যানজট নিরসনে বিভিন্ন বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ট্রাফিকদেরও রাস্তায় নামানোর চিন্তা করছে সরকার। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, সড়কে ট্রাফিকের উন্নয়নের জন্য আমরা এখন ছাত্রদের কাজে লাগিয়েছি। ঠিক তেমনিভাবে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ, সেনাবাহিনী, এয়ারফোর্স, নৌবাহিনী, বিজিবি, আনসারের মধ্যে যারা ট্রাফিকে কাজ করেছেন তাদের নিয়ে একটি কমিউনিটি পুলিশিং করার চিন্তাভাবনা করা হয়েছে। এটা খুব তাড়াতাড়ি কার্যকর করা হবে।

রোববার (২৪ নভেম্বর) সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, আজকের সভায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সরকারী পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ খোদা বকশ চৌধুরী, নতুন আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনারকে স্বাগত জানানো হয়েছে। সভায় সনাতন জাগরণী জোটের আট দফা, বিশ্ব ইজতেমা, সড়কে অটোরিকশা বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা, বিজয় দিবস উদযাপন, দুস্কৃতিকারীদের গ্রেপ্তার, ভুয়া মামলা, হয়রানি, মাদক, সড়কের ট্রাফিকের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

কেন সাবেক ট্রাফিক সদস্যদের নামানো হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শহরে ২৫ শতাংশ রাস্তা থাকার কথা। কিন্তু আমাদের আছে সাড়ে সাত শতাংশ। সড়কে দিন দিন গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। এই রাস্তা এত গাড়ি নিতে পারছে না। আবার আজকে এই রাস্তা, পরেরদিন ওই রাস্তা ব্লক করে আন্দোলন করা হচ্ছে। যার ফলে যানজট আরো বাড়ছে। আর কমিউনিটি পুলিশিং আগেও কিন্তু কাজ করেছে। ওইগুলো আবার নতুন ফর্মে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি।

কবে থেকে এই কমিউনিটি ট্রাফিকিং শুরু হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা চাইলেও আজ শুরু করা যাবে না। কারণ নিয়োগ প্রক্রিয়া আছে। তবে দ্রুত কার্যক্রম শুরু হবে।

সড়কে অটোরিকশা বন্ধে কি সিদ্ধান্ত হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, অটোরিকশা বন্ধের বিষয়টি উচ্চ আদালতের একটি আদেশ। উচ্চ আদালতের আদেশকে আমরা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি। উচ্চ আদালত থেকে এই বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে নির্দেশনা আসার কথা। নির্দেশনা পেলে সেই আলোকে আমরা প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেব। আমরা আশা করছি খুব ভালো একটি নির্দেশনা আসবে। সেই নির্দেশনা মতো অটোরিকশা নিয়ে চলমান সমস্যার সমাধান হবে।

অটোরিকশা চালকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শুরু থেকে অটোরিকশা চালকদের আমরা বলছি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের জন্য। কিন্তু তারা ভাঙচুর করে তাদের জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। অটোরিকশা চালক ছাড়াও যাদের যে সমস্যা আছে সেই দাবি নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বসার পরামর্শ দেন তিনি। উদ্যান উন্মুক্ত আছে, মানুষের কোনো ভোগান্তি হবে না। আপনার সমস্যার জন্য আরেকজনকে সমস্যায় ফেলার কোন মানে হয় না।

সড়কে দোকান বসানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সড়ক এবং ফুটপাত দুটি বিষয়। সড়কে অবশ্যই কোনো দোকান বসবে না।

ভুয়া এবং মিথ্যা মামলা প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ভুয়া এবং মিথ্যা মামলা হচ্ছে এটি আমি অস্বীকার করব না। এই ভুয়া এবং মিথ্যা মামলা যেন না হয় সে বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। যারা মিথ্যা এবং ভুয়া মামলা করছেন তাদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। এ ধরনের মিথ্যা মামলায় যারা আসামি হয়েছেন তারা যেন কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন সেজন্য আমরা একটি কমিটি করে দিচ্ছি। কমিটির প্রপোজাল আমরা দিয়েছি এটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। কমিটিতে জেলায় জেলায় ডিসি, এসপি, লিগ্যাল এইডের একজন সদস্য থাকলে, পুলিশের পাশাপাশি তারাও নিরূপণ করবে কে আসলে দোষী। কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেটাও তারা দেখবে।

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আমরা মোটেও উদ্বিগ্ন নই পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে এসেছে। ধীরে ধীরে আরো উন্নতি হবে বলে আমরা আশাবাদী। আওয়ামী লীগ কিংবা যে কেউ কোনো ধরনের অরাজকতা করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এমএম/জেডএস