বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার-বর্হিভূতকরণের চেষ্টা বন্ধ এবং শিক্ষা ক্যাডারের ১৫ দফা অবিলম্বে মেনে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার সমিতি। এ দাবি পূরণের জন্য আগামী আগামী ২৯ ডিসেম্বরে সময় বেঁধে দিয়েছে তারা। অন্যথায় আন্দোলনে নামবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন।

মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন সংগঠনের নেতারা। তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চাইলে আলোচনায় বসতে রাজি আছে জানিয়ে শিক্ষক সমিতির নেতারা বলেছেন, আমরাও চাই আলোচনার মাধ্যমে দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হোক। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান উদ্যোগ না দেখা হলে সমিতির নেতারা আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করবে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ তাজিব উদ্দিন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবের পর রাষ্ট্র পুনর্গঠনের জন্য সরকার যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে শিক্ষা ক্যাডারের ১৬ হাজার কর্মকর্তার পক্ষে আমরা তাকে স্বাগত জানাই। বিভিন্ন সেক্টরে সংস্কারের জন্য মোট ১১টি কমিশন গঠন করেছে। আমাদের সবারই প্রত্যাশা ছিল জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন উন্মুক্ত এ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে সর্বোচ্চ মেধা ও যোগ্যতা সম্পন্ন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সিভিল সার্ভিসের ২৬ ক্যাডারের মধ্যে বিরাজিত আন্ত ও অন্তঃক্যাডার বৈষম্যসমূহ চিহ্নিত করে সমাধান করবে। আশা করেছিলাম তারা এর মাধ্যমে রাষ্ট্রের সিভিল প্রশাসনকে অধিকতর কার্যকর, গতিশীল ও যুগোপযোগী করার জন্য  দিকনির্দেশনা দেবেন।

আমাদের বিশ্বাস ছিল প্রশাসন, পররাষ্ট্র, কৃষি, স্বাস্থ্য কিংবা পুলিশ ক্যাডারের সঙ্গে একই সময়ে একই সঙ্গে গঠিত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার এবারে হয়ত গত ৪০ বছর ধরে জমে থাকা সংকটসমূহ থেকে বের হয়ে আসার সুযোগ পাবে এবং শিক্ষা-উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের জন সম্পদকে মানবসম্পদে রূপান্তর করার মধ্য দিয়ে কাঙ্ক্ষিত নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের সুপারিশে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে ক্যাডার বহির্ভূত বাখার যে পরিকল্পনার কথা ব্যক্ত করেছেন, তা সিভিল সার্ভিসের অন্যতম বৃহৎ অংশ সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ১৬ হাজার কর্মকর্তাকে তীব্রভাবে আহত করেছে। এ আঘাত এতোটাই প্রকট যে, এটা শিক্ষা ক্যাডারের সব সদস্যকে অন্তহীন উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এটা রাষ্ট্রকে দীর্ঘ মেয়াদে অস্থিতিশীল করার মত একটি পদক্ষেপ বলে আমরা মনে করি।

বিসিএস জেনারেল এডুকেশন ক্যাডারের পক্ষ থেকে এ পরিকল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করার কথা জানিয়ে সংস্কারের নামে ‘আত্মঘাতী পরিকল্পনা’ থেকে দ্রুত সরে আসার জন্য সংশ্লিষ্ট কমিশনকে অনুরোধ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

শিক্ষক সমিতির ১৫ দফা দাবি:

১. শিক্ষাকে ক্যাডার বহির্ভূত করার পরিকল্পনা ও উদ্যোগ থেকে সরে আসার সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে।

২. কোটা-বৈষম্য তুলে দিয়ে মেধার ভিত্তিতে সরকারের উপসচিব পদে যোগদান নিশ্চিত করার জন্য তা শতভাগ উন্মুক্ত করে দিতে হবে এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সব ক্যাডারের কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে সমান সুযোগ দিতে হবে।

৩. মন্ত্রণালয়সহ ক্যাডার সংশ্লিষ্ট সব পদে স্ব স্ব ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন করতে হবে। অর্থাৎ কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

৪. শিক্ষা ক্যাডারসহ সব ক্যাডারের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

৫. বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার একটি পেশা-বিশেষায়িত ক্যাডার। তাই সাধারণ শিক্ষার অন্তর্গত সাধারণ ও মাদরাসা শিক্ষা ধারার সব শিক্ষা স্তর যেমন প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চশিক্ষা কিংবা মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে সব পদ থেকে প্রশাসন ক্যাডার, অপেশাদার ও অশিক্ষক কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করতে হবে।

৬. বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে ৬ স্তরের পদসোপান সৃষ্টি করতে হবে।

৭. বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যাপক পদকে ৩য় গ্রেডে এবং আনুপাতিক হারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ১ম, ২য় ও ৩য় গ্রেডের পদ সৃষ্টি করতে হবে।

৮. প্রতিটি শিক্ষা স্তরের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম তদারকির জন্য অঞ্চল, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদ সৃষ্টি ও দপ্তর স্থাপন করতে হবে। এছাড়া ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রশিক্ষণ একাডেমি ও গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

৯. কলেজ ও দপ্তর-অধিদপ্তরে বিদ্যমান প্যাটার্ন অনুযায়ী শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রাপ্য পদ সৃজন করতে হবে।

১০. নিয়মিত রুটিনে বছরে দুইবার সব টায়ারে একই সঙ্গে পদোন্নতি দিতে হবে। প্রভাষকদের পদোন্নতির শর্তপূরণ হলে যথা দ্রুত ৬ষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি দিতে হবে।

১১. শিক্ষাকে নন-ভেকেশন ডিপার্টমেন্ট ঘোষণা করতে হবে এবং অর্জিত ছুটি নিশ্চিত করতে হবে।

১২. অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষদের প্রাধিকারের ভিত্তিতে গাড়ি প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।

১৩. বদলি নীতিমালা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

১৪. ক্যাডারে পার্শ্ব প্রবেশ বন্ধ করতে হবে।

১৫. ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স এ শিক্ষা ক্যাডারের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. রুহুল কাদির, অধ্যাপক ড. খান মইনুদ্দিন আলম মাহমুদ সোহেল, অধ্যাপক সৈয়দ মইনুল হাসান, অধ্যাপক মুহাম্মদ ফাতিহুল কাদির প্রমুখ।

এনএম/এআইএস