সম্প্রীতির বন্ধন মানববন্ধনে বক্তারা
গয়েশ্বর-নিপুণ-বিশ্বজিৎরাও হিন্দু, কিন্তু কোনো দেশের বিবৃতি আসেনি
বাংলাদেশে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ ধর্মের মানুষজন যে সম্প্রীতির মাধ্যমে দীর্ঘকাল ধরে একসঙ্গে বসবাস করে আসছে তা সারা বিশ্বের কাছে একটি মডেল হিসেবে পরিচিত। তবে পতিত স্বৈরাচার এবং পার্শ্ববর্তী দেশের ইন্ধনে সেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভেঙে ফেলার পাঁয়তারা চলছে বলে জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনেরা। তাদের দাবি, বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নিপুণ এবং বিশ্বজিৎরা হিন্দু হলেও তাদের রক্তাক্ত করার সময় পার্শ্ববর্তী কোনো দেশ থেকে কোনো বিবৃতি বা প্রতিবাদ আসেনি।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর জাতীয় শহীদ মিনারে আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি পরিষদ আয়োজিত সম্প্রীতির বন্ধন শীর্ষক মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
তারা বলেন, বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে মাটিতে ফেলে লাথি মারা হয়েছিল, রক্তাক্ত করা হয়েছিল। বিএনপি নেত্রী নিপুণ রায়কে বহুবার রক্তাক্ত করা হয়েছিল, বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। এছাড়াও সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে দেশ ছাড়া করা হয়েছিল, তখন কোনো সনাতনী ব্যক্তি-সংগঠন বা অন্য কোনো দেশ প্রতিবাদ জানায়নি। অথচ দেশদ্রোহী এক হিন্দু নেতাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দেশকে অশান্ত করার অপতৎপরতা শুরু করেছে।
আরও পড়ুন
বক্তারা বলেন, কিছু হিন্দু নেতা নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে ভারতের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য দেশকে অশান্ত করার অপতৎপরতা করছে। তাদের মনে রাখতে হবে, এটা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আর স্বাধীন বাংলাদেশে ভারতের অ্যাজেন্ডা কখনোই বাস্তবায়ন হবে না।
ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট বলেন, বিগত ১৫ বছর ৭ মাসের দুঃশাসনের অবসান ঘটিয়ে যখন একটি সুন্দর আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয়ে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তখন থেকেই পরাজিত ও পালিয়ে যাওয়া শক্তি বাংলাদেশকে বিভিন্নভাবে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা করছে। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা দেখছি হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে হাজার বছরের সম্প্রতি বিনষ্ট করার পাঁয়তারা চলছে।
তিনি বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসনের সময়ে দেখেছি বিএনপির অন্যতম স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে রক্তাক্ত করা হয়েছে। তখন আমরা পার্শ্ববর্তী দেশের কোনো বিবৃতি দেখিনি। আমরা দেখেছি গয়েশ্বরকে সেদিন আওয়ামী লীগের পেটোয়া বাহিনী এবং পুলিশ রাজপথে লাঠিপেটা করেছে, সেদিনও আমরা পার্শ্ববর্তী দেশের কোনো প্রতিবাদ দেখিনি। এমনকি সনাতন ধর্মাবলম্বী বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে হত্যা করেছিল সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীরা। সেদিনও আমরা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিবাদ দেখিনি। এমনকি পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও কোনো নিন্দা বা বিবৃতি দেখিনি। অথচ আজ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার জন্য পার্শ্ববর্তী একটি দেশ এবং জাতীয়ভাবে পরাজিত-পালিয়ে যাওয়া শক্তি বাংলাদেশের সম্প্রতিকে নষ্ট করতে চায়।
মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, আমাদের ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করতে একটি কুচক্রী মহল সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়াচ্ছে। কারো উসকানিতে প্ররোচিত হয়ে আমরা যেন সংঘাতে না জড়িয়ে পড়ি, সেদিকে সচেষ্ট থাকতে হবে। বাংলাদেশ যেমন সবার, তেমনি দেশের আইনও সবার জন্য সমান। দেশ প্রেমের মাধ্যমে এ দেশকে এগিয়ে নিতে হবে সবাইকে।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এ মজিদের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক জামালুন্নেছা, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য দেবাশীষ রায় কুন্ডু, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার বসুসহ আরও অনেকে।
টিআই/এসএসএইচ