‘ডিএস পুলে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রেখে অন্যান্য ২৫টি ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হবে’— জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের এমন মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে প্রশাসন ক্যাডার ব্যতীত বাকি ২৫ ক্যাডারদের সংগঠন আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ৷

একইসঙ্গে এই ইস্যুতে ক্যাডার সার্ভিসের মধ্যে যেকোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে কমিশন সেজন্য দায়ী থাকবে হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি৷ এছাড়া আগামী ২১ ডিসেম্বর সংগঠনটি ২৫টি ক্যাডারের সভাপতি-সেক্রেটারিসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলেও জানায় তারা৷

বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সংগঠনটির সমন্বয়ক ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতিবাদ জানান তারা।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে সংগঠনটি বলছে, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছে যে, ডিএস পুলে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রেখে অন্যান্য ২৫টি ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হবে। এছাড়া শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে সিভিল সার্ভিস হতে আলাদা করার সুপারিশ করবে কমিশন। ২৫টি ক্যাডার নিয়ে গঠিত ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ কোনো রকম আলোচনা ছাড়া এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায় এবং জনসম্মুখে প্রচারিত এমন সংবাদ প্রত্যাহার করার আহ্বান করছে।

প্রতিবাদলিপিতে তারা বলেন, ৫ আগস্টের পরে, নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন তার মধ্যে অন্যতম। কারণ সরকারের সব নীতি নির্ধারণের কাজ সম্পন্ন করে সিভিল প্রশাসন। তাই বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত ও কার্যকর জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের আমূল পরিবর্তন দরকার। কমিশন গঠনের শুরু থেকেই ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ কমিশনের সঙ্গে থেকে আলোচনার মাধ্যমে জনবান্ধব সিভিল প্রশাসন গড়তে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে। কিন্তু জনপ্রশাসন সংস্কার কমিটি কোন আলোচনা ছাড়াই মনগড়া কতিপয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করায় ক্যাডার সার্ভিসের সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

প্রথমত, সিনিয়র সার্ভিস পুলে (বা ডিএস পুলে) ‘কোটা পদ্ধতি’ সম্পূর্ণরূপে মৌলিক অধিকার পরিপন্থি, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের সম্পূর্ণরূপে লঙ্ঘন এবং ৫ আগস্ট ২০২৪ এর চেতনার সঙ্গে সাংঘার্ষিক। তাই, পরিষদ কোটা প্রথা বাতিল করে উপসচিব পুলে সম্পূর্ণভাবে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের দাবি করছে। উল্লেখ্য সার্ভিস অ্যাক্ট ১৯৭৫ এ মেধার ভিত্তিতে ডিএস হতে তদূর্ধ্ব পদে নিয়োগের কথা থাকলেও বিভিন্ন অজুহাতে কোটা পদ্ধতি চালু রেখেছে প্রশাসন ক্যাডার এবং ২০১৮ এর নির্বাচনের পরে সার্ভিস অ্যাক্ট ১৯৭৫ রহিত করা হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, সিভিল সার্ভিসের সেবা নিশ্চিত করতে ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবি করে আসছে। অর্থাৎ প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে স্ব-স্ব ক্যাডারের কর্মকর্তারা পদায়িত হবেন। বর্তমানে প্রতিটি সেক্টরে নীতি নির্ধারণ ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করছেন অনভিজ্ঞ ও অপেশাদার প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা। এর ফলে একদিকে ক্যাডার সার্ভিসে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে, অন্যদিকে অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও বৈষম্য রাষ্ট্রের সব সেক্টরকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে। দেশের মানুষ প্রকৃত জনসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জনবান্ধব সরকারের পরিবর্তে দেশে বিভিন্ন সময়ে গড়ে উঠেছে জনবিচ্ছিন্ন স্বৈরাচারী সরকার। পরিষদের এই দাবিকে পাশ কাটিয়ে, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন একটি ভিন্ন উদ্দেশ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে সিভিল সার্ভিস হতে আলাদা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ মনে করে, কমিশনের এই সিদ্ধান্ত ক্যাডার সার্ভিসের মধ্যে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। এমন সিদ্ধান্ত পরিষদের দাবিকে আড়াল করতে জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করে পরিষদ। আমরা মনে করি, বৈষম্যহীন জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের কর্মকর্তার দ্বারা পরিচালনা এখন সময়ের দাবি।

এতে তারা আরও বলেন, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ আশা করছে, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন পরিষদের দাবিগুলো আমলে নিয়ে তাদের প্রস্তাবগুলো পুনর্বিবেচনা করবে। অন্যথায় ক্যাডার সার্ভিসের মধ্যে যেকোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে কমিশন সেজন্য দায়ী থাকবে।

উল্লেখ্য, আগামী ২১ ডিসেম্বর আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ ২৫ টি ক্যাডারের সভাপতি-সেক্রেটারিসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করবে। উক্ত বৈঠকের মতামতের ভিত্তিতে পরিষদ পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবে।

এমএম/এমএ