১৭৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক ও তার পরিবার, সাবেক তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও তার স্ত্রী এবং সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পৃথক ছয়টি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এসব মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ অর্থের সন্দেহজনক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। যে কারণে তাদের বিরুদ্ধে মামলায় অর্থপাচারের অভিযোগও আনা হয়েছে।

মামলাগুলোর বিষয়ে যা যা জানা যায়—

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক

ক্ষমতার অপব্যবহার ও নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ৯০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, তার স্ত্রী, তিন ছেলেসহ পরিবারের ৬ সদস্যের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে দুদক। কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ সংস্থাটির উপপরিচালক মো. ফজলুল হক বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন।

এজাহার থেকে জানা যায়, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় ৬১ কোটি ৪২ লাখ ৫৬ হাজার টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া তিনি নিজের নামে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খুলে ৩৪টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ১৪৩ কোটি টাকা জমা এবং ১১৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে হস্তান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

জাহিদ মালেকের ছেলে রাহাত মালেকের নামে ১১ কোটি ৪৯ লাখ ৮৪ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন, স্ত্রী শাবানা মালেকের ৩ কোটি ১১ লাখ ৪৯ হাজার, ছেলের স্ত্রী সাকিবা মালেকের নামে ৯ কোটি ২৮ লাখ ৯৪ হাজার টাকা, মেয়ে সাদিয়া মালেকের নামে ১ কোটি ৮৬ লাখ ৯৮ হাজার টাকা এবং আরেক মেয়ে সিনথিয়া আকমলের নামে ২ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা মূল্যের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আরেকটি মামলা করা হয়েছে।

এ মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার, অপরাধলব্ধ কর্মকাণ্ডসহ প্রভাব খাটিয়ে পরিবারের সদস্যদের নামে অবৈধভাবে সম্পদ গড়তে সহায়তা করার জন্য জাহিদ মালেককেও আসামি করা হয়েছে।

সাবেক পাটমন্ত্রী মির্জা আজম

অবৈধ সম্পদ অর্জনের পৃথক অভিযোগে সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মির্জা আজম ও তার স্ত্রীর নামে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মির্জা আজম ও তার স্ত্রী দেওয়ান আলেয়ার নামে ৬৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুটি মামলা করেছে দুদক। এই দুই মামলার বাদী দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন।

এজাহার সূত্রে জানা যায়, মির্জা আজমের বিরুদ্ধে মামলায় ৩৯ কোটি ৭৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তার মেয়ে মির্জা আফিয়ার আজম অপির নামেও ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৮৩ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ থাকার কথা বলা হয়েছে মামলায়।

এ ছাড়া মির্জা আজমের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামে ৬০টি ব্যাংক হিসাবে বিভিন্ন সময় ৭২৫ কোটি টাকা জমা ও ৭২৪ কোটি টাকা উত্তোলনের তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার কথাও বলা হয়েছে মামলায়।

মির্জা আজমের স্ত্রী দেওয়ান আলেয়ার নামে ২৩ কোটি ৭৭ লাখ ৭১ হাজার টাকা মূল্যের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে আরেকটি মামলায়। এতে তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ২০টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ১৮১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা জমা ও উত্তোলন করে সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক

সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও তার স্ত্রীর নামে বাকি দুইটি মামলা করা হয়েছে।

এজাহার সূত্রে জানা যায়, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও তার স্ত্রী আরিফা জেসমিনের বিরুদ্ধে ১৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুটি মামলা করেছে দুদক। একটি মামলায় কেবল পলক এবং অপর মামলায় পলক ও তার স্ত্রীকে আসামি করা হয়েছে। দুদকের উপপরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও সহকারী পরিচালক খোরশেদ আলম বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন।

জুনাইদ আহমেদ পলকের নামে ৮ কোটি ৭৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং স্ত্রী আরিফা জেসমিনের নামে ৯ কোটি ৫৮ লাখ ৯৩ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুটি আলাদা মামলা করা হয়েছে। একটি মামলায় পলককে অপর মামলায় স্ত্রীসহ তাকে আসামি করা হয়েছে।

এসব মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৭(১), ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা ও অর্থপাচার প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সেই সরকারের সময় বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা তৎকালীন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সাবেক-বর্তমান আমলা, পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ প্রায় শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের ফাইল খোলা হয়।

দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহর নেতৃত্বাধীন কমিশন এসব অনুমোদন দেয়। তাদের মধ্যে কেবল সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও তার পরিবারের সদস্যের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা হয়েছিল।

গত ২৯ অক্টোবর সেই কমিশনের চেয়ারম্যান ও অপর দুই কমিশনার পদত্যাগ করলে আইনগত কারণে পরবর্তীতে নতুন করে কোনও অনুসন্ধান, মামলা দায়েরসহ দুদকের গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছিল না। বুধবার সাবেক সচিব মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের নেতৃত্বাধীন কমিশন যোগ দেওয়ায় দেড় মাস পর বৃহস্পতিবার থেকে পুরোপুরি সচল হয়েছে দুদক।

আরএম/এমজে