তিন মাস আগেও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে ‘সোনালি অধ্যায়’ হিসেবে বিবেচনা করত ভারত। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদায় এবং দেশটিতে তার আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে ঢাকা-দিল্লির সম্পর্ক অস্বস্তি আর টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে নিকট প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকে নিতে চায় ঢাকা। তারই পদক্ষেপ হিসেবে দিল্লিতে পরবর্তী দূত নির্বাচনে বেশ চুলচেরা বিশ্লেষণ করে পদক্ষেপ নিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বহুপাক্ষিক অর্থনীতি ও কানেক্টিভিটিতে ভালো দখল থাকা চৌকস পেশাদার কূটনীতিক রিয়াজ হামিদুল্লাহকে নির্বাচন করেছে সরকার। চলতি সপ্তাহে ঢাকার পক্ষ থেকে দিল্লিতে পরবর্তী হাইকমিশনার হিসেবে রিয়াজ হামিদুল্লাহর এগ্রিমো পাঠানো হয়েছে। রীতি অনুযায়ী হোস্ট কান্ট্রির (দিল্লির) সবুজ সংকেত পেলেই দূত পাঠাতে পারবে ঢাকা।

ঢাকা-দিল্লির কূটনীতিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, চলতি সপ্তাহে দিল্লির বাংলাদেশ মিশনের পরবর্তী হাইকমিশনার হিসেবে রিয়াজ হামিদুল্লাহর এগ্রিমো ভারতে পাঠিয়েছে সরকার।

এদিকে, ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস নাউ মঙ্গলবার এক প্রতিবেদন দিল্লির বাংলাদেশ মিশনের পরবর্তী হাইকমিশনার হিসেবে রিয়াজ হামিদুল্লাহর কথা জানিয়েছে।

অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব রিয়াজ হামিদুল্লাহ বর্তমানে সদর দপ্তরে আঞ্চলিক সংস্থা ও বহুপাক্ষিক অর্থনৈতিক বিষয়াবলির দেখভাল করছেন। শেখ হাসিনা সরকার পতনের আগে ১৫তম ব্যাচের মেধা তালিকায় প্রথম পেশাদার এই কূটনীতিককে নেদারল্যান্ডস থেকে ঢাকায় ফেরানো হয়। তিনি তখন নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছিলেন। রিয়াজের ঢাকায় ফেরায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে থাকা সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের উত্তরসূরি হওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়। তবে সরকার পরিবর্তনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার গঠনের পর সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমনকে চুক্তিভিত্তিক দায়িত্বের পুরোটা সময় শেষ করার আগেই বিদায় নিতে হয়। আর চীনে থাকা বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিনকে মাসুদ বিন মোমেনের স্থলাভিষিক্ত করা হয়। তিনি বর্তমানে পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন।

পেশাদার কূটনীতিক রিয়াজ হামিদুল্লাহর চাকরির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৯ সালের সেপ্টেম্বর। রাষ্ট্রদূত হামিদুল্লাহ নেদারল্যান্ডসের আগে শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার ছিলেন।

রিয়াজ হামিদুল্লাহ দিল্লি ও নিউইয়র্কে জাতিসংঘের স্থায়ী মিশনে বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি নেপালের কাঠমান্ডুতে সার্ক সচিবালয়ে বাংলাদেশের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। রিয়াজ দিল্লির বাংলাদেশ হাকমিশনে কাজ করেছেন। তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বহুপক্ষীয় অর্থনৈতিক বিষয়াদি, দক্ষিণ ও ইউরোপিয়ান অ্যাফেয়ার্স ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বিষয়ে কাজ করেছেন।

সব কিছু ঠিক থাকলে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির নেতৃত্বে ভারতীয় প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ-ভারত ফরেন অফিস কনসালটেশনের (এফওসি) পরবর্তী পর্বে যোগ দিতে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ঢাকা সফরে আসার কথা রয়েছে।

ঢাকায় হতে যাওয়া এফওসি প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টারই ইঙ্গিত বলে মনে করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে এফওসি হবে প্রথম পদক্ষেপ।

এদিকে, ঢাকা-দিল্লির বৈঠকের আগে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। সেই বিবৃতিতে হতাশ হয়েছে বাংলাদেশ।

পাল্টা বিবৃতিতে ঢাকা বলছে, ‘বাংলাদেশ সরকার অত্যন্ত হতাশ এবং গভীর মনোব্যথার সঙ্গে উল্লেখ করেছে যে, শ্রী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে নির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেপ্তার করার পর থেকে কিছু মহল শ্রী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেছে। বাংলাদেশ সরকার মনে করে যে, এ ধরনের ভিত্তিহীন বিবৃতি কেবল তথ্যের ভুল উপস্থাপনাই নয়, দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও বোঝাপড়ার চেতনারও বিপরীত।’

‘বিবৃতিটি সব ধর্মের মানুষের মধ্যে বিদ্যমান সম্প্রীতি এবং এ বিষয়ে সরকার ও জনগণের প্রতিশ্রুতি ও প্রচেষ্টার প্রতিফলন ঘটায় না।’ বলছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনে হাইকমিশনার হিসেবে এখনো দায়িত্ব পালন করছেন মোস্তাফিজুর রহমান। গত ১ অক্টোবর দিল্লির হাইকমিশনারসহ পাঁচ দূতকে বর্তমান দায়িত্ব ছেড়ে ‘অনতিবিলম্বে’ ঢাকায় ফেরার নির্দেশনা দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

১১তম ব্যাচের পেশাদার কূটনীতিক মোস্তাফিজুর রহমানের চাকরির মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর।

এনআই/এমজেইউ