ভাঙচুরের পর ন্যাশনাল মেডিকেল হাসপাতাল ছাড়লেন শিক্ষার্থীরা
চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাজধানীর ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভাঙচুর চালান ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা। সেখানে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। দুপুরে এসব ঘটনার পর বিকেলের দিকে তারা হাসপাতাল প্রাঙ্গণ ছেড়েছেন।
রোববার (২৪ নভেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে শিক্ষার্থীরা হাসপাতাল প্রাঙ্গণ ছেড়ে যান। তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বিকেল সাড়ে ৫টা) ন্যাশনাল মেডিকেলের সামনে অবস্থান নিয়েছেন শতাধিক পুলিশ ও আর্ম পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের অভিজিৎ হালদার (১৮) নামের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় ভুল চিকিৎসা ও অনিয়মের অভিযোগ এনে হাসপাতালের প্রধান ফটক আটকে ভাঙচুর শুরু করেন ওই কলেজের শিক্ষার্থীরা। এরপর এই আন্দোলনে এসে যোগ দেন আশেপাশের অন্তত ৩৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে একটি অংশ কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজেও ভাঙচুর চালায়। এই দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি, ন্যাশনাল মেডিকেলে ভাঙচুর করতে এসে তাদের দুটি কলেজে ভাঙচুর চালিয়েছে ডা. মাহবুবুর রহমান কলেজসহ তাদের সঙ্গে অংশ নেওয়া অন্য কলেজের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী।
আরও পড়ুন
হামলা প্রসঙ্গে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেলের শেষবর্ষের শিক্ষার্থী জাওয়াদ মালিক হিমেল বলেন, আমরা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের আবাসিক শিক্ষার্থী। আমরা তো এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। এখানে বাইরের দেশের শিক্ষার্থী আছে। উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা আবাসিক হোস্টেলে হামলা চালিয়েছে। বাইরের দেশের শিক্ষার্থীসহ আমাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীরা ভয়ে আছে। হাসপাতাল থেকে রোগী বের করে দিয়েছে। তাদের কিছু হলে দায়ভার কে নেবে। এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কীভাবে নির্দয়ভাবে আরেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। আমরা এর প্রতিবাদে মানববন্ধনসহ প্রয়োজনের চিকিৎসা সেবা দেওয়া থেকে বিরত থাকব।
এদিকে লালবাগ জোনের ডিসি জসিম উদ্দিন বলেন, গত ১৮ তারিখে মাহবুবুর রহমান কলেজের একজন মারা যান। তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যান বলে আমরা জানতে পারি। গত বুধবার কলেজের শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে এসেছিল। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু এরপরেও গত বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীরা আবার আসে। শিক্ষার্থীদের দাবি অবহেলাজনিত মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বার বার বলেছে আমরা শিক্ষার্থী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে তদন্ত করব। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চাপের মুখে রাখা হয়।
তিনি আরো বলেন, আজ ছাত্র প্রতিনিধি, মৃতের বাবার হাসপাতালে আসার কথা ছিল। আজ মিটিং ছিল। কিন্তু তারা আসেনি বলে আমরা জানতে পারি। এদিকে আজ সকালে ফের শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে এসেছে। যাত্রবাড়ী থেকে অনেক শিক্ষার্থী এসেছে। আজ সকাল থেকে আমরা তাদের বোঝাতে চেয়েছি। অবশেষে আমরা সংখ্যা বাড়িয়ে বিকেলে তাদের বোঝাতে সক্ষম হই, এরপর তারা চলে যায়।
অপরদিকে হামলার বিষয়ে সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কাকলী মুখোপাধ্যায় প্রশাসনের অসহযোগিতার অভিযোগ করে বলেন, এখন পর্যন্ত কেউ এগিয়ে আসেনি। একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানের বড় ক্ষতি হয়ে গেল। একটি পাবলিক পরীক্ষা চলমান ছিল। তারপরও কেন হামলার ঘটনা ঘটেছে সে ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না।
ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে তিনি বলেন, কলেজের কোনো অফিস এবং কোনো বিভাগের কক্ষই অক্ষত নেই। পুরো কলেজ এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। দুজন শিক্ষকের ব্যক্তিগত গাড়ি এবং কলেজের গাড়িটিও ভেঙে তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ পরে জানানো হবে বলেও জানান তিনি।
এর আগে, রাজধানীর ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের অভিজিৎ হালদার (১৮) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় ভুল চিকিৎসা ও অনিয়মের অভিযোগ হাসপাতালের প্রধান ফটক আটকে ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১টার দিকে রাজধানীর পুরান ঢাকায় অবস্থিত এ হাসপাতালের সামনে লাঠিসোঁটা হাতে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন।
টিআই/জেডএস