২০১৮ সালে টঙ্গীর তুরাগ তীরে তাবলীগ জামাতের দুই পক্ষের সংঘর্ষে মাওলানা সাদ অনুসারীদের একাধিক সাথী নিহত হয়। গুরুতর আহত এবং অঙ্গহানি হয় অনেকের। এ ঘটনায় মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছেন। একই সঙ্গে আজকে মাওলানা যোবায়েরপন্থিদের সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যাচার করে খুনিদের আড়াল করা অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন তারা।

রোববার (১ ডিসেম্বর) তাবলীগ জামাত বাংলাদেশের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের মিডিয়া সমন্বয়ক মোহাম্মদ সায়েম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, টঙ্গীর ময়দানে তাবলীগ ও মাদরাসার ছাত্রদের সাথে সংঘর্ষে মাওলানা যোবায়েরপন্থিদের নৃশংস হামলায় দুজন ‘মূলধারার’ সাথীকে হত্যা করার পরেও গণমাধ্যমের সামনে তাদের মিথ্যাচার দেখে আমরা হতবাক ও বিস্মৃত। আজ জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সত্যকে আড়াল করে তারা যে মিথ্যাচার করেছেন। এর প্রতিবাদ জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

সেদিন (১ ডিসেম্বর ২০১৮) টঙ্গীর ময়দানে মাদরাসার ছাত্রদের নৃশংস হামলায় ঘটনাস্থলে মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারী একজন তাবলিগের সাথী মারা যান। পরবর্তীতে ১ মাস পর হাসপাতালে আহত আরেকজনে ‘মূলধারার’ তাবলিগের সাথীর মৃত্যু হয়। তাদের একজন সাথী ও মাদরাসার ছাত্র নিহত না হওয়ার পরেও মূলধারার তাবলিগের সাথীদের নিহত হওয়ার ঘটনাকে নিজেদের লোকবলে চালিয়ে দেওয়ার লাশের এই রাজনীতি কতটা ঘৃণীত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু মাওলানা যোবায়েরপন্থিরা বরাবরের মতোই এই দুজনকে তাদের লোক বলে চালিয়ে খুনিদের আড়াল করতে হীন ষড়যন্ত্র করে আসছে। এছাড়া মাঠে ময়দানে ও ওয়াজ মাহফিলে অসংখ্য ছাত্র হত্যার কল্পকাহিনি এরা বলে মানুষকে উসকে দিচ্ছে। সেদিন মাঠের পাশের টয়লেটের ছাদ থেকে তাবলিগের সাথীদের ওপর মাদ্রাসার ছাত্ররা ইট পাটকেল দিয়ে বৃষ্টির মতো হামলা চালালে হাজারো তাবলিগের সাথী গুরুতর আহত ও দুজন মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারী নিহিত হন।

এতে আরও বলা হয়েছে, পরের দিন ৩ ডিসেম্বর ২০১৮ তাবলিগের মূলধারার মুরুব্বিরা ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে নিহত ঈসমাইল মণ্ডলের পরিচয় তুলে ধরেন। সে সময় শহীদ ঈসমাইল মণ্ডলের ছেলে জাহিদ আহমদ মণ্ডলও সেখানে উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের সামনে নিজের পিতার হত্যাকারীদের বিচার চেয়েছেন। ঈসমাঈল মণ্ডল ও শহীদ শামছুদ্দীন বেলাল নিজামুদ্দিনের অনুসারী ‘মূলধারার’ তাবলিগের সাথী ছিলেন। নিহত ঈসমাইল মণ্ডলের ছেলে জাহিদ হাসান বাদী হয়ে মাওলানা যোবায়েরপন্থীদের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন। যা এখন আদালতে বিচারাধীন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, মূল খুনিদের আড়াল করতেই মূলত ৬ বছর ধরে গণমাধ্যম, ওয়াজ মাহফিলে, মিম্বরে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার করে আসছে একটি চিহ্নিত মহল। সম্প্রতি তাদের ফ্যাসিবাদী চরিত্রকে আড়াল করতে রাজধানীতে ভুয়া পোস্টার সাটানো ও পুরো সংবাদ সম্মেলনে চরম ও জঘন্য মিথ্যাচার ও বানোয়াট নির্লজ্জ কাহিনি বর্ণনা করে নিজেদের জুলুম নির্যাতন হত্যা আড়াল করার হীন চেষ্টা করছে। প্রতি বছরই ৫ দিনের জোড় ও ইজতেমার আগে তারা এসব মিথ্যাচারের পথ বেছে নিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। আমরা প্রশাসন ও মিডিয়াকে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করে সত্য প্রকাশের অনুরোধ করছি।

