রাজধানীর ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি, সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করা হয়েছে। তবে পর্যাপ্ত বুলেটপ্রুফ হেলমেট-জ্যাকেটসহ অন্যান্য সাপোর্ট না থাকায় তারা পূর্ণ শক্তি দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে পারেননি।

সংঘর্ষ থামার পর সোমবার বিকেলে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ছালেহ উদ্দিন।

সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাত্রাবাড়ী মোড়ে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেখানে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। আমাদেরও একটা সীমাবদ্ধতা আছে। কারণ ৫ আগস্টের ঘটনায় পুলিশের অনেক থানায় বুলেটপ্রুফ হেলমেট-জ্যাকেট নেই, পর্যাপ্ত সাপোর্ট পুলিশের এই মুহূর্তে নেই। সীমিত সাপোর্ট দিয়ে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি যেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে।

ডিসি ছালেহ উদ্দিন বলেন, বর্তমানে সেনাবাহিনী ও র‍্যাবের সদস্যরা আমাদের সঙ্গে নিরাপত্তার জন্য আছেন। সবার সহযোগিতায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

আহত-নিহতের ঘটনায় প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, নিহতের কোনো সংবাদ আমরা এখনো পাইনি। তবে অনেকে আহত হয়েছেন। তাদেরকে শিক্ষক ও স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ছাত্ররাই দেশের ভবিষ্যৎ, আমরা কেউ চাই না কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হোক। এক কলেজের সঙ্গে আরেক কলেজের মারপিট হোক আমরা তা চাই না। সবার প্রতি আকুল আবেদন, আপনাদের সন্তানদের বাসায় রাখুন, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে। আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব।

এর আগে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টানা সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

কবি নজরুল ইসলাম সরকারি কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শরীফ হোসেন বলেন, তাদের কলেজের এবং সোহরাওয়ার্দী কলেজের অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন।

এদের মধ্যে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন সোহরাওয়ার্দী ও নজরুল কলেজের অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী।

তাদের মধ্যে পরিচয় পাওয়া কয়েকজন হলেন- নাইম (২০), সিয়াম (১৯), মোল্লা সোহাগ (১৮), রাজিম (১৭), শরিফুল (১৭), জাহিদ (২৫), মোস্তফা (২৩), রাতুল (২১), শফিকুল ইসলাম (২৬), মেহেদী হাসান (২৪), সজীব বেপারী (২৮), ফয়সাল (১৯), সাগর (২১), ইমন (২৪), সিয়াম (১৮)।

ন্যাশনাল মেডিকেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মাহমুদ বলেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ জন আহত হয়ে আমাদের কাছে এসেছে। এদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা গুরুতর।

এদিকে, ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. ফারুক জানান, বিকেল সোয়া ৪টা নাগাদ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ৩০ জনকে আহত অবস্থায় আনা হয়, যার মধ্যে দুই-তিনজন চালক ও পথচারী রয়েছেন।

আহতদের মধ্যে কিছু ছাত্রের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- সোহরাওয়ার্দী কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের রাজীব (১৯) ও দ্বিতীয় বর্ষের শাহেদুল (২০); কবি নজরুল সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের রানা (২০), মারুফ (১৯), রুমান (১৯), হাসিনুর (১৯), আরাফাত (১৯); একই কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের অনুপম দাস (২৩) ও দ্বিতীয় বর্ষের সুমন (২২) এবং ইম্পেরিয়াল কলেজ হাতিরঝিল শাখার উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের হুমায়ুন (২০)।

পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিৎ হাওলাদারের মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল রোববার ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হয়েছিল। পূর্বঘোষিত সেই কর্মসূচির মধ্যে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ও পাশের সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় মোল্লা কলেজসহ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। ওই সময় সোহরাওয়ার্দী কলেজ কেন্দ্রে অনার্স প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিচ্ছিলেন নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। গণ্ডগোলের মধ্যে নিরাপত্তার কারণে মাঝপথে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

ওই হামলা ও লুটপাটের প্রতিবাদে সোমবার ‘মেগা মানডে’ কর্মসূচির ডাক দেন সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এর অংশ হিসেবে সোমবার সকাল থেকে সোহরাওয়ার্দী কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে জড়ো হতে শুরু করেন। পরে তারা মিছিল নিয়ে কবি নজরুল কলেজের সামনে আসেন।

এ সময় নজরুল কলেজের অধ্যক্ষ মাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানালে দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকেন। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ডেমরা সড়ক সংলগ্ন মোল্লা কলেজে গিয়ে হামলা চালান। এ সময় মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান।

এমএসি/এমজে