ফাইল ছবি

তাবলীগ জামাতের দুই পক্ষের চলমান দ্বন্দ্বের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় মাওলানা যোবায়েরপন্থিদের খোলা চিঠি দিয়েছে মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা। চিঠিতে টঙ্গীতে যোবায়েরপন্থিদের চলমান পুরানা সাথীদের পাঁচ দিনের জোড় যাতে সফল এবং কবুল হয় সে সম্পর্কে দুআ করেছেন।

একইসাথে আগামী ২০ থেকে ২৪ ডিসেম্বর মাওলানা সাদ অনুসারীদের পাঁচ দিনের জোড় সম্পর্কে দুআ এবং নির্ধারিত তারিখের আগেই টঙ্গী ময়দান খালি করার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।

শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) মাওলানা জুবায়েরকে উদ্দেশ্যে দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের পক্ষে এ খোলা চিঠি লেখেন তাবলীগ জামাত বাংলাদেশের আহলে শুরা সৈয়দ ওয়াসিফ ইসলাম।

যোবায়েরপন্থিদের উদ্দেশ্যে লেখা ওই খোলা চিঠিতে সৈয়দ ওয়াসিফ বলেন—

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। মুহতারাম মাওলানা ক্বারী যোবায়ের সাহেব ও দাওয়াতে তাবলীগের সকল আহবাব। আশা করি আল্লাহপাকের ফজলে খায়ের ও আফিয়াতের সাথে থেকে দাওয়াতের উঁচু মেহনতে মশগুল ও মসরুফ আছেন। আল্লাহ জাল্লাশানুহু আপনাদের হায়াতে ও আমলে বরকত দান করুন। আমিন।

আমরা জেনে খুব খুশি হয়েছি যে, আপনারা টঙ্গীর ময়দানে পুরানা সাথীদের পাঁচ দিনের জোড় করছেন। দুআ করি: আল্লাহপাক আপনাদের এই জমা হওয়াকে ভরপুর কবুল ফরমান এবং সারা দুনিয়ার জন্য হিদায়াতের জরিয়া বানিয়ে দিন। আল্লাহপাকের কাছে চাওয়া: এই জোড় থেকে বেশি থেকে বেশি দেশে- চার মাস ও উলামায়েকেরামের সাল; এবং বিদেশে মাস্তুরাতসহ দুই মাস ও পুরুষের পাঁচ মাস; উলামায়েকেরামের দ্বিতীয় সাল ও তৃতীয় সালের জন্য জামাত বের হবার মেহনত করার জন্য তিনি সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমরা আরও দুআ করছি: আল্লাহপাক বিশ্ব ইজতিমার কামিয়াবির জন্য প্রস্তুতিমূলক এই জোড়কে হার কিসিমের ফিতনা থেকে হেফাজত ফরমান।

চিঠিতে সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম আরও লিখেছেন, আমার প্রিয় আহবাববৃন্দ। যে মোবারক মেহনতে দয়া করে আল্লাহপাক আমাদেরকে লাগিয়েছেন: তা শত্রুকে আপন করার, দূরকে কাছে টানার এবং সবার জন্য উদারচিত্তে হিতকামনা ও হিদায়াত প্রার্থনার মেহনত। আমরা বিশ্বাস করি, এই মেহনতের কল্যাণে ইনশা-আল্লাহ পুরা জ্বীন ও ইনসানের হিদায়াত নিশ্চিত হবে এবং সারা দুনিয়ার মধ্যে মুবারক দ্বীন জিন্দা হবে। আর তা তখনই হবে, যখন সবাই সবাইকে মাফ করে দিয়ে ও সবাইকে সাথে নিয়ে চলতে পারবো এবং সারা দুনিয়ার দ্বীনহারা উম্মতের হিদায়াতের জন্য জান ও মালের বাজি লাগিয়ে দূর থেকে দূর লম্বা সময় নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় বের হবো।

