বর্তমানে সচিবের সংখ্যা ৮৫
চুক্তিতে কর্মরত ১৫, রয়েছেন জনপ্রশাসনের শীর্ষ দুই কর্তাও
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ‘বঞ্চিতদের’ প্রাধান্য

বর্তমানে ৮৫ সচিবের মধ্যে ১৫ জন চুক্তিতে কর্মরত রয়েছেন। এদের মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ দুই কর্মকর্তাও রয়েছেন। তারা ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে  ‘বঞ্চিত’ হিসেবে পরিচিত। 

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এর তিনদিন পর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়। দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রশাসনে ব্যাপক ‘শুদ্ধি অভিযান’ চালিয়েছে এই সরকার। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত সচিবদের নিয়োগ বাতিল করা হয়। কাউকে বাধ্যতামূলক অবসর এবং কাউকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়। তা ছাড়া এসব পদে নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হয়। তার মধ্যে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগও রয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গভর্নমেন্ট এমপ্লয়ি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (জিইএমএস) তথ্যমতে, শীর্ষ দুই কর্মকর্তা মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ ও প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া বর্তমানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে রয়েছেন। এ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমানও চুক্তিতে কর্মরত রয়েছেন। 

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত ১৩ আগস্ট বিসিএস-৮২ ব্যাচের কর্মকর্তা শেখ আব্দুর রশীদকে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান করা হয়। তার চারদিনের মাথায় ১৭ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে কর্মজীবন শেষ করা ‘বঞ্চিত’ এ কর্মকর্তাকে সচিব পদমর্যাদায় ফিরিয়ে এনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) বিভাগের সচিব করা হয়। এরপর ৮ অক্টোবর তাকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব করা হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মন্ত্রিসভা ও বিভিন্ন মন্ত্রিসভা কমিটির সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মূল দায়িত্ব হচ্ছে মন্ত্রিসভা ও এর কমিটিগুলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা এবং সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও সমন্বয়। এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ মাঠ প্রশাসন তথা বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের কাজের তদারকি করে থাকে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগের কাজের সমন্বয় সাধনও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অন্যতম দায়িত্ব।

সরকারের সামগ্রিক কার্যক্রম পর্যালোচনা ও সমন্বয়ের অন্যতম ফোরাম সচিব সভা। আর সভাপতি হচ্ছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তা ছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সচিব সিভিল প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন পদগুলোতে পদোন্নতির সুপারিশকারী সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সভাপতি।

বিসিএস-৮২ ব্যাচের আরেক কর্মকর্তা সিরাজ উদ্দিন মিয়াকে গত ২ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার মুখ্যসচিব হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০৯ সালে যুগ্মসচিব অবস্থায় ওএসডি হন এই কর্মকর্তা। পরে ২০১৬ সালে তিনি অবসরে যান। 

পরিচিত মহলে সিরাজ উদ্দিন সাথী নামে পরিচিত এই কর্মকর্তা আমলাতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধ, সমাজ বিবর্তন, ধর্ম চিন্তা, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে ৩২টি বই লিখেছেন। তার প্রথম বই ‘বেলতৈল গ্রামের জরিমন ও অন্যান্য’ সম্পাদনা করেছেন বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। আমলাতন্ত্র নিয়ে তার বইগুলো হলো—‘বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র’ ও ‘আমলাতন্ত্রের অন্দরমহলে বত্রিশ বছর’।

অন্যদিকে, গত ২৮ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব পদে ড. মো. মোখলেস উর রহমানকে নিয়োগ দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। তিনিও বিসিএস-৮২ ব্যাচের কর্মকর্তা। ড. মো. মোখলেস উর রহমানও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত।

এ ছাড়া, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক, জনবিভাগের সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ আকমল হোসেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ. এস. এম. সালেহ আহমেদ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. মো. নিয়ামত উল্লাহ ভূইয়া, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ, বিশ্ব ব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক (সচিব) বেগম শরিফা খান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী এবং ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) এ. জে. এম. সালাহউদ্দিন নাগরীও চুক্তিতে কর্মরত রয়েছেন। 

এসএইচআর/এমজে