নির্যাতিত-চাকরিচ্যুতদের সংবাদ সম্মেলন
গুম-খুনে জড়িত সেনা-পুলিশ কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি
স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সময়ে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, গুম, সামরিক বাহিনীর মেধাবী কর্মকর্তা-সদস্যদের ‘একপেশে’ সামরিক আদালতের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করে বিনা-পেনশনে চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদ জানিয়েছেন তিন বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারা। একইসঙ্গে হাসিনার সহযোগী হয়ে গুম-খুনে জড়িত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মামুন খালেদ, লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাইফ, বেনজির-হারুনদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের আইনানুগ ব্যবস্থা না নেওয়া ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে জাস্টিস ফর কমরেডস আয়োজিত অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত ও বৈষম্যের শিকার সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা এই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর শাকিল নেওয়াজ বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকেই দেশ গঠনে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। তবে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ক্ষমতাবানদের স্বার্থে সশস্ত্রবাহিনীর নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্ব বারবারই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ফলে আমরা দেখেছি কীভাবে এতদিন সামরিক আইন ও নিয়মের অপব্যাবহার হয়েছে, পরিকল্পিত হত্যা ও গুম করা হয়েছে এবং বাহিনীর মেধাবী কর্মকর্তা ও অন্যান্য পদবীর সদস্যদের অযৌক্তিক ও একপেশেভাবে সামরিক আদালতে দোষী সাব্যস্ত করে বিনা পেনশনে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি সশস্ত্র বাহিনীর কর্মরত এবং অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের প্রতি গত ১৫ বছর ধরে সংঘটিত ধারাবাহিক অন্যায় আচরণ তুলে ধরতে। আমরা দেখেছি হাসিনা সরকারের শাসনামলে ডিজিএফআই, এনএসআই, এসবি এবং ডিবির মতো সংস্থাগুলোর মাধ্যমে নিবেদিতপ্রাণ সামরিক সদস্যদের প্রতি যে নির্যাতন, অপমান এবং দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে, তা আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য ক্ষতিকর।
শাকিল নেওয়াজ বলেন, দীর্ঘদিনের অন্যায় আচরণ ও দায়মুক্তির সংস্কৃতিতে আমরা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, অপহরণ, মিথ্যা মামলা এবং নির্যাতন দেখেছি। এসব ঘটনার দায়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মামুন খালেদ, লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাইফ, লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবেদিন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুজিব, মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, মেজর জেনারেল হামিদ, বেনজির আহমেদ এবং খন্দকার হারুনসহ বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ ব্যক্তির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
গুম-খুনের বর্ণনা দিয়ে সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা ২০০৯ সালের বিডিআর হত্যাকাণ্ড দেখেছি। কীভাবে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, আমরা দেখেছি। কিন্তু এখনও এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হয়নি। ফলে প্রকৃত দোষীরা বিচার থেকে মুক্ত। এছাড়া হাসিনা সরকারের সাজানো তাপস মামলায় মেধাবী অফিসারদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে তাদের অন্যায়ভাবে শান্তি দেওয়া হয়েছে। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে অপহরণ করে আয়না ঘরে আটকে রেখে নির্যাতন দেখেছি। সেখানে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনসহ কয়েকজন অফিসারকে বেআইনিভাবে আটক এবং দীর্ঘদিন নির্যাতন করা হয়েছে, সেটি আপনারা সবাই জানেন। এছাড়া মেজর সিনহা এবং মেজর জাহিদ নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এসব অপরাধের সঠিক বিচার আজও আমরা দেখিনি, উল্টো দেখছি মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের নায়ক প্রদীপ কুমারের স্ত্রীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা কর্নেল মো. শাহনুর রহমান, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মেহেদী হাসান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট ইমরান কাজলসহ আরও অনেকে।
টিআই/এসএম