হজরতজী মাওলানা ইলিয়াস সাহেব (রহ.) ফরমাতেন, আল্লাহপাকের রাস্তায় বের হতে দেরি করার অর্থ আল্লাহর আজাবকে ডেকে নিয়ে আসা। তাই, আমরা আশা করছি: আপনাদের এই জোড় থেকে খুব নগদ জামাত দ্বীনের মেহনতের নিয়ে খুরুজের জন্য তৈরি হবে ইনশা-আল্লাহ।

চিঠিতে তিনি আরও লিখেছেন, প্রিয় ক্বারী সাহেব এবং আমার সাথী ভাইয়েরা! আপনারা এটা জেনে নিশ্চয়ই খুশি হবেন যে, আগামী ২০-২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে আমাদের পুরানা সাথীদের জোড় টঙ্গীর ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে ইনশা-আল্লাহ। আল্লাহপাকের জাতের প্রতি উম্মিদ রেখে আশা করছি যে, এতে লক্ষাধিক সাথী উপস্থিত হবেন।

ইতোমধ্যে প্রশাসনকে আমরা লিখিতভাবে আমাদের জোড়ের তারিখ ও ময়দানে এই জোড় অনুষ্ঠানের বিষয়ে জানিয়েছি। আমরা আশা করছি, আপনারাও আমাদের জোড়ের কামিয়াবির জন্য মন খুলে দুআ করবেন। হাকিকত হলো: সারা দুনিয়ার সব বাতিল দল ও ব্যক্তি মুসলমানদের বিভক্ত ও টুকরা টুকরা দেখতে চায়। দাওয়াতের মোবারক এই মেহনতই একমাত্র মেহনত- যার কারণে উম্মত আবারও “এক ও নেক” হওয়ার পথ খুঁজে পাবে। তাই আমরা চাই, আপনারা ইত্তিহাদের পথে আসুন। আমাদের মধ্যে চিন্তার ভিন্নতা বা ইখতিলাফ থাকতেই পারে! কিন্তু তা সত্ত্বেও আসুন, “এক কালিমার বুনিয়াদে ভাই ভাই” হয়ে দাওয়াতের এই মুবারক ও আজিমুশশান মেহনতে জীবনের বাকি সময়টুকু কাটিয়ে দেই!

এতে আরও লিখেছেন, প্রিয় মাওলানা যোবায়ের সাহেব ও সাথী ভাইয়েরা আমার! আপনাদের বিনীত আহ্বান করছি, আমাদের জোড়ের নির্ধারিত তারিখের আগেই দয়া করে আপনারা টঙ্গী ময়দান খালি করে দেবেন। মাদ্রাসার তোলাবা বা তাবলীগের সাথীদের অনাহুত ও অহেতুক উপস্থিতির কারণে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেই বিষয়ে আপনারা পরিপূর্ণ সতর্ক থাকবেন এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। আপনাদের প্রতি আমাদের এই আন্তরিক ও উদাত্ত আহ্বান থাকলো। আল্লাহপাকের দয়া ও করুণার কথা স্মরণ করে উম্মিদ রাখি, নিশ্চয়ই তিনি খায়ের ও ভালাইয়ের মুয়ামালা করবেন এবং কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটবে না ইনশা-আল্লাহ।

আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে সবধরণের ফিতনা-ফাসাদ এবং বিশৃঙ্খলা থেকে হেফাজত ফরমান। আমিন।

এর আগে গত ১২ নভেম্বর তাবলীগ জামাতের চলমান দ্বন্দ্ব নিরসনে ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা মাওলানা মোহাম্মদ যোবায়েরকে খোলা চিঠি দিয়েছিলেন। সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের পক্ষে সেই চিঠিটিও সৈয়দ ওয়াসিফ ইসলাম লিখেছিলেন।

চিঠিতে ওয়াসিফ ইসলাম পূর্বে একত্রে তাবলীগের কাজ করার স্মৃতিচারণ করেন। একইসাথে ২০১৮ সালে তাবলীগের বিভক্তির পর কাকরাইল মসজিদে দুই পক্ষের অবস্থান নিয়ে এতদিন যে নিয়ম চলে আসছে সে নিয়মেই বাহিরে না যাওয়ার কথা জানান।

এমএম/টিএম