তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট করারোপের দাবি
তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট কর আরোপের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি), বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা) ও এইড ফাউন্ডেশন।
শনিবার (২২ মে) অনলাইনে সংগঠন ৩টির যৌথ এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসির প্রকল্প ব্যবস্থাপক হামিদুল ইসলাম হিল্লোল বলেন, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ ও এর ওপর কর আরোপ করা হয়। কিন্তু করারোপের পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতার কারণে এটি যেমন প্রত্যাশা মতো রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করতে পারে না, তেমনি তামাকের ব্যবহার কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় কমিয়ে আনতে পারে না।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, আমাদের দেশে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্যের ওপর শতাংশ হারে (অ্যাড ভেলোরেম পদ্ধতিতে) সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়। করারোপের এই পদ্ধতিটি জটিল ও ত্রুটিপূর্ণ। এই কারণে তামাকজাত দ্রব্যের দাম বাড়লেও তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা যেমন কাঙ্ক্ষিত হারে কমছে না, তেমনি সরকারের রাজস্ব আয়ও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে না। ফলে তামাক কোম্পানির মুনাফা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির নিজস্ব নথিতে দেখা যায়, ২০০৯ থেকে ২০১৮ এই ১০ বছরে তাদের উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণ কিন্তু একই সময়ে তাদের মুনাফা বেড়েছে পাঁচ গুণ। এই জটিল কর কাঠামোর কারণে সরকার কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তামাক কোম্পানির মুনাফা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তামাক কোম্পানির কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ থেকে যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের ওপর করারোপের কার্যকর পদ্ধতি হিসাবে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। বিশ্বে তামাক নিয়ন্ত্রণে সফল দেশগুলো ‘অ্যাড ভেলোরেম’ করারোপ পদ্ধতির পরিবর্তে ‘সুনির্দিষ্ট করারোপ’ পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকে। ‘সুনির্দিষ্ট করারোপ’ পদ্ধতিতে দ্রব্যের মূল্যের ওপর শতাংশ হারে করারোপের পরিবর্তে দ্রব্যের পরিমাণের ওপর সুনির্দিষ্ট পরিমাণ কর নির্ধারণ করা হয়। তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করা হলে- এই পদ্ধতিটি সহজে বাস্তবায়ন করা যাবে। করের পরিমাণ নির্ণয় ও কর আদায় করা সহজ হবে। সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। সব ধরনের তামাকজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে এবং তামাক কোম্পানির কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ কমবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী তামাক কর ব্যবস্থা বলবৎ রয়েছে বিশ্বের এমন ১৪৩টি দেশের মধ্যে ৭৫.৫ ভাগ (১০৮টি) দেশে তামাকজাত দ্রব্যের ওপর কোনো না কোনোভাবে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে করারোপ করা হয়। এর মধ্যে ৫০টি দেশে শুধুমাত্র সুনির্দিষ্ট কর এবং ৫৮টি দেশে মিশ্র (সুনির্দিষ্ট ও অ্যাডভেলোরেম এক্সাইজ) করারোপ ব্যবস্থা রয়েছে। শুধুমাত্র অ্যাডভেলোরেম পদ্ধতিতে করারোপ করা হয় ৩৫টি দেশে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং নেপালও সুনির্দিষ্ট করারোপ ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছে। ১৪৩ দেশের মধ্যে ১১৫টি দেশে কর ব্যবস্থা (কোনো মূল্য স্তর নেই) চালু রয়েছে।
হামিদুল ইসলাম হিল্লোল বলেন, প্রতি বছরের মতো এ বছরও আমরা আসন্ন বাজেট লক্ষ্য করে সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও কর প্রস্তাব সরকারের কাছে পেশ করেছি। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং তামাকের ব্যবহার কার্যকরভাবে কমিয়ে আনতে ‘২০২১-২২ অর্থ-বছর’ থেকে সব প্রকার তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট কর আরোপের প্রস্তাব করেছি আমরা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- এইড ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক শাগুফতা সুলতানা, পদ্মার নির্বাহী পরিচালক হাবিবুর রহমান, প্রভাষক রফিকুল আলম, হাফিজুর রহমান, মিলন রহমান, এসসিডিও নির্বাহী পরিচালক শুকান্তা দাস, পল্লী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ইলিয়াস হোসেন, কেএসকেএস সংস্থার পরিচালক আরিন্দম দেনাথ, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট প্রতিনিধি মিথুন বৈদ্য ও হেদায়েত হোসেন।
এমএইচএন/এইচকে