পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
সংখ্যালঘুদের নিয়ে অপপ্রচারে কূটনীতিকরা ‘বিভ্রান্ত’
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু ইস্যুতে অপপ্রচার নিয়ে ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছিল। তাদের বিভ্রান্তি দূর করার চেষ্টা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এখন কূটনীতিকরা সংখ্যালঘুদের বিষয়ে প্রকৃত অবস্থান তাদের নিজ নিজ সদর দপ্তরে জানাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অবস্থান নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফ শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, গত কিছুদিনের বিশেষ করে হিন্দু সমাজের পরিস্থিতি নিয়ে আমরা চেয়েছিলাম যাতে কোনো ভুল ধারণা সৃষ্টি না হয়। কারণ ভুল ধারণা সৃষ্টি করার মতো প্রচুর পরিবেশ আছে, বিশেষ করে গণমাধ্যমের একাংশ। কোন দেশের সেটা আমি বলছি না। তারা এটাকে যতটুকু পারা যায় একটা খারাপ পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে।
‘কাজেই আমাদের মনে হয়েছে, এখানে কূটনীতিক যারা আছেন তাদের প্রকৃত অবস্থার ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করার জন্য তাদের ঢেকেছি, প্রায় সবাই এসেছেন,’ যোগ করেন উপদেষ্টা।
তৌহিদ হোসেন বলেন, আমরা আমাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছি। আমি বলেছি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি হচ্ছে সমাজের অংশ, আর সরকার এটা বজায় রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। কোনো মানুষ তার ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক পরিচয়ের কারণে নিপীড়িত হবে না, এটা আমরা অবশ্যই নিশ্চিত করব। গত চার মাসে মালমসলা ছিল গন্ডগোল হওয়ার হতো, তবুও আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি সবার সহযোগিতায়।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, তবে দুএকটা ঘটনা ঘটেছে। আমি এ লাইনে কূটনীতিকদের ব্রিফ করেছি, তাদের বলেছি বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িকভাবে একটা খারাপ অবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছি, এরকম পরিস্থিতি সৃষ্টির অভ্যন্তরীণ এবং দেশের বাইরের প্রচেষ্টা আছে। সেই প্রচেষ্টা যেন সফল না হয় সেই চেষ্টা করছি।
উপদেষ্টা বলেন, আমরা আমাদের অবস্থান জানিয়েছি। তাদের বলেছি, এই বার্তা তাদের দেশে পৌঁছে দিতে। ব্রিফিং হয়েছে, এটা তারা তাদের হেড কোয়ার্টারকে জানাবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে কয়েকজনকে বলেছি, সদর দপ্তরে বলার জন্য। আমার মনে হয়েছে তারা (কূটনীতিকরা) কনফিউজড (বিভ্রান্ত)। এখন তারা বুঝতে পেরেছে, সহজে তারা এখন বলতে পারবে ঘটনা কি হচ্ছে।
ব্রিফিংয়ে চীন, জাপান, পাকিস্তানসহ বেশ কিছু মিশনের রাষ্ট্রদূত থাকলেও উপস্থিতি ছিলেন না ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। তবে ভারতীয় হাইকমিশনের প্রতিনিধি ছিলেন।
তৌহিদ হোসেন বলেন, ব্রিফিংয়ে আলাদা করে ভারত নিয়ে কিছু বলা হয়নি। তবে ভারতীয় গণমাধ্যমের কথা এসেছে। প্রধানত ভারতীয় গণমাধ্যমের অপপ্রচার। এর বাইরে ভারতীয় গণমাধ্যমের বক্তব্য ধরে অনেকে সেই লাইনে প্রচার করেছে। এ সরকার কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক কার্যকলাপ বরদাস্ত করবে না এবং সেটা হিন্দু বলে কথা নয়, মুসলিম বলে কথা নয়, সবার ক্ষেত্রে সমান।
তিনি বলেন, এ বার্তাটা আমরা সবার ক্ষেত্রে দিতে চাই। আইন তার গতিতে চলবে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হলে শক্ত হাতে দমন করা হবে। আমরা কাউকে দোষারোপ করার জন্য নয়, আমাদের অবস্থান শক্তভাবে জানানোর জন্য কূটনীতিকদের ঢেকেছি।
কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ে আলাদাভাবে উঠে এসেছে ইসকন পুরোহিত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গ। এ বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ইসকনের পুরোহিত চিন্ময়ের কথা ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করেছি। কি পরিস্থিতিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারপর কোর্ট তাকে জামিন দেয়নি; তার সমর্থদের অবস্থান। আমি বলেছি, এটা তারা (চিন্ময়ের সমর্থকরা) পেরেছে, কারণ তারা তাদের মত ব্যক্ত করার সুযোগ পেয়েছে। এ রকম ঘটনা তো আগে তারা করতে পারেনি।
প্রতিবাদ করতে কিছু ভারতীয় নাগরিকের বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টার কথা শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, এটাকে আমি একটা উসকানি হিসেবে দেখি। উসকানি দেওয়ার মতো লোকজন তো আছে, সেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি। এটাকে ততক্ষণ পর্যন্ত উসকানি হিসেবে দেখব যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা সীমান্ত অতিক্রম করে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়।
এনআই/এসএসএইচ