ফাইল ছবি

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিগত কয়েক মাসে মিয়ানমার থেকে ৬০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের আওতায় আনতে সরকারকে চাপ দিয়ে আসছে জাতিসংঘসহ পশ্চিমা দেশগুলো।

এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনের আওতায় আনতে ‘ধীরে চলো নীতি’ অবলম্বনে সামনে এগোচ্ছে ঢাকা।

তবে আগামীতে বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের আওতায় আসতে পারে ৬০ হাজার রোহিঙ্গা। আর এ নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টরা পর্যালোচনা করছেন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো থেকে আরও ফিডব্যাক আর রিভিউ করতে চায় সরকার।

ঢাকার একটি নির্ভরযোগ্য কূটনৈতিক সূত্র বলছে, মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের সভাপতিত্বে রোহিঙ্গাবিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ৬০ হাজার রোহিঙ্গার বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের আওতায় আনার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, এ বিষয়ে আরও পর্যালোচনা হবে। পরবর্তীতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যাবে সরকার।  

প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের কাজে সরকারকে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) সহযোগিতা করে থাকে।

বৈঠকে থাকা সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৬০ হাজার রোহিঙ্গার বায়োমেট্রিক নিবন্ধন ছাড়াও বৈঠকে মিয়ানমার পরিস্থিতি, সীমান্ত পরিস্থিতিসহ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা হয়েছে; এক্ষেত্রে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।

এদিকে মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান সংঘাতকে কেন্দ্র করে নতুন করে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢলের আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আপাতত রোহিঙ্গা ঢল থামানো গেছে। তবে ২০১৭ সালের মতো যদি নিবন্ধের সুযোগ পেত রোহিঙ্গারা তবে এবারের ঢল আগের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যেত। যদিও এখন বিচ্ছিন্নভাবে কিছু রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। রোহিঙ্গাদের প্রবেশ একেবারে আটকানো যাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ারমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির একের পর এক এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সময়ে দেড় থেকে প্রায় দুই লাখের মতো রোহিঙ্গার বাংলাদেশে প্রবেশ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আপাতত সেই বিপদ কেটে গেছে। তবে রাখাইনে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়িতে এখনও যে হারে আগুন দেওয়া হচ্ছে আগামীদিনে পরিস্থিতি কোনদিকে যাবে তা এখনও বলা মুশকিল।

অন্যদিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে দুর্নীতির কারণে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কথা বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সীমান্তে দুর্নীতির কারণে স্থল, জলসীমাসহ সীমান্তের নানা রুট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আটকানো খুব কঠিন হচ্ছে।

গত দুই মাসে রাখাইন থেকে বাংলাদেশে নতুন করে ৬০ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ নিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, আমাদের নীতিগতভাবে অবস্থান ছিল আর কোনো রোহিঙ্গাকে ঢুকতে দেব না। তবে পরিস্থিতি কখনো কখনো এমন দাঁড়ায় যে আমাদের কিছু আর করার থাকে না। সে রকম পরিস্থিতিতে আমরা ৬০ হাজার রোহিঙ্গাকে ঢুকতে দিয়েছি। আনুষ্ঠানিকভাবে যে তাদের ঢুকতে দিয়েছি, তাও নয়, তারা বিভিন্ন পথে ঢুকেছেন।

এদিকে নতুন করে রোহিঙ্গা ঢলের আশঙ্কার কথা বলছেন কেউ কেউ। তবে এই আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আমি মনে করি না, আর একটি ঢল আসবে; যদিও অনেকে আশঙ্কা করছেন। এই আশঙ্কা আমাদেরও আছে, তবে সেই ঢলকে আটকানোর ব্যবস্থা করতে হবে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়েই।

এদিকে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, গত ৮ ডিসেম্বর আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের মংডু শহর দখল করে। এ নিয়ে ১৭ টির মধ্যে ১৩ টি শহর আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাত চলছে। এ প্রেক্ষিতে নতুন করে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের বিষয়ে বিভিন্ন দিক থেকে আশঙ্কা রয়েছে।

নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবিসহ বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা এ বিষয়ে সর্বোচ্চ ও যথাযথ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলেও জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।  

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এছাড়া, প্রতি বছর নতুন করে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নিচ্ছে ক্যাম্পগুলোতে। সম্প্রতি নতুন করে আসা ৫০ হাজার রোহিঙ্গাসহ বর্তমানে ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন বাংলাদেশে।

এনআই/টিএম