‘নির্বাচনের পর পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের কেউ খোঁজ নেয় না’
রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের সময় আসে। এরপর পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আর কোনো খোঁজ-খবর নেয় না কেউ। নির্বাচন কেন্দ্র করে হামলা-ভাঙচুর হয়। দলিতরা দাবি নিয়ে রাস্তায় আসে না, কারণ নির্দিষ্ট দলের ট্যাগ লাগানো হতে পারে। এ অবস্থায় সবার সঙ্গে একসাথে বাঁচতে চান আদিবাসী ও পিছিয়ে পড়া মানুষরা।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) জাতীয় সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, দলিত ও প্রতিবন্ধীসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করে নির্বাচন সংস্কার কমিশন।
বিজ্ঞাপন
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার জন্য সংরক্ষিত আসন করলে প্রতিনিধি নিশ্চিত হয়। ভোটের আগে ও পরে সংখ্যালঘুরা ভুক্তভোগী হয়। এই আতঙ্ক বন্ধ করার ব্যবস্থা করতে হবে। রাজনৈতিক জায়গায় আদিবাসীদের অংশগ্রহণের সুযোগও করতে হবে। সারা দেশে দলিত হরিজন আছে এক কোটির মতো। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় দলিত প্রতিনিধি নেই। এ ছাড়া, রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের সময় আসে তারপরও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর খোঁজ-খবর নেয় না। নির্বাচন কেন্দ্র করে হামলা-ভাঙচুর হয়। দলিতরা দাবি নিয়ে রাস্তায় আসে না, কারণ নির্দিষ্ট দলের ট্যাগ লাগানো হতে পারে। আমরা সবার সঙ্গে বাঁচতে চাই।
বক্তারা আরও বলেন, কিছু জায়গায় ভোট দিতে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও বল প্রয়োগ করা হয়। এর আগে ভোট না দেওয়ার অভিযোগে ভোটের পর নারীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কোনো বিচার হয়নি। আদিবাসীদের স্বচ্ছ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করতে হবে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আদিবাসী প্রতিনিধি রাখতে হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আদিবাসীদের ট্যাগ দেয়। স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাদ দিতে হবে। এছাড়া আদিবাসীদের এনআইডি কার্ডে অসংখ্য ভুল এবং এই ভুলগুলো সংশোধনের ব্যবস্থা করতে হবে।
আদিবাসী প্রতিনিধি সন্ধ্যা মালো বলেন, আদিবাসী বললে সমতল আর পাহাড়ি একদিকে হয়ে যায়। আমি মনে করি যদি পিছিয়ে থাকা গোষ্ঠী থেকে শুরু করা যায় তাহলে ভালো হবে। সবাইকে সামনে আনা যাবে।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিমল চন্দ্র রাজোয়াড় বলেন, নির্বাচনের সময় অভিযোগ দিলে নির্বাচন শেষ হলেও সমাধান হয় না। তাই অভিযোগের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত করে প্রার্থিতা বাতিল করা উচিত। তাহলে কালো টাকা, পেশি শক্তির প্রভাব রোধ করা যাবে। আমরা যাকেই ভোট দিই না কেন, আমরা যদি নিজের পছন্দের মানুষকে ভোট দিই তাহলে যে নির্বাচিত হতে পারে না, তার কাছ থেকে মার খেতেই হবে। আমরা এমনিতেই ভীত। বৃটিশবিরোধী থেকে এই পর্যন্ত আদিবাসীরা কী পরিমাণ নির্যাতিত হয়েছে তা সবাই জানে। আমরা পিছিয়ে আছি কারণ আমাদের কোনো প্রতিনিধি নেই।
অনগ্রসর সমাজ উন্নয়ন সংস্থার (আসুস) নির্বাহী পরিচালক রাজকুমার শাও বলেন, আদিবাসীদের ভোটার তালিকা নতুনভাবে করতে হবে। এজন্য আদিবাসীদের সেই কার্যক্রমে যুক্ত করতে হবে, না হলে সঠিক হবে না। আমরা যখনই কথা বলি, তখন বিভিন্ন ট্যাগ লাগানো হয়। কখনো আওয়ামী লীগ, কখনো বিএনপি কখনো বা জামায়াত বলে ট্যাগ লাগিয়ে মারা হয়। এজন্য আমরা টিকতে পারছি না। এটা আমাদের দুর্বলতা। আমরা শিক্ষিতও নয় সেভাবে, তাই সেভাবে আমরা সাজিয়ে-গুছিয়ে কথাও বলতে পারি না। স্থানীয় নির্বাচনের সময় দলীয় প্রতীক দেওয়া হয়, তাহলে একজন আদিবাসী কি করে নির্বাচিত হবে? নরমাল প্রতীক হতে হবে। নির্দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচন হতে হবে। কেননা, প্রার্থী ভালো না হলেও দলের কারণে ভোট পেয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সমতলের আদিবাসীদের সমস্যা আলাদা। তাই এখানেও মন্ত্রণালয়ের ডিভিশন হতে পারে। ভূমি কমিশন করা যেতে পারে। ডিগ্রি পাস ছাড়া নির্বাচন না করতে পারলে আমাদের আদিবাসীরাও তো পারবে না। কারণ, তারা তো পড়াশোনায় পিছিয়ে। তবে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে রাখা যেতে পারে।
এসআর/এমজে