বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি তৈরি পোশাক শিল্প। নারী কর্মীরা এই খাতে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন লাভ করেছে, তবুও তারা কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য, যৌন হয়রানিসহ কর্মক্ষেত্রের বাইরে বিশেষ করে যাতায়াতে নানাবিধ সহিংসতার সম্মুখীন হচ্ছেন। 

একটি নিরাপদ ও বৈষম্যমুক্ত কর্মস্থল নারী কর্মীদের সুরক্ষার জন্য অপরিহার্য, পাশাপাশি তৈরি পোশাক শিল্প কারখানায় যৌন হয়রানিসহ নানা সমস্যায় অভিযোগ গ্রহণ এবং নিষ্পত্তিকরণ ব্যবস্থা শক্তিশালী করা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া নারীদের কর্মস্থলে নিরাপদ যাতায়াতের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং মাতৃত্বকালীন ছুটির সময় মজুরি প্রদান আইনানুগভাবে নিশ্চিত করা প্রয়োজন। 

‘পোশাক শিল্পে নারী শ্রমিকের ন্যায্যতা প্রাপ্তি’ প্রকল্পের আওতায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতায় সজাগ কোয়ালিশন ‘লার্নিং টুগেদার : আ জেন্ডার জাস্টিস জার্নি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ প্রয়োজনীয়তার কথা উঠে আসে।

রোববার (২২ ডিসেম্বর) ঢাকার ব্র্যাক ইন-এ দিনব্যাপী এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গভর্নেন্স অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের প্রোগ্রাম ম্যানেজার লাইলা জাসমিন বানু, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেলিগেশন টু বাংলাদেশের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর সানজিদা সুলতানা, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য রুমানা খান, ক্রিস্টিয়ান এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর নুজহাত জাবিন উপস্থিত ছিলেন। 

এছাড়া, পোশাক শিল্পের নিয়োগকর্তা ও ক্রেতা (বায়ার), এনজিও ও আইএনজিও প্রতিনিধিরা, জাতিসংঘের কর্মকর্তা, শ্রমিক অধিকারভিত্তিক সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশন (সিএসও), বিজিএমইএ এবং বিএকেএমইএ প্রতিনিধি, ট্রেড ইউনিয়ন সদস্যরা এবং মিডিয়া এই প্রোগ্রামে উপস্থিত ছিলেন এবং বিষয়টি নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা ও উদ্বেগ শেয়ার করেছেন। 

অনুষ্ঠানে ইথিক্যাল ট্রেডিং লিমিটেডের প্রোগ্রাম ম্যানেজার তাপস বড়ুয়া বলেন, তৈরি পোশাক সেক্টরে কর্মীদের অভিযোগগুলো সাধারণত মৌখিকভাবে সমাধান করার প্রবণতা রয়েছে। ফ্যাক্টরিগুলো প্রায়ই অভিযোগগুলো ডকুমেন্ট করে না, কারণ তারা বিশ্বাস করেন যে এটি তাদের অডিট ফলের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সলিডারিটি সেন্টারের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার অনীন্দিতা ঘোষ বলেন, নারী কর্মীদের অটোমেশন সংক্রান্ত ট্রেনিং না দেওয়া এবং শিশু যত্নকেন্দ্রের অভাবে পোশাক শিল্প খাতে নারী শ্রমিক হ্রাস পাচ্ছে।

অ্যাকশন এইডের ডেপুটি ম্যানেজার মোহাম্মদ মারুফ হোসেন জানান, পোশাক শিল্পে মধ্যম স্তরের ম্যানেজমেন্ট পদে নারীর সংখ্যা অত্যন্ত কম। বেশিরভাগ নারী সেলাই মেশিন অপারেটর হিসেবে কর্মরত। তদুপরি, একজন নারী শ্রমিক ৩৫ বছরের বেশি বয়সী হলে, তাকে প্রায়ই ফ্যাক্টরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেলিগেশন টু বাংলাদেশের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর সানজিদা সুলতানা বলেন, ২০০৬ সালের শ্রম আইন সংশোধন করা হয়েছে এবং ২০০৯ সালের হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী কর্মস্থলে যৌন হয়রানির বিষয় গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জেন্ডার প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ কর্মস্থলে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা (জিবিভি) প্রতিরোধে একটি আইন খসড়া করেছে এবং জমা দিয়েছে। এছাড়া, আইএলও কর্মস্থলের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা গাইডলাইনে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা (জিবিভি) অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা কর্মস্থলে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা মোকাবিলায় নতুন সুযোগ সৃষ্টি করছে।

গভর্নেন্স অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের প্রোগ্রাম ম্যানেজার লাইলা জাসমিন বানু বলেন, বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়ন লিঙ্গ ন্যায়বিচার প্রচারের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি অব্যাহত রাখবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে প্রকল্পগুলির মাধ্যমে অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে ভবিষ্যতে প্রকল্পগুলোতে সেগুলো প্রয়োগ করা হবে।

ক্রিস্টিয়ান এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর নুজহাত জাবিন, যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে ফ্যাক্টরি এবং সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ জিবিভি মোকাবিলায় অপরিহার্য। লিঙ্গ-বৈচিত্র্যপূর্ণ সম্প্রদায়গুলোর অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা সমাধান করতে হবে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি তৈরি পোশাক শিল্প। রপ্তানি আয়ের ৮৩ শতাংশই অর্জিত হয় এই খাত থেকে। তৈরি পোশাক শিল্প খাত ২.৫৯ মিলিয়ন কর্মীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত করছে, যার মধ্যে ৫৭ শতাংশ নারী কর্মী। নারী কর্মীরা এই খাতে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন লাভ করেছে, তবুও তারা কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য, যৌন হয়রানিসহ কর্মক্ষেত্রের বাইরে বিশেষ করে যাতায়াতে নানাবিধ সহিংসতার সম্মুখীন হচ্ছেন। 

জেইউ/জেডএস