ক্যানবেরায় পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের সভা মঙ্গলবার
প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতায় আগ্রহী অস্ট্রেলিয়া
বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতায় আগ্রহী অস্ট্রেলিয়া। সেই লক্ষ্যে দেশটি একটি প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্মারক সই করতে চায়। আর অর্থপাচারসহ আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধ মোকাবিলায় অস্ট্রেলিয়াকে সহযোগিতা করতে চায় বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) ক্যানবেরায় পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের সভায় বসছে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া। সভায় প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও অর্থপাচার বন্ধের মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে।
বিজ্ঞাপন
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২৬ নভেম্বর ক্যানবেরায় পঞ্চম পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের সভায় বসছে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া। বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্কের সামগ্রিক বিষয়ে আলোচনা হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষা, কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্লু-ইকোনমি, জ্বালানি সহযোগিতা, আইসিটি ও দুই দেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে। তবে এর বাইরে গুরত্বপূর্ণ বেশ কিছু ইস্যু আলোচনার জন্য এজেন্ডায় যুক্ত করেছে উভয়পক্ষ।
জানা গেছে, সভায় ঢাকার পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন অতিরিক্ত পররাষ্ট্রসচিব ড. মো. নজরুল ইসলাম। অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র এবং বাণিজ্য সংক্রান্ত দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক প্রথম সহকারী সচিব সারাস স্টোরি দেশটির পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে পাঁচ সদস্য এবং অস্ট্রেলিয়া প্রতিনিধিদলে ১৭ সদস্য থাকার কথা রয়েছে।
ধারণা করা যায়, বৈঠকে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থান, আইন-শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের পদ্ধতিগত সংস্কারসহ অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার তুলে ধরবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ শর্তে বলেন, সাধারণত এ ধরনের বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্কের সামগ্রিক বিষয়ে আলোচনা হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের প্রসঙ্গ থাকবে। উন্নয়ন সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উন্নয়নে অগ্রাধিকার দেবে। অস্ট্রেলিয়া হয়ত ভবিষ্যতে কীভাবে আমাদের সঙ্গে উন্নয়ন সহযোগী হতে পারে, সে বিষয়ে তাদের পরিকল্পনা বলবে। নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন প্রসঙ্গ আসবে। এক্ষেত্রে-প্রত্যাবর্তন সংক্রান্ত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি), দ্রুত অবৈধদের পরিচয় নিশ্চিত করা, ভিসা প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হবে। অস্ট্রেলিয়ায় বৈধ অভিবাসনে বাংলাদেশ কীভাবে সহযোগিতা পেতে পারে বা যুক্ত হতে পারে সেটি নিয়েও আমরা আলোচনা করব।
মন্ত্রণালয়ের এ কর্মকর্তা জানান, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে। এক্ষেত্রে আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধ মোকাবিলায় সহযোগিতা, সিভিল মেরিটাইম সিকিউরিটি এবং মেরিটাইম সেফটি বিষয়ে সহায়তা, প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়গুলো থাকবে বলে আশা করা যায়।
এছাড়া, আঞ্চলিক ইস্যুতে আলোচনা করবে উভয়পক্ষ। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গা সমস্যা ও মিয়ানমার পরিস্থিতি, ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশন (আইওরা) সহযোগিতা ও সংযুক্তির মতো বিষয় থাকতে পারে। আর বহুপাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের উত্তরণ এবং পরে অস্ট্রেলিয়ার সহযোগিতা চাইবে।
ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্র বলছে, নিরাপত্তা খাতে সহযোগিতার আগ্রহ রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার। বাংলাদেশকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নেওয়ার প্রস্তাব দিতে পারে দেশটি। জ্বালানি সংগ্রহের বিকল্প উৎস হিসেবে অস্ট্রেলিয়া থেকে জ্বালানি সহযোগিতা পেতে চাইবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক যোগাযোগ বাড়ানোর প্রসঙ্গ তুলতে পারে। কেননা, চীন নির্ভরশীলতা কমাতে ভারত মহাসাগর এবং অন্যান্য অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো বাড়াতে চায় অস্ট্রেলিয়া।
কূটনৈতিক সূত্র আরও বলছে, বৈঠকে অস্ট্রেলিয়ায় থাকা অবৈধ বাংলাদেশি ফেরানোর বিষয়ে জোর দেবে তারা। অন্যদিকে, বাংলাদেশের চাওয়া থাকবে বৈধ উপায়ে যেন বাংলাদেশি অভিবাসীরা অস্ট্রেলিয়ায় যেতে পারে।
গত অক্টোবরের শেষের দিকে অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টনি ব্রুক ঢাকা সফর করেন। সফরকালে তিনি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। তখন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছিলেন, অস্ট্রেলিয়ায় ৯৭ জন অবৈধ বাংলাদেশি আছে। আর যারা আছেন সবাই বৈধভাবে আছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, উন্নয়ন অংশীদারের পর্যায় থেকে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার সম্পর্ক এখন সামগ্রিক অংশীদারের দিকে যাচ্ছে। যেখানে বাণিজ্য রয়েছে, তেমনি রয়েছে নিরাপত্তা ও অন্যান্য কৌশলগত বিষয়। সভায় দ্বিপক্ষীয় সব বিষয় নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে।
এনআই/জেডএস