এতে বলা হয়েছে, আপনারা অনেকটা অবগত আছেন, বিগত পতিত সরকারের সহযোগিতায় সারা দেশে ৫ জন ‘মূলধারার’ সাথীদের মাওলানা যোবায়েরপন্থিরা নির্মমভাবে হত্যা করে। মসজিদে মসজিদে মাদরাসার ছাত্রদের ব্যবহার করে জুলুম নির্যাতন করে, তাবলিগের ইজতেমা, টঙ্গীর ময়দান, কাকরাল মারকাজ ও বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে বিগত সরকারের দোসর হয়ে বৈষম্য করে একপক্ষকে কোণঠাসা করে এবং তাবলিগি বিশ্ব আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভীকে বাংলাদেশে আসতে বাধা প্রদান করে। ফ্যাসিবাদ সরকারের দীর্ঘ ৬ বছর একচেটিয়া বৈষম্যে শিকার হয়ে তাবলিগের ‘মূলধারার’ মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা বিগত ইজতেমার ময়দানে সংবাদ সম্মেলন করে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খুনি আসাদুজ্জামান খান কামালের পদত্যাগ দাবি করেন।

আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ‘মূলধারার’ দাওয়াতের কাজকে পুরোপুরি ধ্বংস করতে সেদিন পহেলা ডিসেম্বর মূলত তাদের চূড়ান্ত মহড়া ছিল। এর পূর্বে হেফাজতে ইসলাম এর সরাসরি হস্তক্ষেপে বেশ কয়েকবার কাকরাইলের মুরুব্বিদের মারধর ও প্রকাশ্যে তাবলিগের ‘মূলধারার’ সকল কার্যক্রম গায়ের জোরে বাধা দেওয়া হয়। হেফাজতের বয়োবৃদ্ধ আমির মরহুম আহমদ শফী সাহেবকে মাঠে নামিয়ে সারা দেশে ও ওজাহাতি সম্মেলন করে বিগত সরকারের মদদে বিভিন্ন জেলা ইজতেমাসহ দফায় দফায় একপক্ষের সকল কাজ নিষিদ্ধ করণ ও বাঁধা দেয়া হয়। দেশের সকল মসজিদের মাদরাসার ছাত্রদের ব্যবহার করে ‘মূলধারার’ সাথীদের ওপর আক্রমণ  ও সর্বশেষ টঙ্গির ময়দানে মূলধারার পূর্ব ঘোষিত ৫ দিনের জোড় টেকাতে মাদরাসার ছাত্রদের মাঠে নামানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সেদিন তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সহযোগিতায় সরকার টঙ্গীর ময়দান বুঝে নিলেও একমাস পরেই স্থানীয় সাবেক এমপি জাহিদ হাসান রাসেলের প্রত্যক্ষ মদদে মাওলানা যোবায়েরপন্থিদের এককভাবে টঙ্গীর ময়দান বুঝিয়ে দেয়া হয়। তাদের ফ্যাসিবাদী আচরণ ও সকল জুলুম নির্যাতনের বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি আমরা। পাশাপাশি এই চিহ্নিত মহলের বিষয়ে সরকার ও প্রশাসনকে সজাগ থাকার অনুরোধ করে আমরা স্মরণ করে দিতে চাই, আজকের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকা মধুপুরের পীর মাওলানা আব্দুল হামিদ গত ৫নভেম্বর বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের ঠিক ৩মাসের মাথায় মহাসমাবেশ করে সরকার পতনের হুমকি দিয়েছিল। মিথ্যাচার করে জাতিকে বিভ্রান্ত করে ১লা ডিসেম্বর এর খুনিদের আড়াল করার পাশাপাশি কেন তারা বারবার দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে তা খতিয়ে দেখার জোর দাবি জানাচ্ছি।

আপনারা জানেন, আমরা বিশ্বের দুই জন শীর্ষ আলেম পাকিস্তানের মুফতি তকী উসমানী ও ভারতের দেওবন্দের মাওলানা আরশাদ মাদানীর মধ্যস্থতায় তাদের সব মিথ্যাচারের ওপর সংবাদ সম্মেলন করে ওপেন চ্যালেঞ্জ করেছি। ধর্মীয় সংঘাত উসকে না দিয়ে বসে আলোচনা ও মীমাংসা প্রস্তাব করে দেশের পরিবেশকে শান্ত ও স্থিতিশীল রাখার অনুরোধ সত্ত্বেও তারা বরাবরের মতোই মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে পরিবেশকে অস্থিতিশীল কৃপণ করতে চায় তা খতিয়ে দেখতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।

এমএম/এমএ