বাংলাদেশে দিল্লির স্বার্থ রাজনীতি বাস্তবায়নে ভারতের পরীক্ষিত মিত্র আওয়ামী লীগ। দলটির প্রত্যক্ষ সহায়তা ও সমর্থনেই ভারতের হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক উপকরণ ও প্রবণতা বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ সম্ভব হয়েছে। একইসঙ্গে দেশের প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান, বিদ্যায়তন, শিল্প-সাহিত্য অঙ্গন ও সুশীল সমাজের বড় অংশ ধারাবাহিকভাবে দিল্লির সাংস্কৃতিক মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেছে।

সোমবার (২ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টায় বাংলাদেশের জনগণ সংগঠনের আয়োজনে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা।

‘বাংলাদেশ রাষ্ট্র, জনগণের রাজনীতি ও আমাদের কর্মসূচি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির মুখপাত্র আবু মুস্তাফিজ বলেন, ১৯৭১ সালে একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হলেও বিগত ৫০ বছরের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় বাংলাদেশ একটি কার্যকর রাষ্ট্র হয়ে উঠতে পারেনি। শুরুতেই দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর আশা, আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন ছুড়ে ফেলে দিয়ে স্বাধীনতার সব সুফল আত্মসাৎ করেছে একটি মাত্র দল ও পরিবার। ঔপনিবেশিক সূত্রেই ভারতের সঙ্গে পূর্ববঙ্গের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সম্পর্ক একপাক্ষিক শোষণ, নিপীড়ন ও আগ্রাসনের। এজন্য দুই দফায় স্বাধীনতা লাভের পরও বঙ্গীয় বদ্বীপের ওপর দিল্লির আধিপত্যবাদী আগ্রাসন মোটেই স্তিমিত হয়নি।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক ইতিহাসে ফ্যাসিস্ট শাসনামলের পুরোটা জুড়ে ঘৃণিত স্বৈরাচার হাসিনার একমাত্র বিশ্বস্ত বন্ধু ছিল ভারত। এসময় ভারতকে অসংখ্য অন্যায্য চুক্তি, বাণিজ্য সুবিধাসহ সাংস্কৃতিক বিস্তার ও রাজনৈতিক ক্ষমতাচর্চার একচেটিয়া সুবিধা দিয়েছে হাসিনার সরকার। বিপরীতে বিনা ভোটে নির্বাচিত অবৈধ প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে ভারত ঘোষণা দিয়ে সমর্থন ও সহযোগিতা করে এসেছে। ফ্যাসিস্টের পক্ষে এবং আপামর জনতার বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়েছে ভারত।

৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের ঘটনা এশিয়ার রাজনৈতিক বাস্তবতায় ছাত্র-জনতার এ ঐতিহাসিক অর্জন উল্লেখ করে আবু মুস্তাফিজ বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার যৌথ প্রতিরোধের মুখে কঠোর গোপনীয়তায় শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করে পালাতে বাধ্য হয়েছে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ তো বটেই, সমগ্র এশিয়ার রাজনৈতিক বাস্তবতায় ছাত্র-জনতার এ ঐতিহাসিক অর্জন নিঃসন্দেহে নতুন এক মাইলফলক। স্বাধীন দেশ হিসেবে অভ্যুদয়ের পর বাংলাদেশ ভূখণ্ডে এর থেকে ব্যাপক ও বৃহত্তর কোনো রাজনৈতিক রূপান্তরের সম্ভাবনা কখনোই দেখা যায়নি।

তিনি অভিযোগ করেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও ফ্যাসিস্টের রেখে যাওয়া কাঠামো এখনো প্রায় অক্ষত রয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান স্বৈরাচারের সহযোগী ও সেবক হিসেবে কাজ করেছে, অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়েও তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি আগের মতোই প্রবল। সেজন্য গণকল্যাণমুখী কার্যকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

পরে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচন অবৈধ ঘোষণাসহ মোট ৭ দফা দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে কাউন্সিল অ্যাগেইনস্ট ইন জাস্টিসের (সিআইএ) মুখপাত্র শের মোহাম্মদ, লিড অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলের মুখপাত্র মাসুদ জাকারিয়া উপস্থিত ছিলেন।

আরএইচটি/এসএসএইচ