন ডাটাবেজ থাকবে। যদি কোনো বিলে আপত্তি থাকে সেক্ষেত্রে পৃথক মনিটরিং সেল থাকতে পারে, যারা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম করে সিদ্ধান্ত নেবেন। বর্তমানে কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাধারণ রোগের জন্য ৪০ হাজার টাকা এবং জটিল ও ব্যয়বহুল রোগের জন্য ২ লাখ টাকা চিকিৎসা ব্যয় বাবদ দেওয়া হয়। অনুদানের এ অর্থই অনলাইন মেথডে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

দাফন-অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা

মৃত্যু-পরবর্তীতে আবেদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বর্তমানে যথাক্রমে ৩০ হাজার ও ১০ হাজার টাকা হারে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়। এক্ষেত্রেও লম্বা প্রক্রিয়া রয়েছে। এর পরিবর্তে মুমূর্ষু অবস্থায় রেফার্ড বা আকস্মিক মৃত্যুতে তাৎক্ষণিক পরিবহন সুবিধা এবং দাফন/অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় তাৎক্ষণিক অনুদান দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

ধারণাপত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. মো. হাতেম আলী বলেন, ধারণাপত্রটি বেশ প্রাসঙ্গিক। এটা বাস্তবায়ন করতে পারলে আরও সহজে সেবা পাওয়া সম্ভব হবে।

জানতে চাইলে ধারণাপত্র প্রণয়নকারী আব্দুল হামিদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেখেছি আর্থিক সংকটে অনেকে যথাযথ চিকিৎসা করতে পারেন না। সরকার আমাদেরকে অনুদান চিকিৎসার পরে দেয়, সেটা যদি অনলাইন মেথডে তাৎক্ষণিক দিত তাহলে এ সমস্যাটা কমে আসত। এক্ষেত্রে আমি সরকারের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।

নতুন প্রস্তাব অসুস্থতাজনিত আর্থিক ঝুঁকি থেকে সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে বিদ্যুৎ সচিব ফারজানা মমতাজ বলেন, চিকিৎসা পরবর্তী অনুদান গ্রহণে আগ্রহী কর্মচারী, বিশেষ করে অধিকাংশ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দাপ্তরিক কাজে অনেক ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেন। ফলে নিজ বা পরিবারের সদস্য কারো চিকিৎসাকালীন সংশ্লিষ্ট বিল ভাউচার সংগ্রহসহ অন্য দাপ্তরিক কার্যক্রম শেষ করে কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড থেকে চিকিৎসা পরবর্তী অনুদান গ্রহণ করা একেবারেই অসম্ভব। তাছাড়া অবসরপ্রাপ্তসহ অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীর আর্থিক ও অন্যান্য প্রশাসনিক সহযোগিতার অভাবে সময়মতো চিকিৎসাসেবা গ্রহণ সম্ভব হয়ে ওঠে না।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবায় আর্থিকসহ তাৎক্ষণিক অন্যান্য সহযোগিতা প্রদান করা হলে সবাই উপকৃত হবেন। তহবিলের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের কার্যক্রম বাস্তবায়ন হলে তা সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাসহ স্বাস্থ্য খাত সংস্কারে সহায়ক হতে পারে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে সেটি হবে মানবিক উদ্যোগ হিসেবে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

ফারজানা মমতাজ বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আব্দুল হামিদের তৈরি করা ধারণাপত্রটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মতিতে গত ৩১ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর পাঠানো হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ধারণাপত্রটি গত ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এখনো কাজ চলছে। জনপ্রশাসন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা পেলে এ বিষয়টি বাস্তবায়ন করা আরও সহজ হবে।

এমএম/এসএসএইচ