পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, সম্পদের অভাবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বেশি বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু বৈষম্য কমাতে হলে সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন। বেক্সিমকোসহ বড় বড় কোম্পানিগুলোর ব্যালেন্স শিটে টাকা থাকলেও বাস্তবে দেশে টাকা নেই। সব টাকা দেশের বাইরে চলে গেছে। ব্যাংকে জনগণ টাকা রেখেছে। কিন্তু ব্যাংকের টাকা দেশে নেই।

শনিবার (৭ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আন্তর্জাতিক গবেষণা সম্মেলনের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, আমরা স্বল্পকালীন সময়ের জন্য এসেছি। তাই সবকিছু করা সম্ভব হবে না। আমরা এখন সম্পদের সংকটে আছি। ফলে বিভিন্ন খাতে কাঙ্ক্ষিত বরাদ্দ নিশ্চিত করতে পারছি না। কিন্তু আমাদের দেশে বৈষম্য দূর করতে হলে গরিব মানুষদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। তেমনি ধনীদের কাছ থেকে কর আদায় বাড়াতে কর নীতিমালায় সংস্কার আননেত হবে।

তিনি আরো বলেন, আমরা ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণ করব। কেউ বলছে এলডিসি থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। আবার কেউ বলছেন এখনই নয়। কিন্তু আমি একসময় জাতিসংঘের এই কমিটিতে ছিলাম বলে বিষয়টি জানি। আমরা যে অবস্থায় আছি এতে এলডিসি উত্তরণের বিকল্প নেই। তবে আমরা যেটি করতে পারি সেটি হলো, এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলেও উন্নত দেশগুলোকে বলতে পারি আমাদের সক্ষমতা এখনো বাড়েনি। তাই রপ্তানি ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুযোগ এবং জিএসপি প্ল্যাস সুবিধা যেন দেওয়া হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রে আমরা রানা প্লাজা ধ্বসের পর থেকেই জিএসপি সুবিধা পাচ্ছি না। তবে আমাদের শিল্পগুলোকে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। শুধু কম মজুরি, নিম্ন প্রযুক্তি ইত্যাদি দিয়ে উৎপাদন অব্যাহত রাখলে হবে না।

ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, সরকারের পক্ষে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট করার উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের মতো অবস্থা থেকে যাত্রা শুরু করে ভিয়েতনাম আজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তারা ৩০-৪০টি দেশের সঙ্গে ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট করেছে। আমাদের এখনো একটি দেশের সঙ্গেও এই অ্যাগ্রিমেন্ট হয়নি। আন্তর্জাতিকভাবে যুক্ত হতে না পারলে আমরা টেকসই উন্নয়ন করতে পারব না।

তিনি আরও বলেন, বৈষম্য দূর করতে হলে আমাদের মানবসম্পদকে দক্ষ করতে হবে। এ দেশের কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৮০ শতাংশ শিক্ষক নেই। আবার সাধারণ শিক্ষায় জেলায় জেলায় এমনকি উপজেলা পর্যায়েও বড় বড় অবকাঠামো হয়েছে।

স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। এখাতে বরাদ্দ দিলে সেটি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে। তবে বলা হয় বড় বড় হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বানাতে হবে, ডায়ালাইসিস মেশিন কিনতে হবে। কিন্তু দেখা যায়, দক্ষ অপারেটরের অভাবে এসব যন্ত্রপাতি থাকলেও তা পড়ে থাকে। এখানে এক ধরনের ডিলেমা আছে।

সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। এসময় গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের চিফ ইকোনমিস্ট ইন্ডারমিট এস গিল। এসময় তিনি ‘দ্য মিডল ইনকাম ট্রাপ’ শীর্ষক একটি গবেষণাপত্র তুলে ধরেন।

বিনায়ক সেন জানান, চার দিনে বিভিন্ন অধিবেশনে প্রায় ৩০টি গবেষণাপত্র এবং ১২টি পাবলিক লেকচার অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনের মধ্যদিয়ে বৈষম্যবিরোধী মনোভাব আরও বড় হিসেবে তৈরি হয়েছে। সেই স্পিরিটকে সামনে রেখে বৈষম্য দূর করতে সম্পদেও সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে।

ইন্ডারমিট এস গিল ‘দ্য মিডল ইনকাম ট্রাপ’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে বলেন, বিশ্বব্যাপী অনেক দেশ মধ্যম আয়ের ফাঁদে পড়ে আছে। প্রায় ৬০০ কোটি মানুষ আজ এই ফাঁদের শিকার। তারা এই সময়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। এই মধ্যম আয়ের ফাঁদ থেকে বাঁচতে হলে মেধা ও দক্ষতা বাড়াতে হবে এবং পুঁজির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। উচ্চ আয়ের দেশের তুলনায় একটি মধ্যম আয়ের দেশে মন্দার সম্ভাবনা তিনগুণ বেশি থাকে। মধ্যম আয়ের দেশে এমনিতেই পুঁজি কম থাকে। আবার যা থাকে সেটিরও ব্যবহার হয় কম। এই মধ্যম আয়ের ফাঁদ বৈষম্য তৈরি করে। মধ্যম আয়ের দেশগুলো নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার কম করে থাকে। অপরদিকে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বেশি হয়। ফলে এসব দেশে কার্য নিঃসরণের মাত্রাও বেশি থাকে। এসব দেশে গবেষণা কম হয়। ফলে অর্থনীতিতে সৃজনশীলতা কম থাকে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আরএইচটি/জেডএস