অনলাইনে চাকরির প্রলোভনে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে চীনা নাগরিকসহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

সোমবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে উত্তরখান ও গুলশান এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে উত্তরখান থানা পুলিশ।এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎকৃত নগদ ৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, ৪ হাজার মার্কিন ডলার ও বেশ কিছু অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা, চারটি মোবাইল ফোন এবং কয়েকটি চেক বইয়ের পাতা উদ্ধার করা হয়। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন— মো. মোর্শেদ আলম (৩৮), জামাল উদ্দিন (৪৩) ও চীনা নাগরিক কুকি (৩৫)।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান। 

তিনি জানান, নাহিদুল ইসলাম (২৮) নামে এক যুবককে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন উপায়ে প্রলোভন দেখিয়ে ‘পলারস্টেপ সফটওয়্যার’ এর মাধ্যমে অনলাইনে চাকরির জন্য প্রস্তাব দেওয়া হতো। তিনি সরল বিশ্বাসে তাদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে কাজ শুরু করেন। কাজের শুরুতে নাহিদুল ইসলামকে ৮২০ টাকা কমিশন দেওয়া হয়।

পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন অফারের প্রলোভন দেখিয়ে তারা নাহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকের ‘আনাস এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি চলতি অ্যাকাউন্টে কয়েক দফায় ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৩৭৭ টাকা নেন। এরপর তাকে আর কোনও কমিশন না দিয়ে আবারও ৩ লাখ ১৯ হাজার ১৩০ টাকা চাইলে তার সন্দেহ হয়। তখন বাদী ডাচ বাংলা ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারেন একাউন্টটি উত্তরখানের বাবুর্চি বাড়ির আনাস এন্টারপ্রাইজের নামে। এরপর তথ্যাদিসহ তিনি বিষয়টি উত্তরখান থানায় অবহিত করেন।

ঘটনার সত্যতা যাচাই ও আইনগত সহায়তার জন্য উত্তরখান থানার একটি টিম ২৩ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ১টা ১০ মিনিটে আনাস এন্টারপ্রাইজের দোকানের মালিক মো. মোর্শেদ আলমকে আটক করে । 

তিনি আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের মোর্শেদ আলম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে এবং পুলিশকে জানায় জামাল উদ্দিন নামের একজনের সহযোগিতায় তার নিজ নামের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে গত ২২ ডিসেম্বর প্রায় ৩২ লাখ টাকা যোগ হয়েছে। যার মধ্যে ৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকা মোর্শেদের নিজের এবং অবশিষ্ট টাকা জামাল উদ্দিনের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়েছে।

তালেবুর রহমান বলেন, থানা পুলিশ তখন মো. মোর্শেদ আলমকে হেফাজতে নেয় এবং তার নিকট থেকে ৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, দুটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন এবং কিছু চেকের পাতা জব্দ করা করে। মোর্শেদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই রাতেই জামালকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তী সময়ে এ ঘটনায় জড়িত চীনা নাগরিক কুকিকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ জানায়, কুকি নামে এক চীনা নাগরিকের সঙ্গে এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে চীনে গিয়ে পরিচয় হয় জামালের। পরিচয়ের একপর্যায়ে কুকি জানায় কিছুদিন পরে সে বাংলাদেশে আসবে এবং তাকে একটি লাভজনক ব্যবসা দেবে। ১৫ থেকে ২০ দিন আগে উত্তরা রেস্টুরেন্টে কুকির সঙ্গে জামালের সাক্ষাৎ হয়। সেখানে কুকি জামালকে কয়েকটি বিজনেস অ্যাকাউন্ট নম্বর দিতে বলে। যে নম্বরে বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা আসবে এবং সে কুকির দেওয়ার নম্বরে ওই টাকা ট্রান্সফার করবে। এর বিনিময়ে জামালকে কমিশনের অফার দেন কুকি। কুকির প্রস্তাবে রাজি হয়ে জামাল মোর্শেদ আলমের আনাস এন্টারপ্রাইজের বিজনেস অ্যাকাউন্ট নম্বর দেয়। 

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে নিজে জড়িত থেকে তার সহযোগীদের সহায়তায় বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ করে প্রতারণামূলকভাবে অর্থ আত্মসাতের কথা গ্রেপ্তার কুকি স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা। 

এমএসি/এআইএস