সীমান্ত এবং রাখাইনের সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারকে তাগিদ দিয়েছে বাংলাদেশ। নেপিডোকে ঢাকা বলেছে, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে নেওয়া নন অ্যাক্টরের (আরাকান আর্মি) সঙ্গে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ দরকষাকষি করতে পারে না।

সম্প্রতি থাইল্যান্ডে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারত, চীন ও লাওসের মধ্যে অনুষ্ঠিত অনানুষ্ঠানিক পরামর্শ সভায় ঢাকা বেইজিংকে এই বার্তা দিয়েছে। রোববার (২২ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

তৌহিদ হোসেন জানান, মিয়ানমারকে বলেছি, বর্ডার তোমাদের নিয়ন্ত্রণে নাই, অন্যের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। আমরা তো রাষ্ট্র হিসেবে নন অ্যাক্টর (আরাকান আর্মি) যারা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে, রাষ্ট্র হিসেবে তাদের সঙ্গে দরকষাকষি করতে পারি না। কাজেই তোমাদের দেখতে হবে কোন পদ্ধতিতে সীমান্ত এবং রাখাইনের সমস্যার সমাধান করবে।

থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিস সাঙ্গিয়াম্পংসারের সভাপতিত্বে বৈঠকে মিয়ানমারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উ থান সোয়ে। লাওসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেলুয়েমেস্কেই কোমাসিথ, ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি ও চীনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মা ঝাউজু নিজ নিজ দেশের নেতৃত্ব দেন। বাংলাদেশের নেতৃত্বে ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

সভায় আলোচনার বিষয়ে তৌহিদ হোসেন জানান, মূল বিষয় ছিল তিনটা। সীমান্ত, মাদক, অস্ত্র-মানব পাচার। আর মিয়ানমারের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও বর্তামান অবস্থা। ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিষয়ে একেবারে সবাই মিয়ানমারকে সমর্থন করতে চায়। তারা (মিয়ানমার) যদি সমস্যা মিটিয়ে ফেলে এবং তাদের জন্য একটা পথ ঠিক করুন। একজন অবশ্য বলেছেন, একটা ফেডারেল স্ট্রাকচার প্রত্যাশিত। কেউ বিশ্বাস করেন না যে, মিয়ানমারে আজকে তিন বছর বা পাঁচ বছর আগে যে অবস্থায় ছিল সেই অবস্থায় ফিরে যাবে।

‘যদি প্রত্যাশা করত এই আলোচনার দরকার ছিল না। সবাই বলেছে, আমরা মিয়ানমারকে সমর্থন করব, তারা যদি করতে চায় (ফেডারেল স্ট্রাকচার) আমরা হস্তক্ষেপ করব না। কিন্তু আমরা চাই সমাধান হোক’—জানান তৌহিদ হোসেন।

সীমান্ত ইস্যুতে আলোচনার বিষয়ে উপদেষ্টা জানান, সীমান্তের ব্যাপারে প্রধানত, উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ সীমান্ত নিয়ে বেশি কথা হয়েছে। এ ছাড়া, পশ্চিমের সীমান্ত; যেখানে আমাদের স্বার্থ আছে। স্ক্যাম সেন্টার কতগুলো গড়ে উঠেছে, যেটাতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন অপরাধ সংগঠিত হয়; সেই অপরাধ নিয়ে তারা খুব উদ্বিগ্ন । এ ছাড়া, মাদক তো আছেই। অপরাধ এবং বর্ডার ইস্যুতে বলা হয়েছে, মিয়ানমার যেন যথাযথ ব্যবস্থা নেয়।

গত দুই মাসে ৬০ হাজার রোহিঙ্গার বাংলাদেশে প্রবেশের তথ্য সভায় তুলে ধরেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, বাকি দেশগুলোর উদ্বেগ রোহিঙ্গা নিয়ে যতটা ছিল না তার চেয়ে বেশি ছিল অন্যান্য ইস্যুতে। ভবিষ্যতের অশনি সংকেত যেগুলো আছে সেগুলো নিয়ে ওয়াকিবহাল করেছি। আমি স্পষ্টভাবে বলেছি, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান না হলে আপনারা যে শান্তি বা স্থিতিশীলতার কথা চিন্তা করছেন; এটা কোনো দিন সম্ভব না। বর্ডারের দুই পাশে এবং ক্যাম্প অপরাধীরা আছে; এগুলো আমি তুলে ধরেছি।

রোহিঙ্গা অনুপ্রেবশ নিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, আমাদের নীতিগতভাবে অবস্থা ছিল, আর কোনো রোহিঙ্গাকে ঢুকতে দেব না। তবে পরিস্থিতি কখনো কখনো এমন দাঁড়ায়, যে আমাদের কিছু আর করার থাকে না। সে রকম পরিস্থিতিতে আমরা ৬০ হাজার রোহিঙ্গাকে ঢুকতে দিয়েছি। আনুষ্ঠানিক ভাবে যে ঢুকতে দিয়েছি, তা ও না। তারা বিভিন্ন পথে ঢুকেছেন।

তিনি বলেন, আর একটি কথা আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রচুর দুর্নীতি আছে সীমান্তে, এটা সত্য, এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। দুর্নীতির মাধ্যমে ঢুকছে। নৌকা নিয়ে ঢুকছে। তবে একটা সীমান্ত দিয়ে যে ঢুকছে, বিষয়টা এমন না, বিভিন্ন জায়গা দিয়ে ঢুকছে। এটাকে আটকানো খুব কঠিন হয়েছে।

নতুন করে রোহিঙ্গা ঢলের আশঙ্কার কথা বলছেন কেউ কেউ। এই আশঙ্কা উড়িয়ে দেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আমি মনে করি না, আর একটি ঢল আসবে; যদিও অনেকে আশঙ্কা করছেন। এই আশঙ্কা আমাদেরও আছে, তবে সেই ঢ্লকে আটকানোর ব্যবস্থা করতে হবে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়েই।

এনআই/এসএম